আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরও স্থিতিশীল হবে
মু.এবি সিদ্দীক ভুঁইয়া:আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরও স্থিতিশীল হবে। সেনাবাহিনী তখন সেনানিবাসে ফিরে যেতে পারবে। দেশের জনগণের মতো সেনাবাহিনীও চায় সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সে রূপরেখার মধ্যে সময়সীমাও দেওয়া আছে। আমরা আশা করি নির্বাচন হলে দেশের স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে। আমরা সেদিকে তাকিয়ে আছি বলে জানান জেনারেল অফিসার কমান্ডিং, সদর দপ্তর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান।
বুধবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে অফিসার্স মেস ‘এ’-তে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে সেনাসদর। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ব্রিফিংয়ে সেনাসদরের এজি শাখার পিএস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুস্তাফিজুর রহমান ও সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মনজুর হোসেন কথা বলেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান বলেন, সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের যেটুকু রূপরেখা প্রণয়ন করেছে তার ওপর ভিত্তি করে সেনাবাহিনী যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। আমাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এখন সীমিত আকারে চলছে। এর মধ্যে নির্বাচনের সময় আমাদের কী করণীয় সেটাকে ফোকাসে রেখেই প্রশিক্ষণ করছি। প্রশিক্ষণের সঙ্গে একটি বিষয় সম্পর্কিত, তা হলো শান্তিকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। গত ১৫ মাস সেনাবাহিনী বাইরে আছে। নির্বাচন পর্যন্ত বা তার কিছুটা পরেও যদি বাইরে থাকতে হয়, তাহলে আরও কিছুদিন বাইরে থাকতে হবে। এতে করে আমাদের প্রশিক্ষণ বিঘ্নিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করেছে গত ১৫ মাস এটা সহজ পরিস্থিতি ছিল না। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্মুখীন হয়নি। তাই রেস্ট অ্যান্ড রিপিডেরও প্রয়োজন আছে। এজন্য আমরাও চাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, যেন আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসতে পারি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা প্রসঙ্গে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সেনাবাহিনী ও এর নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মিথ্যা, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এটি দুঃখজনক। আমি নিশ্চত করতে চাই, সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য সেনাপ্রধান ও উচ্চ নেতৃত্বের প্রতি শতভাগ অনুগত ও বিশ্বস্ত রয়েছে। আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় সেনাবাহিনী এখন আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ, এবং আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ এখন আরও বেশি। আমার অনুরোধ থাকবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে অপপ্রচার তা পরিহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। যে দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে সেনাবাহিনী সেটা যথাযথ ভাবে পালন করবে। চিরদিন করেছে সামনেও করবে। মিথ্যাকে বিতাড়িত করতে সত্যই যথেষ্ট।
সম্প্রতি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি একটি দেশের বিমানবাহিনীর সাম্প্রতিক মহড়া প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। সামরিক মহড়া এটা একটা দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা যে কোনো রাষ্ট্রই করতে পারে। এমন মহড়া স্বাভাবিক এবং এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমরাও প্রয়োজন হলে মহড়া চালাই। এটি সেভাবেই দেখা উচিত। আলোচনা শেষে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী সর্বদা চেইন অব কমান্ডের প্রতি অনুগত এবং দায়িত্ব পালনে পেশাদারত্বে অটল। আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমরা সব সময় নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
সেনাসদরের এজি শাখার পিএস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আর্মি অ্যাক্ট ১৯৫২ এবং আইসিটি অ্যাক্ট ১৯৭৩ এই দুটি বিশেষ আইন। আমরা কখনো দুটি বিশেষ আইনকে সামনাসামনি দাঁড় করাব না। আইসিটি অ্যাক্টের অধীনে ১৫ সেনা কর্মকর্তার মামলা পরিচালিত হচ্ছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা চাইব দেশের প্রচলিত আইনে সরকার একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচার কাজ সম্পন্ন করবে। যদি আর্মি অ্যাক্টের অধীনে বিচার করতে বলে, তবে আমরা সেটাও করতে পারব। সেভাবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, যারা গুম খুনের শিকার হয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি ও তাদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। একই সঙ্গে আমাদের যারা অফিসার আছেন, তাদের অধিকার সম্পর্কেও আমরা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। সরকার যেটা ভালো মনে করে সেভাবেই যেন বিচার এগিয়ে যায়।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম ও জুলাই আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার দায়ে বিচারের মুখোমুখি করতে ২২ অক্টোবর কর্মরত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) হাজির করা হয়। কর্মকর্তারা এখনো চাকরিতে আছেন কিনা ব্রিফিংয়ে এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটি আইনি প্রক্রিয়াগত বিষয়। আইসিটি বিধিমালার তৃতীয় সংশোধনী প্রকাশিত হয় ৬ অক্টোবর। ওই সংশোধনীতে সরকারি পদে দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতার বিষয়টি উঠে এসেছে। এটি আইনি সমস্যা নয়, বরং ব্যাখ্যার বিষয়। কারণ এটি নানা ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। আমরা এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং একটি স্পষ্ট নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। যদি ‘অযোগ্যতা’ শব্দের মানে ‘চাকরি থেকে বরখাস্ত’ হয়, তবে সেই বরখাস্ত কীভাবে কার্যকর হবে, তা সংশোধনীতে পরিষ্কার ভাবে বলা হয়নি। সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে ‘সরকারি পদ’র সংজ্ঞাটিও স্পষ্ট করা প্রয়োজন। আমরা আশা করি একটি সুষ্ঠু সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে পারব। একটা ভালো ফলাফল আমরা পাব।
সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মনজুর হোসেন বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে আমরা ৯০ হাজার থেকে এক লাখ সদস্য মাঠপর্যায়ে মোতায়েন করব। যেটা এযাবতকালের সর্বোচ্চ। আমাদের পরিকল্পনায় আছে জেলা পর্যায়ে, উপজেলা পর্যায়ে এমনকি আসন ভিত্তিক ক্যাম্প স্থাপন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করব। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হিসাবে সম্পূর্ণ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন সবকিছুর জন্য আমরা সদা প্রস্তুত থাকব।