সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে
মোহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম:জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে শুক্রবার রাজধানীতে পৃথক গণমিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামি দল।ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আগে ছোট-বড় সব দল যেন সমান সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এখন পর্যন্ত ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ)’ নিশ্চিত হয়নি। এজন্য তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদেরও দায়ী করেন। জুমার নামাজের পর রাজধানীতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে গণমিছিলের আগে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামী। পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচির আয়োজন করে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা।মিছিলপূর্ব সমাবেশে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন , কোনো বিশেষ দলের প্রতি দুর্বল হয়ে, কারও চাপে মাথানত করে প্রশাসনে কোনো দলের পছন্দের লোককে বেছে বেছে পদায়ন করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। ওসি, ডিসি, ইউএনও, আমলা, এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেকের ভূমিকা এখনো জাতির সামনে প্রশ্নবিদ্ধ। তবে উপদেষ্টাদের মধ্যে কাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ, সে নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এখন জনগণ পিআর পদ্ধতির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। এই পদ্ধতি সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করার অধিকার আছে। কিন্তু দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দলের ঘোষিত কর্মসূচি সম্পর্কে, এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার অধিকার কারও নেই।১৫ অক্টোবর জুলাই সনদে স্বাক্ষরের আগে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান গোলাম পরওয়ার। যেসব সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি গণভোটের মধ্যে পিআর প্রস্তাবও যুক্ত রাখার দাবি জানান তিনি।তিনি বলেন, জনগণ যদি পিআর পদ্ধতির পক্ষে মতামত দেয়, সব দলকে সেটা মানতে হবে। জনগণ বিপক্ষে মত দিলে জামায়াত পিআরের দাবি থেকে সরে আসবে।
জাতীয় ঐক্য তৈরির স্বার্থে জামায়াত ‘বেশকিছু’ সংস্কার প্রস্তাবে ছাড় দিয়েছে দাবি করে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্বপ্ন পূরণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থে যেন ঐক্যের প্রচেষ্টায় বিঘ্ন না ঘটে।’ ‘ফ্যাসিস্ট’ আওয়ামী লীগের মতো ১৪ দলীয় জোটভুক্ত সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিও জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিমের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন-কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন-কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ কামাল হোসেন প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। গণমিছিলটি গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড়, বিজয়নগর হয়ে কাকরাইল গিয়ে শেষ হয়।
একই দাবিতে বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে গণমিছিল বের করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে মিছিলটি বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম ও মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমাদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
জুলাই সনদের অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবিতে বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। সমাবেশে দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন, পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে হবে। এর বিকল্প কোনো চিন্তার সুযোগ বাংলাদেশের মাটিতে নেই। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনীর সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুরশিদ সিদ্দিকী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নিয়ামতুল্লহ আমীনের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী, মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিশাল গণমিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে পল্টন মোড়, প্রেস ক্লাব হয়ে বিজয়নগর গিয়ে শেষ হয়।একই দাবিতে জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে গণমিছিল বের করে খেলাফত মজলিস। এতে নেতৃত্ব দেন নায়েবে আমির আহমাদ আলী কাসেমী ও মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।