ভালো ঋণগ্রহীতাদের খেলাপি বানানোর ফাঁদ পেতেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভালো ঋণগ্রহীতাদের খেলাপি বানানোর ফাঁদ পেতেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।


আলোকিত বার্তা:ভালো ঋণগ্রহীতাদের খেলাপি বানানোর ফাঁদ পেতেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এটি প্রমাণও করেছে।কেননা,এ বিষয়ে যত সার্কুলার জারি করা হয়েছে তার সবই খেলাপিদের সুরক্ষার পক্ষে।অর্থাৎ যারা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করে না,অনেকে জালিয়াতি করে বিপুল অংকের ঋণের টাকা বিদেশে পাচারও করেছে তাদের নীতি-সহায়তার নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুবিধা দিয়েই যাচ্ছে।সর্বশেষ মে মাসের বহুল আলোচিত সার্কুলারের মাধ্যমে খেলাপিদের নজিরবিহীন সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।অথচ ভালো গ্রাহকদের জন্য কিছুই করেনি।উল্টো নানা অজুহাতে তাদের টুঁটি চেপে ধরে।ব্যাংকিং সেক্টরের এমন দুরবস্থার বিষয়ে সোমবার বেশ কয়েকজন প্রথিতযশা বিশ্লেষকের কণ্ঠে ছিল এমন সব তির্যক মন্তব্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড.সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার বলেন,বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত যেসব নীতিমালা জারি করেছে তার সবই খেলাপিদের পক্ষে।এতে ভালো গ্রাহকদের জন্য কিছুই নেই। অথচ উচিত ছিল ভালো গ্রাকদের ভালোভাবে প্রটেকশন দেয়া।একজন জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার সরকারের নীতি-নির্ধারকদের উদ্দেশে বলেন,আসলে ভালো গ্রাহকরা কী পেলের? হিসাব মিলিয়ে দেখুন। ঋণখেলাপির সুদের হার ৯ শতাংশ।ভালো গ্রাহকের সুদের হার ১২-১৪ শতাংশ। অথচ খেলাপিরা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পরিশোধে সুবিধা হিসেবে পাচ্ছেন আরও ১ বছরের গ্রেস পিরিয়ড।এছাড়া ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা।কিন্তু ভালো গ্রাহকদের জন্য এর ধারেকাছে কিছু নেই।এর ফলে বিষয়টি বোঝা একদম সহজ, এটি বোঝার জন্য কারও হিসাববিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই।এরফলে এখন ঋণখেলাপিদের সুবিধা দেখে ভালো গ্রাহকরাও খেলাপি হতে উদ্বুদ্ধ হবেন।তিনি বলেন,খেলাপিদের ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিলে ভালো গ্রাহকদের ঋণ দিতে হবে ৮ শতাংশে।এছাড়া ভালো গ্রাহকদের ছোটখাটো কোনো সমস্যা হলে সেটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার। তাহলে কিছুটা মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন,বাস্তবতা হল- ভালো গ্রাহকদের পাশে কেউ নেই। সব আয়োজন ঋণখেলাপিদের ঘিরে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংকিং খাত খেলাপিনির্ভর হয়ে যাবে।জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন,সরকারের ভুল নীতির কারণে খেলাপি ঋণ আরও বাড়তে পারে। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা।এর সঙ্গে ঋণ অবলোপন ৬০ হাজার কোটি টাকা ধরলে মোট খেলাপি ৩ লাখ কোটি টাকা হয়। এখন ঋণখেলাপিদের যেসব সুবিধা দেয়া হচ্ছে তাতে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে। কারণ,ভালো গ্রাহকরাও আর কিস্তি পরিশোধে আগ্রহ দেখাবে না।বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড.তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন,বিদ্যমান পরিস্থিতি ভালো গ্রাহকদের উল্টো খেলাপির দিকেই টেনে নিচ্ছে। এর দায় বাংলাদেশ ব্যাংক এড়াতে পারবে না।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড.জাহিদ হোসেন বলেন,ব্যাংকিং খাতে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের লালন করতে হলে অবশ্যই ভালো গ্রাহকদের মূল্যায়ন করা উচিত।বিশেষ করে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন, ঋণখেলাপির খাতায় নাম নেই- এসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।

তা না হলে কোনো ভালো ঋণগ্রহীতা আর ভালো থাকবেন না। কারণ তাদের মাথায় তখন এ চিন্তা কাজ করবে যে, ঋণখেলাপিরা যদি পদে পদে সুবিধা পান, সম্মানিত হন; তাহলে আমিও ঋণখেলাপি হলে দোষের কী। সরকারের পরামর্শে ১৬ মে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন ঋণ শোধ সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।তাতে ১ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ খেলাপি ঋণের মাত্র ২ শতাংশ জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিলের সুবিধা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদ হার ঠিক করে দেয়া হয় ৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত সার্কুলার চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দাখিল করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।এ বিষয়ে দীর্ঘ শুনানি শেষে রোববার আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারকে বৈধ বলে আদেশ দেন। একইসঙ্গে সার্কুলারের মেয়াদ ৯০ দিন বাড়ানোর কথা বলা হয়।তবে ভালো গ্রাহকদের প্রত্যাশা ছিল এর পাশাপাশি তাদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু প্যাকেজ সুবিধা ঘোষণা করা হবে। কিন্তু সেটি না করায় সংশ্লিষ্ট সবাই ক্ষুব্ধ। অনেকে ভবিষ্যতে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার চিন্তা করছেন।

Top