নানা ইস্যু সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানো - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নানা ইস্যু সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানো


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,আলোকিত বার্তা:বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে যে, নানা ইস্যু সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানোর একটা ক্ষেত্র হয়তো তৈরি করতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণও করা হচ্ছে। সম্প্রতি কিছু কর্মকাণ্ডে অন্তর্বর্তী সরকার ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি না, তা নিয়েও জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে।শুক্রবার রাজধানীর ফার্মগেট খামারবাড়ি বার্ক মিলনায়তনে ‘ইস্টার পুনর্মিলনী ও শুভেচ্ছা বিনিময়’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ফোরাম।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের ভোটে, তাদের কাছে দায়বদ্ধ একটি প্রতিনিধিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপি প্রতিটি ক্ষেত্রেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি এখনো সহযোগিতা ও সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের দায়িত্ব পালনে সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারছে কি না, এ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে সংশয় তৈরি হয়েছে।

এ সময় গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজিদুল ইসলাম সুমনের বাসায় পুলিশি অভিযান এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিমানবন্দর থেকে দেশ ছাড়ার প্রসঙ্গ তোলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন র‌্যাব সদস্যরা ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা সাজিদুল ইসলাম সুমনকে গুম করে। আজ পর্যন্ত তার হদিস মেলেনি। স্বৈরাচারের শাসনকালে শুধু একজন সুমন নয়, সারা দেশে এমন অসংখ্য সুমন গুম-খুন-অপহরণের শিকার হয়েছে। এর প্রতিবাদে পলাতক স্বৈরাচারের সময় গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারদের সদস্যদের নিয়ে সুমনের বোনের নেতৃত্বে ২০১৪ সালে গঠিত হয়েছিল সামাজিক একটি সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। অত্যন্ত আশ্চর্য ও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে-গুম হওয়া সুমনকে ধরার জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় তার বোনের বাসায় অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। এরপর এখন প্রশাসন বলছে সুমন সম্পর্কে জানত না।তারেক রহমান বলেন, তর্কের খাতিরে আমরা ধরে নিলাম প্রশাসন সুমন সম্পর্কে হয়তো জানত না; কিন্তু পলাতক স্বৈরাচার সরকারের সময়ে একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি (আবদুল হামিদ) বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নাকি তার দেশত্যাগের বিষয়ে কিছুই জানে না। এ পর্যন্ত যতজন মানুষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, প্রত্যেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে-তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার জানেটা কী? সঙ্গে এও অভিযোগ উঠেছে-সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করে সরকার একদিকে হয়তোবা পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ করে দিচ্ছে, অপরদিকে অত্যন্ত সুকৌশলে নানা ইস্যু সৃষ্টি করে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদবিরোধী যে রাজনৈতিক দলগুলো আমরা যারা মাঠে ছিলাম, তাদের ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানোর একটা ক্ষেত্র হয়তো তৈরি করতে চাইছে। পলাতক স্বৈরাচারদের সহযোগীদেরও পুনর্বাসের ক্ষেত্রও হয়তো তৈরি করতে চাইছে। এ বিষয়গুলো ঘুরেফিরে মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি করছে।

তারেক রহমান বলেন, একটি রাষ্ট্রে সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সদস্য হওয়া-না-হওয়ার ওপর দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নির্ভর করে না। আমরা যদি পেছনের দিকে দেখি, দেখব পলাতক স্বৈরাচারের সময়ও কিন্তু বর্বর যে বন্দিশালা আয়নাঘর অন্ধকার প্রকোষ্ঠ, বছরের পর বছর সেখানে বিনা বিচারে বন্দি মানুষরাই কিন্তু সবচেয়ে বড় উদাহরণ। দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসন না থাকলে আপনি কিংবা আমি-আমরা কেউই কিন্তু নিরাপদ নই। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বও নিরাপদ নয়। রাষ্ট্রে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনই নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে পারে। দেশের আইনের শাসন ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠা। নির্বাচিত সরকারকে জনগণের প্রতি মুখাপেক্ষী করা গেলে দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসন টেকসই হয়ে ওঠে। গণতান্ত্রিক দেশগুলো যার বড় উদাহরণ। সরকারকে জনগণের কাছে মুখাপেক্ষী এবং দায়বদ্ধ না করে উলটো নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য এক ধর্মের মানুষকে যদি অন্য ধর্মের মানুষের মুখাপেক্ষী করে দেওয়া হয়, এতে বরং রাষ্ট্র ও সরকারের অসহায়ত্বের চেহারাই ফুটে ওঠে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দেখেছি আওয়ামী স্বৈরাচার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে বিভিন্ন সময়ে দেশের সংবিধানকে প্রায় নিজেদের দলীয় সংবিধানে পরিণত করেছিল। এমন বাস্তবতায় বিএনপি মনে করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধানে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচারের মূল যে মন্ত্র, সেটিতে অক্ষুণ্ন রেখে সংবিধানের সময়োপযোগী সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। ফলে সংবিধান সংস্কারের ব্যাপারে সরকারের কাছেও বিএনপি তার সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে।অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলাম। সেই সময়ের যে অসাধারণ ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম; সেই বোধ, সেই চেতনা, সেই ঐক্যকে যেন আমরা অটুট রাখতে পারি। আজ কোনো শক্তি যেন আমাদের বিভক্ত করতে না পারে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের যে দর্শন দিয়েছেন, এই দর্শনে কিন্তু সব ধর্মের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, বলা হয়েছে, ধর্মীয় মূল্যবোধকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হবে। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া ঠিক একইভাবে কেউ সংখ্যালঘু বললেই তিনি রেগে যেতেন। সংখ্যালঘু বলতে বাংলাদেশে কিছু নেই, এখানে সবাই বাংলাদেশি।

তিনি বলেন, আজ আমরা একটা সংকটময় মুহূর্ত পার করছি। গণতন্ত্র আমরা চাই। সবাই চাই। এই গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা লড়াই করেছি। আমাদের অসংখ্য ছেলে, শিশু, সন্তান তারা প্রাণ দিয়েছে। আমরা কষ্ট করেছি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ৬ বছর কারাগারে ছিলেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্বাসিত হয়ে এখনো আছেন। আমরা সবাই কারাগারে গেছি। একটি মাত্র উদ্দেশ্যে-গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা চাই। এমন একটা রাষ্ট্র চাই, যেখানে সবাই সবার কথা বলতে পারবে। সমান অধিকার থাকবে এবং সে তার ভোট দিয়ে তার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে। আমরা আশা করব, সবাই মিলে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সত্যিকার অর্থে একটা ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করতে সক্ষম হব। বিভাজন নয়, ঐক্য; প্রতিশোধ নয়, ভালোবাসা দিয়ে আমরা দেশটাকে তৈরি করব।

বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জন গমেজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, আব্দুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এনডি ক্রুজ, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ফোরামের মহাসচিব অনিল লিও কস্তা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বিপুলসংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

Top