একজন সৎ, দক্ষ, সাহসি কর্মকর্তা আওয়ামী সরকারের বৈষম্যের শিকার - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একজন সৎ, দক্ষ, সাহসি কর্মকর্তা আওয়ামী সরকারের বৈষম্যের শিকার


মু.এ বি সিদ্দীক ভুঁইয়া:বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।বিগত কয়েক দশক যাবত প্রতিষ্ঠানটি একটি লোকসানী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সকলের নিকট পরিচিত ছিল।আয় বৃদ্ধি, ব্যয় সংকোচন ও যাত্রী সেবার মান উন্নয়নের কঠোর নীতি অবলম্বন করে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।সেই সাথে বিআরটিসির বাৎসরিক আয়-ব্যয় যেখানে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ছিলো লোকসানে। সেখানে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখে।এ ধারা অব্যাহত রেখে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে লাভ করে ৪৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে লাভ করে ২৫ কোটি ৪ লাখ টাকা। এই হিসেবে বিআরটিসি এখন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত হয়েছে।বিআরটিসি সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যেই নতুন গাড়িবহর থাকা সত্ত্বেও মাসে প্রায় ৬ কোটি টাকা নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধ করা সম্ভব না হলেও বর্তমানে পুরাতন গাড়িরবহর দ্বারা মাসে প্রায় ১২ কোটি টাকা বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করে উন্নয়নমূলক কাজ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধাদি নিশ্চিত করা হয়েছে।চালক, কারিগরসহ প্রায় ১,২৪০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিগত তিন বছরে সচল গাড়ির সংখ্যা ৮৮৫ টি থেকে ১,১৯৮ টিতে উন্নীত করা হয়েছে। বিগত তিন বছরে মেরামতকৃত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও মেরামত খাতে প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয় সাশ্রয় হয়।বিমানবন্দরে প্রবাসী বাংলাদেশি ও রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিমানবন্দর শাটল বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পর্যটক বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যাত্রীদের যাতায়াত সুবিধার্থে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এছাড়াও মেট্রোরেল কানেক্টিভিটি সার্ভিসসহ সেবার যাত্রীসেবার পরিধি আরো বিস্তৃত করা হয়েছে। বিআরটিসি গাড়িবহরে নতুন বাস ও ট্রাক যুক্ত করা। বাংলাদেশের সকল জেলায় বিআরটিসি’র বাস পরিচালনা করা। চেসিস ক্রয় করে বিআরটিসি’র নিজস্ব কারখানায় গাড়ি তৈরি করা। ডিপো ও ট্রেনিং সেন্টার ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন সিস্টেম চালু করা। বিআরটিসি প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কসপ কার্যক্রম আরো আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।দীর্ঘকাল লোকসানে থাকলেও কয়েক বছর ধরে পরিবর্তন এসেছে সংস্থাটির কার্যক্রমে। এখন আরো বাস-ট্রাক বাড়াতে পারলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে সংস্থাটিতে।

আওয়ামীলীগ সরকারের বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন বর্তমান বিআরটিসির চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম। আওয়ামীলীগ সরকার তার সচিব হওয়ার পদোন্নতির তালিকা থেকে তার নামটি বার বার ফেলে দিয়েছিলো। তার অপরাধ ছিলো তিনি কুমিল্লায় এডিসি থাকা কালিন সময়ে বিএনপির সাবেক এমপি ও মন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) আকবর আলীর লাশটি কবরে নামানোর অপরাধে।এ অপরাধে তাকে কখনো সাজানো হয়েছিলো বিএনপির লোক আবার কখনো সাজানো হয়েছিলো জামাতে ইসলামির লোক হিসাবে।আওয়ামীলীগ সরকার মোঃ তাজুল ইসলামের জুনিয়রদের বিভিন্ন ভাবে সচিব পদে পদোন্নতি দিলেও বার বার মোঃ তাজুল ইসলামকে তার প্রাপ্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করেছে। তাকে বিভিন্ন ভাবে বঞ্চিত ও নিগৃহীত করে রাখা হয়েছিলো আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে।অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক আইন মন্ত্রী আনিসুল হকের রোশানলে পড়ে বার বার তিনি সচিব হওয়ার পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হন। সাবেক আইন মন্ত্রী তার সচিব পদে পদোন্নতিতে বাধা প্রদান করেন।এছাড়াও মোঃ তাজুল ইসলামের পেছনে বারংবার আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু নেতা কর্মীকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিলো তাকে হেনস্তা করার জন্য। তিনি সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করেছিলেন শুধু চাকরি বাঁচানোর জন্য।

মোঃ তাজুল ইসলামের মত একজন সৎ, দক্ষ, সাহসি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি তো দুরের কথা চাকরি জীবনে তাকে ঘাত-প্রতিঘাত আর পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে থাকতে হয়েছে বছরের পর বছর। তারপরও বিন্দু মাত্র দ্বায়িত্ববোধ আর কর্মক্ষেত্র থেকে বিচ্যুত হননি একটুও।মোঃ তাজুল ইসলাম বিআরটিসির চেয়ারম্যান হিসাবে দ্বায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার সার্বিক দিক নির্দেশনায় কারিগরি, প্রশিক্ষণ, স্থাপনাসহ সকল ক্ষেত্রে সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে। প্রতি মাসের ১ তারিখে দেওয়া হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা। তিনি আসার পর বিআরটিসির দায় দেনা পরিশোধ করা হয়েছে ১০১ কোটি টাকা। বিআরটিসিতে যাত্রী সেবার মান উন্নয়ন করা হয়েছে। তার সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনায় আমুল পরিবর্তন এসেছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিআরটিসিতে।মোঃ তাজুল ইসলামের মত একজন দক্ষ, সৎ, সাহসি, কর্মবীর কে প্রয়োজন এ দেশ ও জাতির জন্য। কর্মক্ষেত্রে তিনি যেখানে গিয়েছেন নানা প্রতিকুল অবস্থার মধ্যে তিনি তার কর্মদক্ষতার প্রমান রেখেছেন সর্বত্র।

