বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছিল
মহাব্বাতুল্লাহ:বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছিল। চরদখলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে দখল, চাঁদাবাজি ও আধিপত্যবাদ বজায় রাখতে ক্যাম্পাসগুলোকে অস্ত্রাগারে পরিণত করেছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থার কবর রচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে আর কোনো চাঁদাবাজ, আধিপত্যবাদ ও দখলবাজের স্থান হবে না।মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন-২০২৪ এর উদ্বোধনী সেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ৮ আগস্ট বুলেটের আঘাতে রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদ আলী রায়হানের বাবা মুসলেহ উদ্দিন। এ সময় জুলাই বিপ্লবে শহিদ আবু সাঈদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, ওয়াসিম, উসমানসহ শহিদ পরিবারের সদস্য, আওয়ামী আমলের অত্যাচারে আহত ও গুম হওয়া পরিবারের সদস্য মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে সমাপনী সেশনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০২৫ মেয়াদে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন জাহিদুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হয়েছেন নুরুল ইসলাম। সারা দেশের শিবির সদস্যরা অনলাইনে ভোট দিয়ে তাদের নির্বাচিত করেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে ছাত্র ও যুবসমাজ কোনো দুঃশাসন মেনে নেয় না, সেটা চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে প্রমাণিত হয়েছে। স্বাধীনতার সাফল্যকে হাইজ্যাক করে একটা রাজনৈতিক দল দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। কিন্তু ছাত্রসমাজ ১৫ বছরের মাথায় তাদের সেই দুঃশাসনকে পরাজিত করে নতুন বাংলাদেশের শুভ সূচনা করেছে। বাংলাদেশে আর কোনো আধিপত্যবাদ ও দুঃশাসন এদেশের জনগণ মেনে নেবে না।বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, মাওলানা শামসুল ইসলাম ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতিরা।
সদস্য সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন-বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মুফতি কাজী ইবরাহীম, বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা যায়নুল আবেদীন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. শামছুল আলম, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মাওলানা সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন জাফরী, লেবার পার্টির ড. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, গণঅধিকার পরিষদের (রেজা কিবরিয়া) ফারুক হাসান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির রাশেদ প্রধান, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা। বিদেশি অতিথিদের মধ্যে ছিলেন-আনাদোলু গেঞ্জলিক দেরনেইর সহসভাপতি এমরুল্লাহ ডেমির, পেরসাতুয়ান কেবাংসান পেলাযার ইসলাম মালয়েশিয়ার সভাপতি জুল আইমান, হিকমত ইয়ুথ মিসরের সভাপতি ড. আবদুল্লহ আহমেদ, ইসলামী বিশ্ব যুব ফোরামের সভাপতি ড. আশরাফ আওয়াদ, আংকাতান বেলিয়া ইসলাম মালয়েশিয়ার সভাপতি আহমদ ফাহমি মোহাম্মদ সামসুদিন। ছাত্র নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, জাগপা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রহমান ফারুকী, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের (ববি হাজ্জাজ) সভাপতি মাসুদ রানা জুয়েলসহ বন্ধুপ্রতিম ছাত্রসংগঠনের নেতারা।
জুলাই অভ্যুত্থানে সহযোদ্ধার ভূমিকায় ছিল ছাত্রশিবির : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির রাজপথে থাকা, পরামর্শ দেওয়া ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে সহযোদ্ধার মতো ভূমিকা পালন করেছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের শুরু থেকে শিবিরের কর্মীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ কোনো দিন কোনো সত্যকে চেপে রাখতে পারে না। সত্য প্রকাশিত হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।
সারজিস আলম বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরে খুনি শেখ হাসিনা যাকেই পটেনশিয়াল থ্রেট (সম্ভাব্য হুমকি) মনে করেছিল, তাদেরই যেভাবে পেরেছে, নানা তকমা দিয়ে ব্লেইম গেমে (দোষারোপের খেলা) মেতে উঠেছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, অনেক নিরপরাধ মানুষকে, অনেক নিরপরাধ আলেম-ওলামাকে শুধু তার পটেনশিয়াল থ্রেট মনে করার কারণে জেলখানা থেকে শুরু করে হামলা, মামলা, নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করেছে।’
ছাত্রশিবিরকে কাজের মধ্য দিয়ে গ্রহণযোগ্যতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের সবকিছুর আগে, ব্যক্তির আগে, গোষ্ঠীর আগে, দলের আগে পুরো দেশের মানুষ। ২৪-এর অভ্যুত্থানে আমরা একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এবং পরিকল্পনার টেবিলে বসে যে কাজগুলো করেছি, আগামী বাংলাদেশ গঠনে দেশের স্বার্থকে সবার আগে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাব।’
ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি জাহিদুল, সেক্রেটারি নুরুল : বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ২০২৫ মেয়াদে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন জাহিদুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত হয়েছেন নুরুল ইসলাম। সারা দেশের শিবির সদস্যরা অনলাইনে ভোট দিয়ে নতুন সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত করেন। এদিন বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মতিউর রহমান আকন্দ শিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলনের সমাপনী সেশনে নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় সভাপতির নাম ঘোষণা করেন। এরপর সভাপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান ছাত্রশিবিরের প্রধান নির্বাচন কমিশনার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিবিরের সহকারী নির্বাচন কমিশনার ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সেলিম উদ্দিন। শিবিরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।এতে বলা হয়, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে অনলাইনের মাধ্যমে একযোগে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় সভাপতি যথাক্রমে সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক, কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক, কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক, কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় বিতর্ক সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ মহানগর সভাপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। জাহিদুল ইসলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়ছেন। নতুন সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম ইতঃপূর্বে কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক, কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক, কেন্দ্রীয় প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক, কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্পাদক ও খুলনা মহানগর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। নুরুল ইসলাম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচআরএম বিভাগে মাস্টার্স করছেন।