আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেও মাদকে সয়লাব বরিশাল নগরী। - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেও মাদকে সয়লাব বরিশাল নগরী।


রফিকুল ইসলাম:আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেও মাদকে সয়লাব বরিশাল নগরী।মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থেকেও একেবারেই নির্মূল করতে পারছে না প্রশাসন। কারণ চি‎হ্নিত হোয়াইট কালার ক্রিমিনালরাই মাদকের নিয়ন্ত্রণ করছে পেছনে থেকে। ফলে মাদকের গডফাদাররা থেকে যাচ্ছে অধরাই।সময় বিশেষে পুলিশ প্রশাসনের বিশেষ অভিযানে কিছু মাদক উদ্ধার হলেও বড় বড় চালানগুলো থেকে যাচ্ছে অধরা। তেমনি মাঠ পর্যায়ে মাদক সরবরাহের কাজে নিয়োজিত চুনোপুঁটিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে আসলেও ‘হোল সেলার’ অর্থাৎ রুই-কাতলারা থেকে যাচ্ছে বহাল তবিয়তেই। পাশাপাশি মিডিয়া পাড়ার একটি প্রভাবশালী মহলও মাদকের গডফাদারদের শেল্টার দিচ্ছে পেছন থেকে। যে কারণে বরিশাল নগরীতে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে বলে অভিমত পর্যবেক্ষক মহলের। বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকা গঠনের পর চলতি বছর মাদকের সবচেয়ে বড় চালান জব্দ করে প্রশাসন। বছরের শুরুতে ১০ হাজার পিস ইয়াবা ও বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে ২০ হাজার ও ২ হাজার ৫শ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ।

বিগত বছরগুলোতে এত পরিমাণ মাদক উদ্ধার হয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। সাম্প্রতিককালে বরিশাল কোতোয়ালি পুলিশের এক অভিযানে ২০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের পর মাদক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করা হলেও রাঘব বোয়ালদের লাগাম যেন টেনে ধরা যাচ্ছে না। বরং ক্রমশই মাদকের ভয়াবহতা বেড়ে চলছে। অবশ্য এখন প্রশ্ন উঠেছে, মাদকের এই বিস্তারের নেপথ্যে একটি বিশেষ মহলের পাশাপাশি রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সম্পৃক্ত থাকা নিয়ে।বিশেষ করে ওই প্রভাবশালী মহল ও রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি মিডিয়ার কিছু কথিত সাংবাদিকদের মাসোয়ারা দিয়ে মাদক বাণিজ্য চালানোর বিষয়টিও খোলাসা হয়ে গেছে। এছাড়া বরিশাল শহরে তৎসময়ে খেলাধূলায় সম্পৃক্ত অন্তত অভিজাত ৫ টিসহ ১০টির বেশি ক্লাব থেকেও মাদক সরবরাহ বা বিস্তারের এক ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। মাদকের এই অবাধ বিস্তারে যুব সমাজের একাংশ যেন পুরোপুরি আসক্তিতে ভুগছে।

সুশীল সমাজের অভিমত, মাদকের এই বিস্তার রোধে প্রশাসনের সদিচ্ছার পাশাপাশি সব শ্রেণির মানুষকে সচেতন হতে হবে। নতুবা আগামীতে এর প্রভাবে তরুণ প্রজন্ম ভয়াবহ আসক্তির দিকে ধাবিত হবে। যদিও ইতিমধ্যে বরিশাল পুলিশ মাদকের এই অবাধ ব্যবহার প্রতিরোধে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারা শহরের সকল বাসিন্দাদের তথ্য সংগ্রহে মাঠে নেমেছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) তথ্য সংগ্রহ কাজের উদ্বোধন করেন। অবশ্য উদ্বোধনকালে পুলিশ কমিশনার নিজেই মাদকের ভয়াবহতা রোধে সুশীল সমাজের পাশাপাশি সব শ্রেণির মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশেষ মহল ও রাজনৈতিক ব্যক্তি বিশেষ ও মিডিয়ার প্রভাশালীদের মদদে গড়ে ওঠা মাদক বাণিজ্যের প্রসার প্রশাসন কতটা টেনে ধরতে পারবে।

কারণ সাম্প্রতিককালে বরিশাল কোতোয়ালি পুলিশ শহরের গোরস্থান রোড এলাকার একটি বাসা থেকে আড়াই হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। এ সময় নারীসহ দুই মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তারও করা হয়। বাজারে কথা চালু রয়েছে- পুলিশ দুই বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করলেও ওই ইয়াবা চালানের নেপথ্যে যারা রয়েছে তাদেরকে সামনে নিয়ে আসতে পারেনি। তেমনি ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক দুই জনের আশ্রয় বা মদদদাতাদের গ্রেপ্তার বা তথ্য জানতে পারেনি পুলিশ। অনুরূপ চলতি বছরের প্রথম ভাগে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে চলাচলকারী একটি বিলাসবহুল যাত্রীবাহী লঞ্চ থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওই সময় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ভাটিখানার বাসিন্দা ‘ফেন্সি’ আজিমসহ দুই জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিলো। তখন অভিযোগ ওঠে এই ইয়াবার চালান শহরের নাজিরের পোল এলাকার একটি ক্লাবে সরবরাহের জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল।

তৎসময় পুলিশ জনৈক যুবলীগ নেতা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ক্লাবটি বন্ধ করে দিলেও সপ্তাহ না ঘুরতেই ফের চালু হয়ে যায়। ফলে বরিশালে যে ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ শেল্টারে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এসকল বিষয় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, সারা দেশসহ বরিশালেও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করেছে পুলিশ। মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হচ্ছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিদিনই ফেন্সিডিল-ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য উদ্ধার এবং এর সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।এমনকি বড় বড় মাদকের চালানসহ মাদক ব্যবসায়ীদের আটকও করা হয়েছে। পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিজিট করে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।তিনি আজকের বার্তাকে অবগত করে বলতে চেয়েছেন,প্রধানমন্ত্রী,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির নির্দেশে বরিশালে মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে যা অব্যাহত থাকবে।

Top