আমরা গোপালগঞ্জকে আওয়ামী সন্ত্রাসমুক্ত করতে চাই - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমরা গোপালগঞ্জকে আওয়ামী সন্ত্রাসমুক্ত করতে চাই


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,আলোকিত বার্তা :জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা গোপালগঞ্জকে আওয়ামী সন্ত্রাসমুক্ত করতে চাই। আমরা আবার সেখানে যাব। যত বাধা আর হামলা হোক, গোপালগঞ্জের মানুষকে সন্ত্রাসমুক্ত করে দিয়ে আসব। আমাদের কেউ রুখতে পারবে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুর শহরের জনতা ব্যাংকের মোড়ে জেলা এনসিপি আয়োজিত পথসভায় তিনি এ কথা বলেন।নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আইনিভাবে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হোক। আমরা গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষের পাশে আছি। একজন নিরীহ মানুষও যেন হয়রানির শিকার না হন। দেশের ৬৪ জেলায় পদযাত্রা করে ঘরে ফিরব। আমাদের এ পদযাত্রা চলবে, কোনো অবস্থায়ই থামবে না। অধিকার আদায় করে তবেই ঘরে ফিরব।তিনি বলেন,আপনারা রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করতে চান। গতকাল (বুধবার) একটা রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের ভার্সন এদেশের মানুষ দেখেছে। গোপালগঞ্জকে ডেভিল ও সন্ত্রাসীরা তাদের আশ্রয়কেন্দ্র বানিয়েছে। এখনো সময় দিচ্ছি ওইসব সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হোক। না হলে আমরা গোপালগঞ্জে মার্চ করব। এবার কিন্তু আমরা ফিরে আসব না। গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষকে চিরতরে মুজিববাদ থেকে মুক্ত করে ছাড়ব।তিনি বলেন, ‘আমাদের জুলাই পদযাত্রা থেমে থাকবে না। সারা দেশে পদযাত্রা শেষ করে ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে।’

পথসভায় অন্যদের মধ্যে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, শ্রমিক উইংয়ের সমন্বয়ক মাজহারুল ইসলাম, জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম, ফরিদপুরের প্রধান সমন্বয়ক সৈয়দা নিলীমা দোলা, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তৌহিদ আহমেদ আশিক প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভা সঞ্চালনা করেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম।এর আগে সকালে এনসিপির নেতারা খুলনা থেকে রওয়ানা হয়ে দুপুর ২টার দিকে ফরিদপুর শহরে সার্কিট হাউজে পৌঁছান। এরপর সেখান থেকে তাদের নেতৃত্বে পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জনতা ব্যাংকের মোড়ে পৌঁছায়। এরপর সেখানে পথসভা হয়।

রাজবাড়ীতে পথসভা : রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরে পভসভা শেষে এনসিপি নেতারা রাজবাড়ী এসে পৌঁছান। এরপর তাদের নেতৃত্বে শহরে পদযাত্রা হয়। পদযাত্রা শেষে রেলগেট শহীদ মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে পথসভায় হয়। সেখানে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভেবেছিল গোপালগঞ্জে পদযাত্রা শেষ করে আমরা আর রাজনীতি করব না। কিন্তু এটা যদি তারা মনে করে থাকে, তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করবে।’

পথসভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারাসহ রাজবাড়ী জেলা এনসিপি নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে পদযাত্রা শনি ও রোববার : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এনসিপি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ও চট্টগ্রাম অঞ্চল তত্ত্বাবধায়ক জোবাইরুল হাসান আরিফ বলেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা মিলিয়ে দুই দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে। শনিবার কক্সবাজারে পদযাত্রার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে। ওইদিন কক্সবাজারে কর্মসূচি শেষ করে বিকালে বান্দরবান যাবেন এনসিপি নেতাকর্মীরা। বান্দরবানের কর্মসূচি শেষ করে শনিবার রাতেই চট্টগ্রামে আসবেন তারা। রোববার সকালে রাঙামাটির উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন। দুপুরের মধ্যে সেখানে কর্মসূচি শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

গোপালগঞ্জে হামলা পূর্বপরিকল্পিত, সরকারকে দায় নিতে হবে-ফেসবুকে নাহিদের পোস্ট : গোপালগঞ্জে এনসিপির ওপর হামলা এবং হত্যার দায়ভার সরকার ও প্রশাসনকে নিতে হবে। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি করছি। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে হবে। শুধু গোপালগঞ্জ নয়, সারা দেশে এ গ্রেফতার অভিযান চালাতে হবে। বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক পোস্টে এসব কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এতে তিনি আরও বলেন, প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে পরিস্থিতি এতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারত না।

নাহিদ লেখেন, গোপালগঞ্জ ও পুরো বাংলাদেশকে আমরা মুজিববাদী সন্ত্রাস ও ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করব। আওয়ামী লীগ যুগের পর যুগ গোপালগঞ্জের মানুষের জীবনকে বিপন্ন করেছে, মুক্তিযুদ্ধকে কলুষিত করেছে এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে বেইনসাফি করেছে। আমরা বলেছি, আমরা এ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাব। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধের আহ্বান নিয়ে যাইনি। আমাদের পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। মুজিববাদী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র হামলা চালায় আমাদের ওপর। যে রকমটা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেও হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সব সময় একটা গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়।

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর অনেকে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ আনতে চেয়েছিল। তাদের মনে রাখা উচিত আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয় আর এটা একটা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। ৫ আগস্টের পর বহুবার বলেছি, আইনি ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় জুলাই গণহত্যার বিচার করতে হবে। কিন্তু ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকদের ব্যাপকভাবে গ্রেফতার করা হয়নি। হলেও কোর্টে জামিন নিচ্ছে, থানা থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।

‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ঘাপটি মেরে আছে-এমন মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, তাদের টাকা দিয়ে কিনে ফেলা যায়। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পুরো বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার নেতাকর্মীরা গতকাল (বুধবার) গোপালগঞ্জে ছিল।

নাহিদ বলেন, কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে আমরা সমর্থন করি না, প্রত্যাশা করি না। সন্ত্রাসীদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা যদি সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিত, তাহলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। তিনি বলেন, আমরা কমিট করেছিলাম আমরা গোপালগঞ্জে যাব। আমরা গিয়েছি এবং শহীদের রক্তের শপথ নিয়ে ঘোষণা করছি যে মুজিববাদকে গোপালগঞ্জ ও বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়াতে দেব না। আমরা আবারও গোপালগঞ্জ যাব। জীবিত থাকলে গোপালগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায় প্রতিটি গ্রামে কর্মসূচি করব। প্রতিটি ঘরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পতাকা উড়বে। গোপালগঞ্জ মুজিববাদীদের হবে না, বাংলাদেশপন্থিদের হবে।

Top