অগ্নিনিরাপত্তার সব ধরনের ঝুঁকি নিরসনে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : সচিবালয়ের প্রতিটি ভবনে অগ্নিনিরাপত্তার সব ধরনের ঝুঁকি নিরসনে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। এজন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া সংস্কার প্রস্তাব হালনাগাদ করে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এছাড়া এখন থেকে বছরে দুবার প্রতিটি ভবনে রক্ষণাবেক্ষণ অডিট করতে হাইপাওয়ার স্থায়ী কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ফায়ার ফাইটিংয়ের বাধা দূর করতে ভেঙে ফেলা হবে সচিবালয়ে ভবন সংযোগের অভ্যন্তরীণ ব্রিজগুলো।একই সঙ্গে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত সাত নম্বর ভবনে পুনরায় অফিসের কার্যক্রম রোববার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। আগুনের বাইরে থাকা পঞ্চমতলা পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের কাজ পুরোদমে শুরু করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সচিবালয়ে বিদ্যুৎসংক্রান্ত যাবতীয় সেবা কার্যক্রমের প্রধান কর্মকর্তা গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নিয়াজ মো. তানভীর আলম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সচিবালয়ে ফায়ার ডিটেকশন অ্যান্ড ফায়ার প্রটেকশন কার্যক্রমকে যথাযথভাবে কার্যকর করতে আগের সব প্রস্তাবনা হালনাগাদ করা হচ্ছে। বিশেষ করে সর্বশেষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া প্রায় ৩০ কোটি টাকার প্রস্তাবটি রিভাইস করা হবে। আগুনের ঝুঁকি মোকাবিলায় যা যা করণীয় সরকার সব ব্যবস্থা দ্রুত নিশ্চিত করবে।তিনি জানান, এখন থেকে প্রতিবছর কমপক্ষে একবার প্রতিটি ভবনের ফায়ার ও সিভিল কাজসংক্রান্ত সব ধরনের ঝুঁকি চিহ্নিত করতে বিশেষ অডিট কমিটি কাজ করবে। সংশ্লিষ্ট সিনিয়র এক্সপার্টদের সমন্বয়ে স্থায়ীভাবে এ কমিটি গঠন হবে। আশা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহে এ কমিটি গঠন সম্পন্ন হবে।
সূত্র জানায়, অডিটের সময় বিদ্যুতের সার্ভিস লাইনসহ প্রতিটি ইকুইপেমেন্টর লাইভটাইম নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে একটি সুইচের মেয়াদও নির্ধারণ করা থাকবে। স্ট্রাকচারাল, প্লাম্বিং ও বিদ্যুতের ফ্লোরপ্ল্যানসহ কোথাও নকশার ব্যত্যয় করে কাজ হয়েছে কিনা সেটিও যাচাই করা হবে।
এদিকে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের পর এখন প্রতিটি ভবনের মাস্টার সেফটিপ্ল্যান নতুন করে প্রস্তুত করা হবে। সবার আগে সাত নম্বর ভবন দিয়ে এ কাজ শুরু হচ্ছে। এজন্য এ সংক্রান্ত আগের প্ল্যানের কাগজপত্রের খোঁজ পড়েছে। পুরোনো মাস্টার প্ল্যান নতুন করে কালার প্রিন্ট করা হচ্ছে। তালিকা করা হচ্ছে লাইভটাইম পার হয়ে যাওয়া ইলেকট্রো মেকানিক্যাল ইকুইপমেন্টের।সাততলা ভবনে আগুন লাগার পর এখন সচিবালয়ের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে অফিস শেষ হওয়ার পর কোনো কক্ষে লাইট, ফ্যান ও এসি চলছে কিনা সেটিও যাচাই করে দেখা হচ্ছে। অবাক হলেও সত্য যে, মঙ্গল ও বুধবার এর প্রমাণ মিলেছে বেশ কয়েকটি কক্ষে। এছাড়া নিয়মানুযায়ী প্রতিটি কক্ষের চাবি সংরক্ষণের দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের কর্মচারী ফরাসদের কাছে থাকার কথা।কিন্তু বাস্তবে অনেক কক্ষের চাবি ফরাসদের কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে নিজ নিজ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যা বেআইনি। গোপনীয়তা রক্ষার নামে এটি করা হয়েছে। কিন্তু যদি কোনো কারণে অফিস সময়ের পর আগুনের ঘটনা ঘটে তাহলে দরজা ভেঙে ফায়ার ফাইটিং করতে হবে। এজন্য বৃহস্পতিবার গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।সূত্র জানায়, সচিবালয়ে আগুনের ঝুঁকি মোকাবিলায় আধুনিক ফায়ার প্রটেকশন পদ্ধতি হিসাবে ‘ফায়ার বল’ লাগানো হবে। পুলিশ সদর দপ্তরের নবনির্মিত বহুতল ভবনে ফায়ার বল লাগানো হয়েছে। এটি এক ধরনের কেমিক্যাল বল। নির্ধারিত তাপমাত্রা ক্রস করলে এটি ফেটে গিয়ে ধোঁয়ার মতো কেমিক্যাল ছড়িয়ে পড়বে, যা আগুন প্রতিরোধক।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে ভয়াবহ আগুন লাগার পর নানারকম ঝুঁকি আর অব্যবস্থাপনার তথ্য বেরিয়ে আসছে। ‘সচিবালয়ে আগুনের ঝুঁকি নিরসন ফাইলবন্দি-চার বছরে অগ্নিনিরাপত্তার সব প্রস্তাব ফেরত’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার যুগান্তরে তথ্যবহুল রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। যেখানে দেখা যায়, ২০২১ সালে ৩ কোটি ২৭ লাখ, ২০২২ সালে ৭৫ কোটি এবং ২০২৩ সালে ২৮ কোটি টাকার সংস্কার প্রস্তাব পেশ করা হলেও কোনোটি অনুমোদন দেওয়া হয়নি।