ওষুধ কোম্পানির দালাল কি ? ডাক্তাররা - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওষুধ কোম্পানির দালাল কি ? ডাক্তাররা


মোহাম্মাদ মুরাদ হোসেন: ডাক্তাররা (চিকিৎসক) কি ওষুধ কোম্পানির দালাল? ওষুধ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের প্রতি এমন প্রশ্ন করেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের জন্য নির্দিষ্ট সময় দিয়ে থাকেন?শনিবার রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএইচসিডিওএ) নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক ও বার্ষিক সাধারণ সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, অনেক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে একজন চিকিৎক ১২-১৫ হাজার টাকায় কাজ করেন। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বেসরকারি পর্যায়ে কোনো বেতন কাঠামো নেই। এখানে বৈষম্য দূর করতে একটি বেতন বোর্ড গঠন করা হবে। অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাকে বছরে অন্তত পাঁচ-ছয় বার হাসপাতালে যেতে হয়। কখনো বিদেশে চিকিৎসা নেইনি, আমার সে সামর্থ্য নেই। দেশে চিকিৎসা নিয়েই ভালো সেবা পেয়েছি কারণ মানুষ আমাকে চেনে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কি একই সেবা পাচ্ছেন? রোগীর কথা শোনার বদলে ডাক্তাররা অনেক সময় ১৪ থেকে ১৫টি টেস্ট ধরিয়ে দেন, নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ কিনতে বলেন। এসব বন্ধ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, দেশের বড় বড় ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির মধ্যস্বত্বভোগী? কোন জায়গায় নামিয়েছেন নিজেদের? এছাড়া ডাক্তাররা অভিযোগ করেন টেস্টের (রোগ শনাক্তকরণ রিপোর্ট) রেজাল্ট ভুল। অথচ দেশে অনেক জায়গায় ভালো টেস্ট হয়।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সব থেকে বেদনাদায়ক হচ্ছে বেশিরভাগ হাসপাতালের নার্স ও কর্মচারীদের আচরণ ও মন খারাপ থাকে। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে থাকেন, সেবা দিতে চান না। কারণ তারা ১২ হাজার টাকা বেতন পান। আপনারা (হাসপাতাল মালিক) কি কম টাকা লাভ করেন। অনেক হাসপাতালের মালিক আছেন যাদের আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। অনেকে কোটি টাকার বাগানবাড়িতে থাকতে পারেন অথচ নার্সদের ভালো বেতন দিতে পারেন না। আপনারা লাভ করেন কিন্তু সেটা ন্যায্যভাবে করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে মানুষ ভারত, ব্যাংকক যেতে চায় না। আপনাদের কাছে সেবা পেতে চায়। কারণ আপনারা করোনাকালীন (কোভিড-১৯ মহামারি) সেটা প্রমাণ করেছেন, আপনাদের সক্ষমতা আছে। আপনারা যদি নার্সসহ অন্যান্য কর্মচারীর বেতন কিছুটা বাড়ান তাহলে আপনাদের ১০ কোটি টাকা লাভ কম হবে। যদি ১০০ কোটি টাকা লাভ করেন সেখান থেকে ১০ শতাংশ কম লাভ হবে। এর ফলে তারা যে সেবা দেবে সেটা কভার করে দেবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, অন্যায় মুনাফা কাম্য নয়, স্বাস্থ্য খাতে এটি বন্ধ করা হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায়সংগত মুনাফা নিশ্চিতে নীতিমালা করা হবে।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক বৈষম্যের পরেই সবচেয়ে বড় হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতের বৈষম্য। এজন্য স্বাস্থ্য খাত পুনর্গঠন কর্মকাণ্ডে এটিকে আমরা জাতীয় স্বাস্থ্য খাত বলছি, সরকারি না। সরকারি-বেসরকারিসহ লাভজনক-অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সবাই মিলে ১৮ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য একটি রূপান্তর প্রক্রিয়া চলমান। এই প্রক্রিয়ায় যার যার অবস্থান থেকে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, মুনাফার জন্য স্বাস্থ্য খাত, অ-মুনাফার জন্য স্বাস্থ্য খাত এবং সেবার জন্য স্বাস্থ্য খাত এই তিন খাতের মধ্যে একটি যথাযথ সমন্বয় বাংলাদেশকে একটি জাতীয় স্বাস্থ্য খাতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। দেশের বিশেষজ্ঞের মত নিয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে একটি মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া, এই রূপান্তরই হচ্ছে আমাদের অঙ্গীকার।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১০-১২ হাজার মানুষ শয্যা ছাড়া সেবা নিচ্ছেন। এই সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত মানুষের ক্ষোভ প্রশমন সম্ভব নয়। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে একই মানে নিয়ে আসার উদ্যোগ চলমান উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে হামলা ও চিকিৎসক নিগ্রহের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব নির্যাতনই অন্যায়। তবে নারী নির্যাতন নিশ্চয় বড় অন্যায়। একইভাবে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় বড় ধরনের শাস্তির বিধান রাখতে হবে।

বিপিএইচসিডিওএর সভাপতি ডা. মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন ভূঁইয়া ডাম্বেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. এএম শামীমসহ নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্য ও সাধারণ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Top