বসুন্ধরা, বেক্সিমকোসহ ৫ শিল্প গ্রুপ কর্ণধারের ব্যাংক হিসাব তলব
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : কর ফাঁকির অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমানসহ শীর্ষ পাঁচ ব্যবসায়ীর বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বাকিরা হলেন-বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান এবং ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম। প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে বৃহস্পতিবার দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংক, ফাইন্যান্স কোম্পানি, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও সঞ্চয় অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। চিঠিতে উল্লেখিত ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেনদেন ও সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে রুটিন কাজের অংশ হিসাবে ৫ শীর্ষ ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত আয়কর ফাঁকির ঘটনা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। শুরুতে এসব ব্যক্তির ব্যক্তিগত আয়কর ফাঁকির অনুসন্ধান করা হবে। পর্যায়ক্রমে তাদের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর কর ফাঁকি উদ্ঘাটনে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) বিশেষ টিম কাজ করবে।গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার সরকার ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর অংশ হিসাবে ইতোমধ্যেই অভিযুক্তদের বিষয়ে মানি লন্ডারিং, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)সহ সরকারের অন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। আয়কর ফাঁকির ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে সিআইসি।
ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের আলোচিত ব্যবসায়ী এস আলম, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ সেলিমের পরিবারের সদস্যদের কর ফাঁকি অনুসন্ধান শুরু করেছে এনবিআরের কর অঞ্চল ১৫। সিআইসির এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, বুধবার এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশক্রমে সিআইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে এই পাঁচটি শিল্পগোষ্ঠীর গত কয়েক বছরের আয়কর, ভ্যাট, কাস্টমস সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে কর ফাঁকির তদন্ত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া এসব গোষ্ঠীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হবে বলে জানা গেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, আলোচিত শিল্প গ্রুপগুলো আমদানি-রপ্তানির নামে দেশ থেকে টাকা পাচার করেছেন। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আয়কর আইন অনুযায়ী অনুসন্ধান করা হবে। পরবর্তী সময়ে অর্থ পাচার বা অন্য কোনো অপরাধের খোঁজ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হবে।
কর্মকর্তারা আরও জানান, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত দেড় দশকে শক্ত কোনো অবস্থান নিতে পারেনি এনবিআর। গ্রুপগুলোর কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট ও শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে ছোট ছোট মামলা হলেও কখনো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। বিপুল সম্পদের কারণে দেশজুড়ে পরিচিত এসব শিল্প গ্রুপের কর্ণধাররা। কিন্তু তাদের অনেকেই কখনো সেরা করদাতার তালিকায় জায়গা পাননি। শুধু বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকরা গত বছর সেরা করদাতার খেতাব পান।