জারি হচ্ছে না প্রজ্ঞাপন অদৃশ্য কারণে - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জারি হচ্ছে না প্রজ্ঞাপন অদৃশ্য কারণে


মোহাম্মাদ মুরাদ হোসেন: আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে পদোন্নতিসহ নানাভাবে বঞ্চিত হয়েছিলেন বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা। অবসরে যাওয়া এসব কর্মকর্তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন অদৃশ্য কারণে জারি হচ্ছে না।এক মাস আগে বঞ্চিতদের মধ্যে ৭৬৪ জনকে বিভিন্ন পর্যায়ে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়।সুপারিশের পর ২৪ ডিসেম্বর তা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনও হয়েছে। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ সংক্রান্ত ফাইল প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসহ এখনো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফেরত আসেনি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো.মোখলেস উর রহমান কোনো মন্তব্য করতে চাননি।শনিবার বিকালে মোবাইল ফোনে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন,বিষয়টি কোন পর্যায়ে আছে তা এখন বলতে পারছি না। এরপর মিটিংয়ের ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি ফোন রেখে দেন।তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি)মো.ওবায়দুর রহমান বলেন,প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে আসেনি।আসলে তাৎক্ষণিকভাবে আদেশ জারি হয়ে যাবে।

এদিকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশপ্রাপ্ত হননি-এমন কর্মকর্তারা প্রজ্ঞাপন জারির পর মামলায় যাবেন। কেন তাদের ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হলো না তার ব্যাখ্যা এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করবেন তারা। সরকারের বিভিন্ন সূত্রে যারা নিশ্চিত হয়েছেন, তাদের নাম সুপারিশের তালিকায় উঠেনি-এমন একাধিক কর্মকর্তা প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, স্বৈরাচার-স্বেচ্চাচারের আমলে বঞ্চিত হয়ে কাউকে বলতে পারিনি। এখন তো স্বৈরাচার নেই, নেই ফ্যাসিবাদের প্রভাব, অথচ ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হলাম না-এটা কি করে হয়? তারা আরও বলেন, পদোন্নতি কিংবা ক্ষতিপূরণ চাই না, শুধু জানতে চাই কোন যুক্তিতে আবেদন বিবেচনা করা হলো না।নাম প্রকাশ না করার করার শর্তে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ৮২ ব্যাচের অবসরপ্রাপ্ত একজন বঞ্চিত অতিরিক্ত সচিব বলেন, যতদূর খোঁজখবর নিয়েছি আমি সুপারিশপ্রাপ্ত হইনি। দেশে দল নিরপেক্ষ মানুষের দুঃখ-বেদনা বোঝার মতো বিবেকবান মানুষের বড়ই অভাব। যদি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের করা আবেদন নির্মোহভাবে যাচাই-বাছাই করা না হবে, তাহলে এ সংক্রান্ত কমিটির তো কোনো দরকার ছিল না।১০ ডিসেম্বর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সাড়ে ১৫ বছরে প্রশাসন ক্যাডারের বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়া ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করেছে এ সংক্রান্ত কমিটি। এর আগে গত বছর ১৬ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত বঞ্চনার শিকার হয়ে অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে কমিটির প্রধান করা হয়। কমিটিতে ৩ মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সুপারিশসহ সরকারকে দিতে বলা হয়েছে। সেই আলোকে ১০ ডিসেম্বর কমিটি সরকারের কাছে ৭৬৪ জনের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিতে সুপারিশ করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য, নির্ধারিত সময়ে মারা যাওয়া কর্মকর্তাদের পক্ষে তাদের পরিবারের সদস্যদের করা ১৯টি আবেদনসহ মোট ১ হাজার ৫৪০টি আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ১৩টি আবেদন নানা কারণে কমিটির আওতার বাইরে ছিল। ফলে কমিটি বাকি ১ হাজার ৫২৭টি আবেদন যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ তৈরি করেছে। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাইয়ে কমিটি ২৮টি সভা করে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সুপারিশ প্রণয়ন করেছে, যা প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।কমিটি সচিব পদে ১১৯ জন, গ্রেড-১ (সচিবের সমান বেতন গ্রেড) পদে ৪১ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন ও উপসচিব পদে চারজনকে পদোন্নতির সুপারিশ করেছে। যেহেতু তারা অবসরে গেছেন, সেজন্য তাদের ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতি দেওয়া যেতে পারে বলে সুপারিশ করে কমিটি।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৭৬৪ কর্মকর্তার মধ্যে ৯ জনকে চার স্তরে, ৩৪ জনকে তিন স্তরে, ১২৬ জনকে দুই স্তরে এবং ৫৯৫ জনকে একটি স্তরে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। সরকারের আনুমানিক হিসাবের ভিত্তিতে জানিয়েছে, এসব কর্মকর্তাকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার জন্য ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা লাগতে পারে। তবে তারা সব আর্থিক সুবিধা একসঙ্গে পাবেন না। পর্যায়ক্রমে পাবেন।

Top