যিলকদ একটি সম্মানিত মহান মাস - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যিলকদ একটি সম্মানিত মহান মাস


আলোকিত বার্তা:আল্লাহ তাআলা বলেন : প্রকৃতপক্ষে যেদিন আল্লাহ আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন সেই দিন থেকেই আল্লাহর কাছে আল্লাহর কিতাবে (অর্থাৎ লাওহে মাহ্ফুজে) মাসের সংখ্যা বারটি। এটাই সহজ-সরল দ্বীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহের মধ্যে নিজেদের প্রতি জুলুম কর না এবং তোমরা সকলে মিলে মুশরিকদের সাথে লড়াই কর, যেমন তারা সকলে মিলে তোমাদের সাথে লড়াই করে। একীন রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের সঙ্গে আছেন। (সূরা তাওবা : ৩৬)।

আয়াতে বলা হয়েছে, পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই বছরের মাস হল বারটি। এর মধ্য থেকে চারটি মাস সম্মানিত। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, এই সম্মানিত চার মাসের প্রথমটি হল যিলকদ। বাকি তিনটি হল, যিলহজ্ব, মুহাররম ও রজব। হযরত আবু বাকরা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন : যমানা ফিরে এসেছে তার আপন অবস্থায়, যেমন ছিল ওই দিন, যেদিন আল্লাহ তাআলা আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। বার মাসে বছর। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক- যিলকদ, যিলহজ্ব ও মুহাররম। আর চতুর্থটি হল রজব, যা জুমাদা ও শাবানের মাঝখানে। (সহীহ বুখারী : ৩১৯৭)।

এ মাসেই মূসা আলাইহিস সালাম তূর পাহাড়ে অবস্থান করেছেন। বনী ইসরাঈলকে তাদের নাফরমানীর কারণে তীহ উপত্যকায় চল্লিশ বছর পর্যন্ত আটকে রাখা হয়েছিল। এ সময় তারা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের কাছে দাবি করেছিল, আপনি নিজ ওয়াদা অনুযায়ী আমাদেরকে কোনো আসমানী কিতাব এনে দিন, যে কিতাবে আমাদের জীবন যাপনের নীতিমালা লিপিবদ্ধ থাকবে। এ প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে তূর পাহাড়ে এসে ত্রিশ দিন অবস্থান করতে বললেন। পরে বিশেষ কোনো কারণে এ মেয়াদ বৃদ্ধি করে চল্লিশ দিন করে দেওয়া হল।

আল্লাহ তাআলা বলেন : আমি মূসার জন্য ত্রিশ রাতের মেয়াদ স্থির করেছিলাম (যে, এ রাতসমূহে তূর পাহাড়ে এসে অবস্থান করবে)। তারপর আরো দশ দ্বারা তা পূর্ণ করি। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত মেয়াদ চল্লিশ রাত হয়ে গেল। (সূরা আরাফ : ১৪২)। প্রথম ত্রিশ দিন ও পরের দশ দিনের মধ্যে, অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে ত্রিশ দিন যিলকদ মাস। আর দশ দিন হল এর পরের মাস যিলহজ্বের প্রথম দশ দিন। আবু বকর ইবনুল আরাবী রাহ. (৫৪৩ হি.) বলেন : অনেক মুফাসসির একমত হয়েছেন, এই চল্লিশ দিন দ্বারা উদ্দেশ্য হল, যিলকদের ত্রিশ দিন ও যিলহজ্বের দশ দিন। (আহকামুল কুরআন ২/২৭৪)।

ইবনে কাসীর রাহ. বলেন : অধিকাংশ তাফসীরকারের মত হল, ত্রিশ দিন হল যিলকদ মাস আর দশ দিন হল যিলহজ্বের দশ দিন। এটি মুজাহিদ রাহ., মাসরূক রাহ. ও ইবনে জুরাইজ রাহ.-এর মত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও অন্যান্যদের থেকেও অনুরূপ তাফসীর বর্ণিত হয়েছে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪২১)। যিলকদ মাসের বিশেষ একটি ফযীলত হল, রাসূলুল্লাহ (সা.) যত উমরা আদায় করেছেন, সবগুলোই ছিল যিলকদ মাসে, একটা উমরা ব্যতীত, যা তিনি হজ্বের সাথে আদায় করেছিলেন। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) যিলকদ ব্যতীত অন্য মাসে কোনো উমরা করেননি। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৯৯৭)।

আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) চারটি উমরা করেছেন। সবগুলো হয়েছে যিলকদ মাসে, একটি ব্যতীত, যা হজ্বের সাথে করেছেন। ১. হুদায়বিয়ায় সন্ধির বছর যিলকদ মাসে উমরা করেছেন। ২. এর পরের বছর যিলকদ মাসে উমরা করেছেন। ৩. জিইরানা, যেখানে হুনায়ন যুদ্ধের গনীমত বণ্টন করেছিলেন, সেখান থেকে একটি উমরা করেছিলেন যিলকদ মাসে। ৪. আরেকটি উমরা করেছিলেন হজ্বব্রত পালন করার সময় (যিলহজ্ব মাসে)। (সহীহ মুসলিম : ১২৫৩)।

Top