আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দল নয় - Alokitobarta
আজ : বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়


মোহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম :জুলাই গণহত্যার দায়ে ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিচার এবং রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শুক্রবার বিকালে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজিত সমাবেশে দলটির শীর্ষ নেতারা এ দাবি জানান। তারা বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টালবাহানা চলছে। এই সিদ্ধান্ত জনগণ গত বছরের ৫ আগস্টই দিয়েছে। এরপরও কেউ ওই দলটিকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে জুলাই যোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করবে।সমাবেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে রাস্তায় নামাকে দেশের মানুষের সামষ্টিক ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি ফ্যাসিস্ট দলে পরিণত হয়েছে। দলটির নিবন্ধন বাতিল করে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। নৌকা মার্কাকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। সরকার যদি ফ্যাসিস্টদের বিচার নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে জনতার আদালতেই আওয়ামী লীগের বিচার হবে।নাহিদ ইসলাম বলেন, বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আইন করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। আমরা জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা বলেছিলাম জুলাইকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে। কিন্তু বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কারণে জুলাই ঘোষণাপত্র এখনো আসছে না। ভুলে গেলে চলবে না, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফলেই আজ বাংলাদেশে যারা রাজনীতি করছে, যারা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে; তারা কিন্তু এই শহিদপরিবার এবং আহত যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের ফলেই স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছে। ফলে অবিলম্বে এ জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে। জুলাই সনদে সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথাটি থাকতে হবে।

এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, আমরা একটি নতুন সংবিধানের কথা বলছি। সেই নতুন সংবিধানের জন্য আগামী নির্বাচন, আইনসভা এবং গণপরিষদ নির্বাচন একত্রে করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শহিদপরিবার এবং আহত যোদ্ধাদের দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্র ও সরকারকে এবং তাদের মানবিক মর্যাদার নাগরিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্টদের অযোগ্য ঘোষণা করতে নির্বাচন কমিশন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণাকারী অংশ হয়ে গেছে। সাংবাদিকদের সমালোচনা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, যারা শেখ হাসিনাকে খুনি বলা যায় কি না-এমন প্রশ্ন করেন, তারা সাংবাদিক নন, ফ্যাসিস্টদের দোসর।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অপব্যবহারের অভিযোগ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর ‘আমার সোনার বাংলা’ স্বপ্ন মুজিববাদী সংবিধানে ব্যর্থ হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলামি সংস্কৃতির বিকাশ থেমে গেছে, সমাজতন্ত্রের নামে পুঁজির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে, গণতন্ত্রের নামে বাকশাল কায়েম হয়েছে।নাহিস ইসলাম বলেন, ৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারেনি। পরে ছাত্র-জনতাই রাজপথে নেমেছে। ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’-এর ৯ মাস পার হয়ে গেলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যায়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, দলটির যারা গ্রেফতার হচ্ছে, তারা জামিন পাচ্ছে, অন্য দলে যোগ দিচ্ছে। এভাবে তৃণমূলে আবারও পুনর্বাসিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, এনসিপি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন বন্দোবস্ত বিনির্মাণে সংগঠিত হয়েছে। আমরা জানি, আমাদের হাতে সময় অল্প। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব অনেক। জাতি আমাদের ওপর ৫ আগস্ট সেই আস্থা রেখেছিল। আমরা বিশ্বাস করি, আগামী দিনে এনসিপির দিকেই জনগণ তাকিয়ে আছে এবং আস্থা রাখছে। তাই আমরা দ্রুত সংগঠিত হব। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যেই একটি শৃঙ্খলিত দল হিসাবে জনগণের কাছে পৌঁছে যাব। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জেলায় জেলায়, ইউনিয়নে ইউনিয়নে, পাড়া-মহল্লায় আমরা আসছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনারা ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ তৈরি করুন। পাড়া-মহল্লায় মহল্লায় আমরা জনতার আদালত তৈরি করব।

নাহিদ বলেন, যদি এ সরকার বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয় তবে আমরা বসে থাকব না। জনতার আদালতে আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিজমের বিচার নিশ্চিত করা হবে।আওয়ামী লীগের প্রশ্ন অমীমাংসিত রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না মন্তব্য করে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, যারা আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ দুর্গ গড়ে তুলবে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দল মিলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যে আওয়ামী লীগ গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধা কোথায়? ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আওয়ামী লীগের নামে মুজিববাদী আদর্শের নামে বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি চলতে পারে না।

আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা বলেন, গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ এবং অন্য অঙ্গ সংগঠনগুলোর জড়িতদের বিচার করতে হবে। বিচার নিশ্চিত ছাড়া আওয়ামী লীগের এই বাংলাদেশের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের মানুষ এটা নিশ্চিত করবে।কোনো ধরনের ‘যদি কিন্তু’ ছাড়াই গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ড. ইউনূস আপনাকে শুধু একটা কথাই বলব আমরা, আহত এবং শহিদদের রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছি। আমরা কোনো অনুরোধ করছি না, সরাসরি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিচ্ছি, আওয়ামী লীগকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষিদ্ধ করতে হবে।

উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আজ থেকে ৯ মাস আগে আমরা হাত উঁচু করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের রায় দিয়েছিলাম। ঠিক নয় মাস পর এই বায়তুল মোকাররমের সামনে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা রায় দেব। আওয়ামী লীগ যতদিন না নিশ্চিহ্ন হচ্ছে, আমাদের এই যুদ্ধ ততদিন চলবে।সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনুভা জাবীন, যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ প্রমুখ। তারা বলেন, আমাদের রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আওয়ামী লীগ ও হাসিনার দোসররা হুমকি। এরা বাংলাদেশে থাকতে পারে না।

Top