হেভিওয়েট নেতারা বাদ পড়ায় অসন্তোষ - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হেভিওয়েট নেতারা বাদ পড়ায় অসন্তোষ


মোহাম্মাদ নাসির উদ্দিন: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে ২৩৭ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ক্ষুব্ধ ও হতাশা প্রকাশ করে তারা বলেন, তাদের মূল্যায়ন না করলে দুর্দিনে থাকা নেতাকর্মীদের কাছে খারাপ বার্তা যাবে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তিনি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামও মনোনয়ন পাননি। আরেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে মামলা ছিল ৩৫৭টি। জেল খেটেছেন অনেকবার। এই নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তিনি বরিশাল-৫ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন।এই তালিকায় বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা বাদ পড়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক অসন্তোষ। আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে এসব নেতা প্রত্যেকে অসংখ্য মামলা, বহুবার কারাবরণ ও নানা নির্যাতনের শিকার হন। দলের প্রতি নিবেদিত ও ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন না দেওয়া কিছুতেই মানতে পারছে না নেতাকর্মীরা।

সবকিছু ছাপিয়ে গেছে দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ দুজন নেতার মনোনয়ন না পাওয়ার ঘটনা। তারা হলেন- বিএনপির দুর্দিনের কান্ডারি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ও সবচেয়ে বেশি মামলার আসামি পরীক্ষিত নেতা দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। রিজভী ও সোহেলের মনোনয়ন না পাওয়ার ঘটনা অবাক করেছে বিএনপির অনেককেই। বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা আশা করেছিলেন, কুড়িগ্রাম-২, রাজশাহী-৫, বগুড়া কিংবা ঢাকার কোনো একটি আসনে রুহুল কবির রিজভী মনোনয়ন পাবেন। জিয়া পরিবারের প্রতি আনুগত্য, দলের প্রতি ত্যাগের মূল্যায়ন নিশ্চয়ই বিএনপির হাইকমান্ড করবে। বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা যুগান্তরকে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে দুই শতাধিক মামলা ছিল। বহুবার জেল খেটেছেন। যখনই দল দুর্দিনে পড়েছে, তখনই তিনি বড় ভূমিকা পালন করেছেন। ছিলেন আন্দোলন-সংগ্রামের সামনের সারিতে।

আরেক ত্যাগী ও মাঠের নেতা হিসাবে পরিচিত দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। তার বিরুদ্ধে ৪৫১টি মামলা ছিল। আওয়ামী লীগ আমলে শুক্র-শনিবার বাদে সপ্তাহের বাকি দিনগুলো তার কাটত আদালতের বারান্দায়। সোহেল ঢাকা-৮ আসন থেকে একবার বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ভোট করেন। এবার ঢাকা-৮ কিংবা ঢাকা-৯ আসন থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে ধরে নিয়েছিল তার সমর্থকরা। ঢাকা-৮ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। আর ঢাকা-৯ আসনটি ফাঁকা রয়েছে।

আরেক যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ। তিনি মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় দীর্ঘ বছর ধরে কাজ করছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে থাকা এই নেতার বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক মামলা ছিল। ৬ বার কারাবরণ করেছেন। তিনিও মনোনয়ন পাননি। স্থানীয় নেতারা জানান, অ্যাডভোকেট সালামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি-এ খবর জানার পর এ আসনে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। যাকে মানোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি আন্দোলন-সংগ্রামের সময় এলাকায় ছিলেন না। এমনকি দল থেকেও পদত্যাগ করেছিলেন।

কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু নাটোর-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। সাবেক এই ছাত্রনেতা বিএনপির দুর্দিনের কান্ডারিদের মধ্যে একজন। ওয়ান-ইলেভেন থেকে এই আসনে কাজ করছেন। যে কারণে এলাকায় অনেক জনপ্রিয় এই নেতা। অসংখ্য মামলা, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। তিনিও মনোনয়ন পাননি। এ নিয়েও এই নির্বাচনী আসনে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল। এই নেতা ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি নরসিংদী-৪ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তার বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক মামলা ছিল, জেল খেটেছেন বহুবার। তিনি তার এলাকায়ই সবচেয়ে বেশি সময় দিতেন। ত্যাগী এই নেতার মনোনয়ন না পাওয়া মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, জুয়েল মনোনয়ন না পেলে এ আসনে জয় নাও পেতে পারে বিএনপি। মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাসেরও রাজপথের আন্দোলনে অনেক ত্যাগ রয়েছে। তিনিও প্রথম দফার তালিকায় স্থান পাননি। ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। রাজপথের পরীক্ষিত এই নেতা বরিশাল-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

কুড়িগ্রাম-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বিএনপি নেতা ডা. মো. ইউনুস আলী। তিনি ড্যাবেরও নেতা। ক্লিন ইমেজ ও এলাকায় জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও মনোনয়ন পাননি। স্থানীয় নেতারা জানান, এই আসনে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে। আবার বিএনপি হাইকমান্ড বলেছেন, পরিবারের দুজনকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। কিন্তু কুড়িগ্রাম-১ আসনে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তার আপন ছোট বোনের স্বামী আবার মনোনয়ন পেয়েছেন কুড়িগ্রাম-২ আসন থেকে।

ঘোষিত প্রথম তালিকায় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়া হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে আরও রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান। এছাড়া রয়েছেন বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, আরিফুল হক চৌধুরী, হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সহ-অর্থনৈতিক-বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, সহ-পল্লী উন্নয়ন-বিষয়ক সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিমউদ্দিন আলম, দুলাল হোসেন, সাবেক সদস্য সৈয়দ সাদাত আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, যুবদলের সাবেক নেতা মামুন হাসান, ইসহাক সরকারসহ আরও বেশ কয়েকজন। যারা বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা।

মাদারীপুর-১ আসনের মনোনয়ন স্থগিত : এদিকে মঙ্গলবার মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে মনোনয়ন স্থগিত করেছে বিএনপি। এদিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় ২৩৭টি সংসদীয় আসনের মধ্যে মাদারীপুর-১ (শিবচর উপজেলা) আসনেও মনোনয়নপ্রাপ্ত কামাল জামান মোল্লার নাম ঘোষণা করা হয়। অনিবার্য কারণে ঘোষিত মাদারীপুর-১ আসন ও দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম স্থগিত রাখা হলো বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

Top