ডিসেম্বর থেকে জুন যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন
মু.এ বি সিদ্দীক ভুঁইয়া:জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনোভাবেই আগামী বছরের জুনের পরে যাবে না-বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুন, এই সময়ের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন হবে।বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ সম্মেলনে আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন।বিএনপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে কিছু বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন মানে, ইচ্ছা করে দেরি করে মে বা জুনে নির্বাচন করা হবে, সেটা নয়। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে হচ্ছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ডিসেম্বরে সম্ভব হলে ডিসেম্বরে, জানুয়ারিতে সম্ভব হলে জানুয়ারিতেই নির্বাচন হবে বলে বিএনপিকে বৈঠকে বোঝানো হয়েছে।আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা বিএনপিকে ক্যাটাগরিক্যালি বলেছি, নির্বাচন কোনোভাবেই জুনের পরে যাবে না। যে যাই বলুক না কেন, এটা পুরো জাতির প্রতি প্রধান উপদেষ্টার অঙ্গীকার।সংস্কার দেরি হতে পারে-বৈঠকে এমন শঙ্কার কথা উল্লেখ করে বিএনপি। আসিফ নজরুল বলেন, এ বিষয়ে তারা স্পষ্ট করে বলেছেন, জুলাই চার্টার (সনদ) প্রস্তুত হয়ে গেলেও আইনগত বিষয় আছে, নীতিগত বিষয় আছে, সেগুলো গ্রহণ করতে সময় লাগে। উদাহরণ হিসাবে আমরা বলেছি, ডিজিটাল সুরক্ষা আইন ২৩ বার ড্রাফট করা হয়েছে, মতামত নেওয়ার জন্য। জুলাই সনদ কতদিনে হয়ে যাবে সেটা তো আমরা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। বিএনপি সংস্কারের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক বলে এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে দলটি অত্যন্ত ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা বলেছে, দু-তিন দিনের মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে তারা বসছে। অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে তারা ঐকমত্য পোষণ করে। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভিন্নমত আছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘উনারা (বিএনপি নেতারা) বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন করলে ভালো হয়। আমরা বলেছি, আমাদের কারও কারও কথার মধ্যে যদি অস্পষ্টতা থাকে, আমাদের মধ্যে কোনো কোনো উপদেষ্টা অন্যরকম কথা বলেন, যে যেটাই বলুক না কেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে যেটা বারবার বলেছেন, সেটাই সরকারের অবস্থান। সেখান থেকে অন্য কেউ যদি বেফাঁস কথা বা নিজস্ব বিবেচনায় কথা বলেন, সেটাতে তারা যেন বিভ্রান্ত না হন। ভোটের বিষয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম থেকেই বলেছেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের কথা।আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের কাছে জনগণের একটা আকাঙ্ক্ষা আছে, যেন আমরা বিচার করে যাই। বাংলাদেশে হাজারের বেশি তরুণ জীবন দিয়েছে, আর প্রায় ৫০-৬০ হাজার মানুষ শারীরিকভাবে পারমানেন্টলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, চোখ হারিয়েছে। অপরাধীদের বিচার তাদের দাবি-এটা তো এই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান আকাঙ্ক্ষা। সেক্ষেত্রে আমরা যদি কোনো বিচার না করে যাই, বিচার না করে যদি নির্বাচন দেই, মানুষের কাছে জবাব দেব কীভাবে।বিএনপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বিএনপি মন খুলে কথা বলেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত তাদের প্রতিকূলে গেছে বলে তারা বলেছেন। আমরা তাদের উদাহরণ দিয়েছি, অনেক সিদ্ধান্ত তাদের অনুকূলে গেছে। রাজনৈতিক ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে বিলম্ব হচ্ছে। গত ৩ মাসে ৭ হাজারের অধিক মামলা প্রত্যাহার হয়েছে। বিএনপি আরেকটা ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলেছে। আমরা বলেছি সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। উনারা (বিএনপি নেতারা) বলেছেন, গত ১৫ বছর ধরে বিএনপি নির্যাতিত হয়েছে। আমরা শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়েছি। তারা বলেছে বিএনপি সংস্কারপন্থি দল, আমরা এটা অ্যাগ্রি করেছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে আইন উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করতে কত দিন লাগতে পারে সেটা নিয়ে তো আলোচনা হয়নি। এটা আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেবেন। আপনারা জানেন, নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর ৬০ দিন দিলেই হয়। আগের নির্বাচনগুলোও এভাবেই হয়েছে। সেই হিসাবে যখন নির্বাচন করব তার অন্তত ২ মাস আগে আমাদের রোডম্যাপটা ঘোষণা করতে হবে।প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপির মহাসচিব অসন্তুষ্টির কথা বলেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিবের এটা বলার অধিকার আছে। একটা আলোচনা থেকে একেকজন একেকভাবে পারসিভ করেন। ডায়লগটা শেষ হওয়ার পর মনে হয়েছে উনাদের মনে যে প্রশ্ন ছিল তার অনেকগুলোর উত্তর পেয়েছেন। আমার কাছে এটা মনে হয়েছে। ফখরুল ভাইয়ের কাছে অন্যরকম মনে হতে পারে।’ বিএনপি বলেছে ডিসেম্বরে, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তাতে বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনো দূরত্ব তৈরি হয়নি। আপনাদের উত্তর দিলাম তো। ফখরুল ভাই আপনাদের বলেছেন যে, উনি সন্তুষ্ট নন। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, আমাদের অনেক ব্যাখ্যা উনারা বুঝতে পেরেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে উনারা সন্তুষ্ট।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আদিলুর রহমান খান ও ড. আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।