মোঃ তাজুল ইসলামের মেধা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, আন্তরিকতা এবং সাহসিকতার কারনে বিআরটিসি আজ একটি সুন্দর অবস্থানে পৌছাতে পেরেছে।
আওয়ামীলীগ সরকারের বঞ্চনার শিকার হওয়া এ কর্মকর্তা নিজের প্রতি বিশ্বাসে অটল থেকেছেন সব সময়। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে পদোন্নতি বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হয়েও কাজ করেছেন নিজের গতিতে। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন এ পদোন্নতি বঞ্চিত ও বৈষম্যের অবসান একদিন হবেই। শত চাপের মুখেও কখনো নতি স্বীকার করেননি মোঃ তাজুল ইসলাম।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তিনি অন্তরালে থেকে ছাত্র আন্দোলনকে সহযোগিতা করেছেন তার মেধা দিয়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালিন সময়ে ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে কুমিল্লা থেকে বিজিবি আসার জন্য বিআরটিসি বাস দেওয়ার জন্য বার বার তাকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল। শত চাপ প্রয়োগ করা হলেও তিনি বিআরটিসির একটি বাসও দেননি বিজিবি আনার জন্য। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কে মনে প্রানে সমর্থন করেছিলেন তিনি।
ট্রাফিক কন্টোলে রাস্তায় থাকা ছাত্র ও ছাত্রীদের খাবার সরবরাহ করেছেন মোঃ তাজুল ইসলাম। এমন আরো অনেক ঘটনা রয়েছে। মোঃ তাজুল ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-সংগ্রাম কে অন্তরালে থেকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছেন।মোঃ তাজুল ইসলাম একজন সৎ, সাহসী ও দ্বায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসাবে তার সুখ্যাতি রয়েছে সর্বত্র। তিনি আশা ও বিশ্বাস করেন বর্তমান সরকার আওয়ামীলীগ সরকারের সময় যারা বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন তাদের জন্য এ সরকার অবশ্যই ভাল কিছু করবেন।

বিআরটিসির চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার সময় করপোরেশনটি খুবই খারাপ অবস্থায় ছিল। লোকসান আর ভর্তুকি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতাও বকেয়া ছিল। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তখনকার সময় এমনও হয়েছে ১৮ মাসের মতো বেতন বকেয়া ছিলো। ইতোমধ্যেই বকেয়ার অধিকাংশ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। চরম অস্থিরতার মধ্যেও বেতন ১২ কোটি টাকা পরিশোধে সক্ষম হয়েছে সংস্থাটি। সার ও খাদ্য পরিবহন সচল ছিল কারফিউ ও অস্থিরতার মধ্যেও।বর্তমান সরকার ব্যয় সঙ্কোচনে জোর দিয়েছে। সে কারণে লোকসানি বিআরটিসি এখন লাভের মুখ দেখছে। দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করতে পারায় সফলতা এসেছে বলে মনে করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যন মোঃ তাজুল ইসলাম।জানা গেছে, বিআরটিসির ২৪টি বাস ডিপো, দু’টি ট্রাক ডিপো, ২৬টি মেরামত কারখানা, দুইটি কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানা ও ২৭টি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। বিআরটিসির বহরে এক হাজার ১৯৮টি বাস ও ৫০৫টি ট্রাক রয়েছে। ২০৩টি স্থানীয় ও ৫টি আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করে বিআরটিসি গাড়ি। আগে বেতন ছাড়াও বিভিন্ন সময়ের বকেয়া ব্যয় পরিশোধ করতে হচ্ছে বর্তমান প্রশাসনকে।বিজ্ঞাপন, যন্ত্রপাতিসহ অতীতের বকেয়া পরিশোধের মতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।গত জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বিআরটিসির বহরে থাকা ২৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয় বাস, ২৩৫টি স্টাফ বাস ও বিভিন্ন রুটে সক্ষমতার চেয়ে কমসংখ্যক বাস চলাচল করে। এই পরিস্থিতিতে নিরাপদে গাড়ি পরিচালনা ও যথা সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করাই ছিল চ্যালেঞ্জ। তবে পরিকল্পানা মাফিক কাজ করার ফলে সেটি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে বিআরটিসি।প্রতিকূল পরিবেশেও যাত্রী নিরাপত্তা বিবেচনা করে সর্বোচ্চসংখ্যক বাস ও ট্রাক পরিচালনা করা হয়। ২০২১ সালের আগে বহরে নতুন গাড়ি থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হতো না।ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিআরটিসি আরো সক্ষমতা বৃদ্ধির আশা করছে।বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসির) চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যেই আপনারা জেনেছেন বিআরটিসি আর কোনো লোকসানি প্রতিষ্ঠান নেই। দক্ষতা ও দুর্নীতি মুক্ত রেখে কাজ করায় বিআরটিসি এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত হয়েছে। পূর্বের যেসব সমস্যা ছিলো বর্তমান সময়ে সেগুলো কাটিয়ে উঠেছে।তিনি আরও বলেন, আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো মেরামত করা হয়েছে। গাড়িবহরে নতুন বাস ও ট্রাক যুক্ত করাসহ দেশের সব জেলায় বিআরটিসির বাস পরিচালনা করার পরিকল্পনা রয়েছে। নিজস্ব কারখানা, ডিপো ও ট্রেনিং সেন্টার ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন সিস্টেম চালু প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ রয়েছে।

Top