ফ্যাসিবাদের জ্বালা থেকে এখনো মুক্ত হতে পারিনি
মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম : জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদীদের তাড়িয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদের জ্বালা থেকে এখনো মুক্ত হতে পারিনি। ফ্যাসিবাদীরা যেসব অপকর্ম করত, তা যদি আমিও করি তাহলে আমিও একজন ফ্যাসিবাদী। দয়া করে শহিদের রক্তের প্রতি সম্মান জানান। দয়া করে আহত-পঙ্গু ভাইবোনদের প্রতি সম্মান দেখান। তাদের রক্তকে, জীবনকে, আবেগ ও ত্যাগকে মেহেরবানি করে অপমানিত করবেন না। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে এ সভা হয়। দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসেন, ড. আব্দুল মান্নান, কামরুল আহসান হাসান, ড. মোবারক হোসেন, ডিইউজে সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।শফিকুর রহমান প্রশ্ন রেখে বলেন, ভাষা আন্দোলনে অধ্যাপক গোলাম আযমের যতটুকু অংশ ততটুকু অংশের স্বীকৃতি দিতে অসুবিধা কোথায়? বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী, যিনি ভাষা আন্দোলনের স্মারকের কাজ করেছিলেন তাকে কোথাও স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না কেন? তমুদ্দিন মজলিস নামের যে সংগঠন এ আন্দোলনের সূচনা করল তারা ইতিহাস থেকে দূরে কেন? যার যেখানে জায়গা তাকে সেখানে জায়গা করে দিতে হবে। এ আন্দোলনে যার যতটুকু অবদান তার স্বীকৃতি দিতে হবে।তিনি বলেন, ঘাটে-ঘাটে চাঁদাবাজির কারণে দ্রব্যমূল্য বহুগুণ বেড়ে যায়। এর চাপ এ দেশের একজন শ্রমজীবী মানুষের ওপর পড়ে। এমনকি রাস্তার একজন ভিক্ষুক ভাই অথবা বোনের ওপরও পড়ে। তাহলে তো আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা কেন এই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব, কেন আমরা নীরবে সহ্য করব? কাজেই এ ব্যাপারে আমাদের সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।তিনি আরও বলেন, বিনয়ের সঙ্গে বলি, এ কাজ বন্ধ করুন। জাতিকে স্বস্তির সঙ্গে বাঁচতে দিন, সামনে এগিয়ে যেতে দিন। আবার যাতে ফ্যাসিবাদের নতুন ধারার অধ্যায় তৈরি না হয়, তার থেকে ফিরে আসুন। ফিরে না এলে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। আমরা এ লড়াই বাদ দেব না। আমরা অবিরাম চলা সৈনিক। আমি দুনিয়া থেকে চলে যেতে পারি কিন্তু এই কাফেলা থাকবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর আমাদের দেশে যদি দখলদারিত্ব হয়, চাঁদাবাজি হয় সেটি কি অন্যায় নয়? একুশের চেতনাকে ধারণ করে আমরাও অন্যায় ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। এ দেশে যদি কেউ আবার চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব করতে চায়, সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলব। এর আগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসাবে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন করেন জামায়াত আমির।
পেছনে পুলিশ, সামনে স্বাধীনতা’ বলা ছাত্রীকে জামায়াত আমিরের স্যালুট : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে পল্টনে জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, চব্বিশের আন্দোলনে আমরা এক ছোট বোনকে দেখেছি, যিনি বলেছিলেন-‘পেছনে পুলিশ, সামনে স্বাধীনতা’। তার নাম সানজিদা চৌধুরী। স্যালুট বোন তোমাকে, স্যালুট। তোমার মধ্যে ’৫২ এবং ’৭১-এর সাহস রয়েছে। তোমার মতো বোন ও ভাইদের আমাদের খুব প্রয়োজন।
তরুণদের অবদান স্মরণ করে জামায়াত আমির বলেন, তাদের অবদান কখনো ভুলে যাওয়া যাবে না। তারা এক-একটি জীবন্ত ইতিহাস। এমন সৌভাগ্য সবাই পায় না। তাদের ইতিহাস স্মরণ করা আমাদের দায়িত্ব। আর সেই ইতিহাস থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শিক্ষা নেওয়া আমাদের কর্তব্য। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মানুষ বা দল হিসাবে আমরা কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নই। যদি আমাদের ভুল হয়, তবে আলোচনার মাধ্যমে সমালোচনা করুন।
দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দিতে দাবি হামিদুর রহমান আযাদের : এদিকে সকালে রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনের কাউন্সিল হলে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আওয়ামী-ফ্যাসিবাদীরা পতনের আগে রাষ্ট্রের সব অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে অর্জিত বিপ্লব ও বিজয় ব্যর্থ হবে। তাই সবার আগে দরকার রাষ্ট্রীয় সংস্কার এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন। তিনি অবিলম্বে কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি এবং দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান। বলেন, অন্যথায় দুর্বার গণআন্দোনের মাধ্যমে জনগণ দাবি আদায় করেই ছাড়বে।কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন-ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও মাওলানা ইয়াছিন আরাফাত এবং কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন, মোস্তাফিজুর রহমান ও প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ভাষা আন্দোলনের অগ্রসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম হলেও তাকে অবমূল্যায়ন করে ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে একুশে পদক থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি সব ধরনের হীনম্মন্যতা পরিহার করে মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযমকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার আহ্বান জানান।