অবৈধ গুদামের বিরুদ্ধে নেই কোনো ব্যবস্থা
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া:রাজধানীজুড়ে আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক অবৈধ রাসায়নিকের গুদাম।বড় দুর্ঘটনা ঘটলে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা একটু নড়েচড়ে বসে। কিন্তু কিছুদিন পর ফের আগের অবস্থা। শুরু হয় প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা। স্থানীয়রা বলছেন, আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা এসব গুদামে নেই অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা। অনুমতিহীন গুদামগুলো বাড়াচ্ছে নিরাপত্তার ঝুঁকি। তবে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, রাসায়নিক মজুদের বৈধতা খতিয়ে দেখা হবে। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি ও অবহেলার কারণে অবৈধ রাসায়নিকের গুদাম আবাসিক এলাকা থেকে সরানো যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর পুরান ঢাকার বিভিন্ন অলিগলি, তেজগাঁও এবং মিরপুরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে রাসায়নিকের গুদাম। এগুলোতে ফসফেট, ক্লোরিন, ব্লিচিং পাউডারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক ও ধাহ্য পদার্থ মজুদ করা হয়। এসব থেকে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।সর্বশেষ মঙ্গলবার রূপনগরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় রাসায়নিকের গুদাম থেকে সৃষ্ট ভয়াবহ আগুনে ঝরে ১৬ জনের প্রাণ। যেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত সেই অবৈধ রাসায়নিকের গোডাউনসহ রূপনগরের আরও বেশ কয়েকটি সম্পর্কে গত বছর যুগান্তরে খবর প্রকাশিত হয়। কিন্তু টনক নড়েনি সংশ্লিষ্টদের।এদিকে বারবার দুর্ঘটনার পর আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিকের গোডাউন সরানোর কথা বলা হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। এর আগে ২০০৯ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ক্যামিকেল গোডাউনের আগুনে ১২৪ জনের প্রাণহানি এবং ২০১৯ সালে চুড়িহাট্টায় ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০০৯ সালে নিমতলী ট্র্যাজেডিতে প্রাণহানির পর দাবি উঠে আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিকের গোডাউন সরিয়ে নেওয়ার।
এরপর আবাসিক এলাকার অলিগলি থেকে সরিয়ে রাজধানীর কেরানীগঞ্জে ক্যামিকেল পল্লী নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৮ সালে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ সেভাবে এগোয়নি। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পর রাজধানীর ঘিঞ্জি এলাকা থেকে রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম সরিয়ে নিতে তোড়জোড় শুরু হয়। নেওয়া হয় স্থায়ী কেমিক্যাল পল্লী গঠনের উদ্যোগ। তবে এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
স্থপতি ও নগরবিদ ইকবাল হাবিব মঙ্গলবার রাতে বলেন,নগরীতে আইন-কানুন, নিয়ম বিধিবিধান থাকা সত্ত্বেও এর বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষীয় তদারকিতে অবজ্ঞা, অবহেলা ও ব্যাপক দুর্নীতি রয়েছে। তাছাড়া জবাবদিহি না থাকার কারণে এই কার্যক্রমের লাগাতার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এই ধাহ্য বস্তুর বিপণন, মজুদ ও ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রিত করার জন্য একাধিক প্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু দিনে দিনে অবৈধ রাসায়নিকের গোডাউন ছড়িয়ে পুরো শহরটাকে টাইমবোমা বানানো হয়েছে। তিনি বলেন, সর্বশেষ রূপনগরে যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যু ঘটেছে, এগুলোকে অবজ্ঞাজনিত হত্যাকাণ্ড বলা চলে।