জামায়াত বিরোধী দলে কেন যাবে? জামায়াত তো সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে সরকার গঠন করবে, ইনশাআল্লাহ - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জামায়াত বিরোধী দলে কেন যাবে? জামায়াত তো সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে সরকার গঠন করবে, ইনশাআল্লাহ


মোহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম:আসনসংখ্যা যাই হোক না কেন আগামী জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসবে না জামায়াতে ইসলামী।জুলাই বিপ্লবের ধারকরা এভাবেই নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সরকারে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পর্দার আড়ালে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছে।প্রকাশ্যে এক দল আরেক দলের বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য দিলেও বিএনপি ও জামায়াতকে এক মোহনায় আনতে টানেলের শেষ প্রান্তে এখনো নিভু নিভু আলোর দেখা মিলছে।এসব কথা কিছু লোকের শুনতে ভালো লাগে। যারা ক্ষমতা কনফার্ম করে রাখছে তাদেরকে শোনালেই ভালো হয়। জামায়াত বিরোধী দলে কেন যাবে? জামায়াত তো সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে সরকার গঠন করবে, ইনশাআল্লাহ। আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়লাভের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, বর্ণচোরা আওয়ামী লীগারদের চিনতে মানুষ ভুল করবে না। তারা জনসমক্ষেই আসতে পারবে না।

সূত্রগুলো জানিয়েছে,সাংগঠনিক স্বার্থসহ বহুবিধ বাস্তব কারণে জামায়াত কোনোভাবে আগামী সংসদ নির্বাচনে অপজিশনে বসতে চায় না। আওয়ামী লীগের টানা পনেরো বছরে মামলা-হামলা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চরম ক্ষতি ফেস করে জামায়াত সরকারি দল সম্পর্কে তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। মূলত এ কারণে অন্তত আরও দুটি টার্ম জামায়াত কোনোভাবে বিরোধী দলে যাবে না। কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না-এটি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত। তবে তফশিল ঘোষণার পর কি হবে সেটি দেখার বিষয়। এছাড়া আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী হলেও জাতীয় পার্টির নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা নেই। আওয়ামী লীগ ও জাপা নির্বাচন করতে পারলে ভোটের বিদ্যমান হিসাব পালটে যাবে। আর যদি নির্বাচন না করে তাহলে হিসাব ভিন্ন হবে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের হামলা-মামলা ও নির্যাতন অব্যাহত থাকলেও জামায়াত তার সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে কখনো পিছু হটেনি। প্রকাশ্যে ও গোপনে তাদের সব ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত ছিল। বরং এই দুঃসময়ে তাদের কর্মী ও সমর্থক বেড়েছে অনেক। ফলে সারা দেশে জামায়াতের ভোট বেড়েছে। কিন্তু বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশি আসন পাওয়ার মতো অবস্থা এখনো দলটির তৈরি হয়নি। যদিও জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত সবকটিতে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। এর কিছুটা প্রভাব তো জাতীয় নির্বাচনে পড়বেই।

সূত্র বলছে, কম সংখ্যক আসন নিয়ে জামায়াত সরকারি দলের বিরুদ্ধে সংসদে ও রাজপথে অবস্থান নিতে চায় না। বরং বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে পারলে সংসদে তাদের আসন সংখ্যাও বাড়বে। এতে করে তারা সাংগঠনিকভাবে আরও ভালোভাবে এগিয়ে যেতে পারবে। এছাড়া চার দলীয় জোট সরকারের মতো কেবিনেটে থাকতে পারলে সারা দেশে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের নানাভাবে সমাজে ডমিনেট ও সক্রিয় করা সহজ হবে। এখন পর্যন্ত জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এসব আলোচনা বেশি করে গুরুত্ব পাচ্ছে।

সূত্রমতে, আগামী সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিরোধী শিবিরে বসতে পারে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে বেশকিছু আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানে পরাজিত দলটি। দলের পক্ষ থেকে তারা স্বীকার না করলেও অন্তত ৬০টি আসন নিয়ে প্রথম ধাপে পর্যালোচনা হচ্ছে। যেখানে আওয়ামী লীগের রিজার্ভ ভোট বেশি সে আসনগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এর মধ্যে বেশকিছু আসনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট আছে ১৮ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত। আওয়ামী লীগের নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে ভারতে ও দেশে অবস্থানরত একটি টিম কাজ করছে। এই টিমের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এমন কিছু আসন আছে যেখানে আওয়ামী লীগ নিশ্চিতভাবে পাশ করবে। এ রকম আসনের সংখ্যা ১০ থেকে ১৫টি। এছাড়া আরও অন্তত ৪০টি আসন আছে যেখানে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থী দিলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী কম ভোটের ব্যবধানে হলেও জিতে আসবে। এ হিসাবে আওয়ামী লীগ মনে করে, সর্বনিম্ন ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৬০টি আসন তারা পেতে পারে।

জামায়াতের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বিরোধী দলে থাকলে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে জনস্বার্থে কথা বলতেই হবে। ফলে জামায়াত যদি পৃথকভাবে নির্বাচন করে সংসদে সরকারি দলের বাইরে অবস্থান নেয়, সেক্ষেত্রে জটিল এক সমীকরণ তৈরি হবে। কারণ সংসদে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র এমপিরাও সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে। তখন দৃশ্যত জামায়াত ও আওয়ামী লীগকে বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। বাস্তবে সেটি হলে তা হবে এক আত্মঘাতী ‘ট্র্যাজিক পলিটিক্স’।ওই রকম পরিস্থিতির জন্য জামায়াত কোনোভাবে প্রস্তুত নয়। যদিও ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এক হয়ে রাজপথে তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে জামায়াত আন্দোলন করেছিল। মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কনসেপ্ট বা ধারণা জামায়াতই প্রথম সামনে নিয়ে আসে। আবার সেই জামায়াতকে যদি ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হয় তাহলে দলটির রাজনীতির ফলাফল কি দাঁড়াবে। যদিও রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। এখানে স্বার্থের জন্য পিতা পুত্রকেও ছাড় দেয় না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারা অনেকটা কৌশলী উত্তর দেন।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন,জাতীয় পার্টি ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করেছে। দেশের গণতন্ত্র ধ্বংসের সমান অংশীদার তারা। এদেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে আর নির্বাচনে দেখতে চায় না। তিনি বলেন, বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে আওয়ামী লীগ ৪০-৫০টি আসনে বিজয়ী হবে বলে যারা মনে করছে-তাদের সে আশা পূর্ণ হবে না। কারণ বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত সচেতন। যতই অপরিচিত হোক-ছদ্মবেশী আওয়ামী লীগারদের চিনতে তারা ভুল করবে না। জনগণ তাদেরকে প্রতিহত করবে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, এসব কথা কিছু লোকের শুনতে ভালো লাগে। যারা ক্ষমতা কনফার্ম করে রাখছে তাদেরকে শোনালেই ভালো হয়। জামায়াত বিরোধী দলে কেন যাবে? জামায়াত তো সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে সরকার গঠন করবে, ইনশাআল্লাহ। আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়লাভের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, বর্ণচোরা আওয়ামী লীগারদের চিনতে মানুষ ভুল করবে না। তারা জনসমক্ষেই আসতে পারবে না।

Top