রাজস্ব খাতের নেতৃত্বে থাকবেন অভিজ্ঞরা
মু.এবি সিদ্দীক ভুঁইয়া:বহুল আলোচিত রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশে মোট ১১টি সংশোধনী আনা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-রাজস্বনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে রাজস্বসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের প্রধান করা হবে। এছাড়াও মাঠপর্যায়ে দপ্তর এবং নবসৃষ্ট রাজস্বনীতি বিভাগের জনবল কাঠামো নিয়োগ ও পদায়নের বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের সংশোধনীর বিষয়ে কথা বলেন।
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এনবিআরের দুটি নতুন ইউনিটের প্রধান বাছাই করা হবে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। প্রয়োজন হলে যে কোনো ক্যাডার থেকেই নিয়োগ দেওয়া হবে। এটি উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারির পর এর কয়েকটি ধারা নিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বন্দর ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে ২৯ জুন উপদেষ্টা পরিষদ একটি কমিটি গঠন করে। এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, এনবিআর সদস্য, বিসিএস ট্যাক্সেশন ও কাস্টমস ক্যাডার প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি এবং সংস্কারসংক্রান্ত পরামর্শ কমিটির সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত কমিটি এনবিআরের সদস্য, বিসিএস ট্যাক্সেশন, এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট ও শুল্ক ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন, এনবিআর সংস্কারসংক্রান্ত পরামর্শ কমিটির সদস্য এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং মাঠপর্যায়ে কয়েকটি আয়কর কাস্টমস ও ভ্যাট অফিস পরিদর্শন করেন। মতবিনিময় শেষে অধ্যাদেশের কয়েকটি ধারা সংশোধন ও সংযোজনের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি সুপারিশ করে। প্রাপ্ত সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার নির্দেশের আলোকে অধ্যাদেশ সংশোধনীর চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করা হয়।অধ্যাদেশ জারির পর তা সংশোধনের দাবিতে মে ও জুনে আন্দোলনে নামেন আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ একটি কমিটি গঠন করে।
সংশোধনীতে যা আছে : রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে নেতৃত্বে কোন ক্যাডার থাকবে, কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মরতদের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং কী হবে-তা নিয়ে মূলত আন্দোলনের সূত্রপাত। জারিকৃত অধ্যাদেশের ধারা-৪(৩) বলা হয়েছিল, সরকার উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে রাজস্বনীতি বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ করবে। বৃহস্পতিবারের সংশোধনীতে বলা হয়েছে, সরকার সামষ্টিক অর্থনীতি, বাণিজ্যনীতি, পরিকল্পনা, রাজস্বনীতি বা রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোন সরকারি কর্মকর্তাকে রাজস্বনীতি বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ প্রদান করবে। একই ভাবে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের শীর্ষ নির্বাহী নিয়োগের ধারাটিও সংশোধন করা হয়েছে।
জারিকৃত অধ্যাদেশের ধারা-৭(৩) বলা হয়েছিল, সরকার রাজস্ব আহরণসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতা আছে-এমন যোগ্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করবে। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, সরকার রাজস্ব আহরণসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতা আছে-এমন যোগ্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ প্রদান করবে।
এছাড়া ধারা-৭(৫) এ বলা হয়েছিল, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক অনুবিভাগের বিভিন্ন পদ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডার এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক অনুবিভাগের বিভিন্ন পদ রাজস্ব আহরণ ও জনপ্রশাসনসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পূরণযোগ্য হবে। এই ধারায় সংশোধন এনে বলা হয়েছে, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক অনুবিভাগের বিভিন্ন পদ রাজস্ব আহরণ ও জনপ্রশাসনসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পূরণযোগ্য হবে।
ধারা-৭(৬) এ বলা হয়েছিল, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর্তৃক তফশিলে বর্ণিত আইনগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নসংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে নিয়োজিত পদগুলো বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (শুদ্ধ ও আবগারি) ক্যাডারে কর্মরত কর্মকর্তা এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের থেকে পূরণযোগ্য হবে। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর্তৃক তফশিলে বর্ণিত আইনগুলো বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট মাঠপর্যায়ের পদগুলো রাজস্ব আহরণসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের থেকে পূরণযোগ্য হবে।
ধারা-৯ এ বলা হয়েছিল, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিদ্যমান জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে ন্যস্ত হবে এবং ন্যস্ত করা জনবল থেকে প্রয়োজনীয় জনবল রাজস্ব নীতি বিভাগে পদায়ন করা যাবে। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিদ্যমান জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে ন্যস্ত হবে এবং ন্যস্ত করা জনবল থেকে প্রয়োজনীয় জনবল বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে রাজস্ব নীতি বিভাগে পদায়ন করা যাবে।