ছাত্রসংসদের প্রতি জাতির অনেক প্রত্যাশা রয়েছে
মোহাম্মাদ মহাব্বাতুল্লাহ মাহাদ :ছাত্রসংসদের প্রতি জাতির অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, তোমাদের হাত ধরেই এই জাতির ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তোমাদেরকে জাতির স্বপ্নসারথি হতে হবে।ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে ‘দুর্বার নেতৃত্বে গড়ি স্বপ্নের ক্যাম্পাস’ প্রতিপাদ্যে দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দীর্ঘদিন পর ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বহু বছর ধরে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রসংসদ ছিল অপ্রাসঙ্গিক। শুধু ছাত্রসংসদ নয়, পুরো বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাই ছিল অচল। আমি সবাইকে অভিনন্দন জানাই।শুক্রবার রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এ সংবর্ধনার আয়োজন হয়। জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের পিতা মকবুল হোসেন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এবং উপস্থাপনা করেন সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘ডাকসু, জাকসু, চাকসু, রাকসুর মতো আগামী বাংলাদেশও তরুণদের হাত ধরেই গড়ে উঠবে। তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ আমাদের সবার কাম্য। তরুণরা কেমন বাংলাদেশ গড়বে, তার প্রমাণ দিচ্ছে এই ছাত্রসংসদগুলো।নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক এক্সেলেন্স, গবেষণা, জ্ঞানচর্চা ও সততার পরীক্ষায় শতভাগ উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করবে। গতানুগতিক কালচারের বাইরে এসে ভবিষ্যতের বৃহৎ নেতৃত্বের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। তোমাদের নেতৃত্বে যেমন জগদ্দল পাথর সরিয়ে দিয়েছ, তেমনি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজে সহযোগিতা করবে।সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রসংসদ নির্বাচন ছিল ছাত্রসমাজের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত। এটি ছিল জুলাই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রসংসদ শুধু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মঞ্চ হবে না, বরং এটি হবে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের training ground। এই নেতৃত্বই আগামী দিনে দেশের গতিপথ ও নীতি নির্ধারণ করবে। প্রতিনিধিরা কোনো ব্যক্তি বা দলের প্রতিনিধি নয়; বরং সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে সবার জন্য কাজ করবে। সব ক্যাম্পাসে ছাত্রবান্ধব কর্মসূচি থাকতে হবে। প্রত্যেক প্রতিনিধিকে সবার নেতা হয়ে উঠতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতার চর্চা করতে চাই না, বরং একে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার কেন্দ্রে পরিণত করতে চাই। জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও নতুন জ্ঞান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাই। ছাত্রশিবির মনে করে, ছাত্রবান্ধব কর্মসূচির পাশাপাশি জাতীয় সংকটের মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে হবে।’
বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এবং সাবেক চাকসু ভিপি এডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার। ছাত্রসংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য দেন ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম, জাকসু ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু, চাকসু ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি, রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, জাকসুর এজিএস আয়শা সিদ্দিকা মেঘলা এবং রাকসুর নির্বাহী সদস্য সুজন চন্দ্র।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ফ্যাসিবাদী আমলে গুম হওয়া ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাশেম আরমান, জুলাই শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর মা কোহিনূর আক্তার, জুলাই যোদ্ধা তাহমিদ হুজায়ফা, জাগপা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রহমান ফারুকী, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা এবং খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল আজিজ। উপস্থিত ছিলেন শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ, জুলাই আহত, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতিবৃন্দ, বন্ধুপ্রতীম ছাত্রসংগঠনের সভাপতিবৃন্দ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ইসলামিক স্কলার, কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিয়েট সদস্যবৃন্দ, চার বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ছাত্রসংসদ নির্বাচন আদায়ে ছাত্রশিবির ও শিক্ষার্থীদের ভূমিকা শীর্ষক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে সম্মাননা স্মারক, ফুল, ক্রেস্ট ও বই তুলে দেওয়া হয়।