ইসলামী ব্যাংকগুলো টাকা লুটের জন্য বেছে নিয়েছিল - Alokitobarta
আজ : বৃহস্পতিবার, ২০শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসলামী ব্যাংকগুলো টাকা লুটের জন্য বেছে নিয়েছিল


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : আমি যখন বিভিন্ন দেশে যাই, তখন প্রবাসীরা বলেন-তারা সব থেকে বেশি পছন্দ করেন ইসলামী বাংকগুলোয় টাকা পাঠাতে। আর ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার লুট করার জন্য বেছে নিয়েছিল ইসলামী ব্যাংকগুলোকেই। ৬টি ইসলামী ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে তাদের প্রিয় বিজনেস গ্রুপ বলে জানান আইন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।বুধবার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস এবং জাতীয় প্রবাসী দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে প্রধান অতিথির বক্তেব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন। এবার দিবসগুলোর প্রতিপাদ্য ছিল-‘প্রবাসীর অধিকার আমাদের অঙ্গীকার, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ আমাদের সবার’। অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা। তবে এ দায়িত্ব মূলত নির্বাচন কমিশনের, তবুও আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব বলে মন্তব্য করেছেন আসিফ নজরুল। পাশাপাশি আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান, এজন্য আমাদের সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ইসলামীধারার ব্যাংকগুলো। এ ব্যাংকগুলোকে টার্গেট করে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছিল। কয়েকদিন আগে ঘোষণা করা হয়েছে এ ব্যাংকগুলো চাঙা করার। সেই পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পূর্ববর্তী বছরের এ সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পৃথিবীর ১৭৬টি দেশে বাংলাদেশের রেমিট্যান্সযোদ্ধারা আছেন। আপনাদের সবার প্রতি বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে, বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিদেশে থেকে প্রবাসীরা যারা সমর্থন জানিয়েছেন, তাদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। বিদেশে তাদের চাকরি চলে যাবে, জেলে থাকতে পারে সারা জীবন, এই আশঙ্কার মধ্যেও আমাদের শতশত প্রবাসী বাংলাদেশি রাস্তায় নেমে এসেছিল। এজন্য তাদের চরম মূল্যও দিতে হয়েছিল। অনেককে জেলে রাখা হয়েছিল। অনেকে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসতে পারবে কি না-এমন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। আমাদের প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত উদ্যোগে তারা সবাই দেশে ফেরত এসেছেন। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে তাদের পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নিচ্ছি। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে আমরা অভিবাসন ব্যয় কমাতে চেষ্টা করছি। অনেক রিক্রুটিং এজিন্সি আছে, তারা চিন্তা করে কীভাবে বেশি করে মানুষকে ঠকানো যায়। গত সরকারের আমলে এ ধরনের রিক্রুটিং এজেন্সিকে প্রাধন্য দেওয়া হয়েছিল।তিনি বলেন, আপনারা পাসপোর্ট নিয়ে অনেকেই অভিযোগ দিয়েছেন। আমি বিনয়ের সঙ্গে জানাই, পাসপোর্ট আমাদের মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন না। আমার এখতিয়ারের বিষয় না। তবে এ বিষয়ে যারা যুক্ত, তাদের সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছি। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ডিজির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে তিনবার কথা বলেছি। কয়েকদিন আগে আপনাদের একটি সুখবর দিয়েছি-১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পাসপোর্ট পাঠানো শুরু হয়েছে। প্রথমে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবে প্রবাসীদের।আসিফ নজরুল বলেন, ২৭টি দূতাবাসে আমাদের লোক আছে। অনেক সময় প্রবাসীরা তাদের কাছ থেকে খারাপ ব্যবহার পান। এটা আমাদের কাছে খুবই খারাপ লাগে। দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। আমরা বিষয়টি তাদের জানিয়েছি। চেষ্টা করব হয়রানি কমানোর। এছাড়াও প্রবাসীদের ভোটের জন্য আমরা সর্বোচ্চ কাজ করছি। এটি নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রবাসীদের ভূমিকা ছিল অন্যতম। আমরা দেখেছি বিভিন্ন দেশে সভা-সমাবেশ করা নিষিদ্ধ, সেখানে কোনো আইনের তোয়াক্কা না করে, ভবিষ্যৎ কী হবে, সেটা না ভেবে প্রবাসী ভাইয়েরা আমার জন্য কীভাবে দাঁড়িয়েছেন এবং ঝাঁপিয়ে পড়েছে, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন, আজকের এই দিনে গভীড়ভাবে তাদের স্মরণ করছি এবং শ্রদ্ধা জানাতে চাই। তিনি বলেন, যারাই আন্দোলন করতে এগিয়ে এসেছিল, তাদেরই দমন করা হচ্ছিল। যে সময় আমাদের কারও মাঠে নামার পরিস্থিতি ছিল না, ইন্টারনেট বন্ধ করে নারকীয় হত্যাকাণ্ড করছিল, তখন আমাদের প্রবাসীরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছেন। প্রতিবাদ করেছেন। যার ফলে সেই সময় আন্দোলন টিকে ছিল, পরবর্তী সময়ে একদফায় রূপান্তরের ক্ষেত্রে একটা বড় অবদান আমাদের প্রবাসী ভাইদের রয়েছে। আমি একজন নাগরিক হিসাবে এটা দাবি করতে চাই এবং পরামর্শ দিতে চাই নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনকে। সেটা হলো প্রবাসীদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নে একটা সুন্দর রূপরেখা যেন সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়। আমরা চাই, যারা পরিবার-পরিজনকে দূরে রেখে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন, তারা যেন দেশগঠনে, সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভোটাধিকার পান। এজন্য আমাদের সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।

Top