সাড়ে ৩ বছরে অগ্রগতি মাত্র ১০ শতাংশ
মোহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম:রেলের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিরাজ করছে শম্বুকগতি। এসব প্রকল্পে গড়ে সাড়ে ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও গড় ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তবে আর্থিক অগ্রগতি আরও কম অর্থাৎ ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ফলে মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, প্রকল্পই যদি সময়মতো বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির শঙ্কা থাকে। এক্ষেত্রে প্রকল্পগুলোয় বিরাজমান সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। এটি করা না গেলে একদিকে যেমন অর্থ ও সময় অপচয় হতে পারে, অন্যদিকে তেমনই সময়মতো সুফলবঞ্চিত হতে হয়।প্রকল্পগুলো হলো-বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০০টি ব্রডগেজ (বিজি) যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ, জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ এবং চট্টগ্রাম-দোহাজারী মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজ রেলপথে রূপান্তর প্রকল্প। ৭ সেপ্টেম্বর এ তিন প্রকল্পের পৃথক প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভায় সভাপতিত্ব করেন রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন। সেখানে ধীরগতির জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করে সমস্যা সমাধানের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ‘রেলওয়ের জন্য ২০০টি ব্রডগেজ (বিজি) যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ’ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭০৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এতে ঋণ দিচ্ছে ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি)। প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু গত আগস্টে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৩৪৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২০ শতাংশ। পিআইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো ৭ ধরনের ২০০টি যাত্রীবাহী ক্যারেজ (কোচ) সংগ্রহ করা। ইতোমধ্যে ক্যারেজের লে-আউট ও ডিটেইল ড্রয়িং অনুমোদন করা হয়েছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ২৫ শতাংশ অগ্রিম হিসাবে ২৭২ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ডিসেম্বরে কোচগুলোর সরবরাহ শুরু হবে। কিন্তু প্রকল্পের ডিপিপিতে ৪টি অ্যাম্বুলেন্স কার সংগ্রহ এবং এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইন্ডিয়ান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সে অনুযায়ী চুক্তি হয়েছে। এখন প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির সভায় এসব কোচ পরিচালনায় আনুষঙ্গিক সাপোর্ট স্টাফ না থাকায় এগুলোর পরিবর্তে শোভন চেয়ার কোচ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে জানালে নির্দিষ্ট সময়ে পরে বলায় তারা অপারগতা প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে কিছুটা জটিলতা আছে।
এছাড়া জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ২৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৫ হাজার ৪৯৩ কোটি ৮৫ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৮ হাজার ৭৫৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ বছর পেরিয়ে গত আগস্ট পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৯৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। পিআইসি সভায় প্রকল্পটির পরিচালক জানান, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সঙ্গে ঋণ চুক্তি করতে দেরি হয়েছে। ২৭ জুন সংস্থাটির সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়। জাইকার পক্ষ থেকে প্রকল্পটিতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হালনাগাদ প্রিপারেটরি সার্ভে টিম নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া ঋণচুক্তির আওতায় পৃথক একটি টিএপিপির (কারিগরি প্রকল্প প্রস্তাব) আওতায় ৩ জুলাই ডিটেইল ডিজাইন কাজের পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং কাজও শুরু হয়েছে। এই ডিটেইল ডিজাইন শেষ হলে তারপরই প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন করে ব্যয় পুনর্নির্ধারণ করা হবে। এসব কারণে প্রকল্পের মেয়াদ আরও ২ বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ‘চট্টগ্রাম-দোহাজারী মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজ রেলপথে রূপান্তর’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৭৯৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু প্রায় ২ বছর পেরিয়ে গেলেও গত আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় খরচ হয়েছে মাত্র ৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে শূন্য। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। পিআইসি সভায় জানানো হয়, প্রকল্পটিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়ন করবে বলে নিশ্চয়তা দিয়েছে। ঋণচুক্তির বিষয়ে ২৪ আগস্ট এডিবির সঙ্গে ইআরডি (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) লোন নেগোশিয়েশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।