মতিউর রহমানের সম্পদ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ
মোহাম্মাদ মুরাদ হোসেন: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতিউর রহমানের সম্পদ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।রোববার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “পত্রপত্রিকায় যেভাবে খবরটি এসেছে, সেটি সত্যি অনভিপ্রেত এবং এটি যদি সত্য হয়, তাহলে সেটি খুবই দুঃখজনক।এদিনই এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে মতিউর রহমানকে সরিয়ে দিয়ে আদেশ জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।একাদশ বিসিএসের (শুল্ক ও আবগাড়ি) কর্মকর্তা মতিউর রহমান রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে সরকার মনোনীত পরিচালক। ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন বছরের জন্য সোনালী ব্যাংকের পরিচালক করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছিল অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
ওই পদ থেকেও তাকে সরানো হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।তিনি বলেন, “আমি ইতোমধ্যে এনবিআরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি, তাকে এনবিআরের সদস্যপদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে।এবং আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গেও কথা বলেছি, তিনিও জানিয়েছেন, তাকে (মতিউর) সোনালী ব্যাংকের পরিচালকের পদ থেকে সরানোর জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,এরপর তদন্ত হবে, যে অভিযোগগুলো উপস্থাপিত হয়েছে, সেটা সত্য কি না সেটা তদন্তের পর বেরিয়ে আসবে। তারপর ভবিষ্যতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”কোরবানির জন্য ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে ইফাত নামের এক তরুণের ১৫ লাখ টাকা দামে ছাগল কেনার ফেইসবুক পোস্ট ঘিরে গত দিন দশেক ধরেই রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় আলোচনা চলছে।ছাগল কিনতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ইফাত। ধানমন্ডির বাসায় ঈদের দিন ছাগলটি কোরবানি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
তখন ছাগলসহ ইফাতের ছবি জুড়ে দিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তোলেন- ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ছাগল কেনার অর্থের উৎস কী?এ প্রশ্ন ঘিরে সামনে আসতে থাকে ইফাতের পরিচয়। ইফাত নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিসহ পোস্ট দিয়ে ও সংবাদমাধ্যমে বাবার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, তার বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি মো. মতিউর রহমান।ইফাতের বাবার পরিচয় ধরে অনেকে প্রশ্ন তোলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার ছেলের বিপুল ব্যয়ে কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য হল কী করে?অবশ্য ছাগলটি ইফাত শেষপর্যন্ত কেনেননি বলে দাবি সাদিক এগ্রোর কর্ণধার মোহাম্মদ ইমরান হোসাইনের। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ইফাত শুধু ১ লাখ টাকা দিয়ে ছাগলটির বুকিং করেছিলেন। তবে অবশিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে ছাগলটির তিনি আর নিয়ে যাননি।
মতিউর সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসায় জড়িয়েছেন; বিনিয়োগ করেছেন পুঁজিবাজারেও।বিপুল আয়ের উৎস সম্পর্কে বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির প্রশ্নের উত্তরে মতিউর বলেছেন, “একটা গ্রুপ অব কোম্পানির ৩০০ একরের জমিতে আমার একটা অংশ আছে। কোনো কারখানায় আমার বিনিয়োগ আছে। কিন্তু ৩০০ একর জমি বা কারখানার পুরোটা আমার না। আমাদের পরিবারের বিনিয়োগ আছে মাত্র।ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে নিজের বিও হিসাবে দুই কোটি ও মেয়ের হিসাবে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। মেয়ের এই হিসাব পরিচালনা করে ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছিলেন।হাছান মাহমুদ বলেন, “দুর্নীতির মাধ্যমে এভাবে কারো সম্পদ অর্জন করা কখনোই সমীচীন নয় এবং আমাদের সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে।এবং সে কারণেই আমাদের সরকারের আমলেই কিন্তু নানাজনের দুর্নীতির বিষয় উঠে আসছে; এটা অন্য কেউ তুলে আনে নাই।মতিউর রহমান এর আগে ব্রাসেলসে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সিলের,চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার,ভ্যাট কমিশনারসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।১৯৯৪ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়া এ কর্মকর্তা পড়ালেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে একাধিকবার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মতিউর বলেন, “চারবার দুদক তদন্ত করে দেখেছে, আমি কোনো দুর্নীতি করিনি।