গ্রেফতারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারকে জানাতে হবে - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গ্রেফতারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারকে জানাতে হবে


মোহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম:কাউকে গ্রেফতার করে থানায় নেওয়ার সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার মধ্যে ওই ব্যক্তির পরিবার, বন্ধু বা আইনজীবীকে জানাতে হবে।নেমপ্লেট ও আইডি কার্ড থাকতে হবে। আর যে ব্যক্তি গ্রেফতার হচ্ছেন, তিনি চাহিবামাত্র তাকে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। এটি বাধ্যতামূলক।কোনো অবস্থায় সময় ১২ ঘণ্টার বেশি নেওয়া যাবে না। যে পুলিশ সদস্য গ্রেফতার করতে যাবেন, তার যথাযথ পরিচিতি থাকতে হবে। এছাড়া ৫৪ ধারায় গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটনের প্রমাণ এবং লিখিত ব্যাখ্যা থাকতে হবে। এসব বিধান রেখে ফৌজদারি কার্যবিধি (দ্বিতীয় সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বিষয়ে সংবাদিকদের অবহিত করেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশ সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করতে হয়। অন্যদিকে কাউকে গ্রেফতার করার সঙ্গে সঙ্গে পরিবার ও স্বজনদের জানাতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে।ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের জানানোর সময় আদালতের রায় এবং বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শের কথা উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন,গ্রেফতার ব্যক্তিকে যখন থানায় নিয়ে আসা হবে, তখন যত দ্রুত সম্ভব ওই ব্যক্তির পরিবার, বন্ধু বা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানাতে হবে কী কারণে, কোন মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে এবং গ্রেফতার ব্যক্তি এখানে আছেন। এটি করতে কোনো অবস্থায়ই ১২ ঘণ্টার বেশি সময় নেওয়া যাবে না। আর গ্রেফতার ব্যক্তির শরীরে যদি কোনো আঘাতের চিহ্ন থাকে, তিনি যদি বলেন অসুস্থ বোধ করছেন, সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা সুবিধা দিতে হবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সংশোধনী অনুযায়ী প্রতিটি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে বিস্তারিত লিখিত তথ্য থাকতে হবে। কাকে, কেন, কী অভিযোগে, কোন আইনে, পরিবারের কার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, কে গ্রেফতার করেছেন-এসব বিস্তারিত লিখিত থাকতে হবে। যে সংস্থাই গ্রেফতার করুক, তাদের সংশ্লিষ্ট অফিসে সব তথ্য থাকতে হবে। এছাড়া নিয়মিতভাবে পুলিশ সদর দপ্তর, প্রতিটি পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং থানায় গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা থাকবে।’

৫৪ ধারায় গ্রেফতারে অপরাধের প্রমাণ ও ব্যাখ্যা থাকতে হবে : এছাড়া ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেফতারের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘যদি সন্দেহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে যিনি গ্রেফতার করবেন, তাকে নিশ্চিত হতে হবে যে তার সামনে অপরাধ ঘটেছে এবং বিশ্বাস করার কারণ আছে যে তিনিই (সন্দেহভাজন) অপরাধটি করেছেন। ৫৪ ধারায় কেন গ্রেফতার করা হলো, তা লিখিতভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। এখানে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে, কেন তার (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য) মনে হলো এই লোক অপরাধ করেছেন। এটি আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে। আর আমলযোগ্য নয়-এমন অপরাধের ক্ষেত্রেও এটা করতে হবে। একই সঙ্গে তাকে সন্তুষ্ট হতে হবে যে, গ্রেফতার না করলে লোকটি পালিয়ে যেতে পারেন। এ দুটি শর্ত পূরণ হলে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা যাবে।’

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি, এ আইন যদি সঠিকভাবে প্রতিপালন করা যায়, তাহলে ইচ্ছামতো মানুষকে গ্রেফতার করে হয়রানি, গ্রেফতার করে অস্বীকার, মানুষকে গুম করা-এগুলো বন্ধের ক্ষেত্রে এটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।

Top