সরকার উৎখাত করা এত সহজ কাজ নয় - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সরকার উৎখাত করা এত সহজ কাজ নয়


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি কেন বিজয়ের মাসে বিজয়ের অনুষ্ঠান করবে? সেদিন তারা এলো আন্দোলন করে সরকার উৎখাত করবে। তিনি বলেন, সরকার উৎখাত করা এত সহজ কাজ নয়। বিভিন্ন সরকার উৎখাতে আওয়ামী লীগের ‘অবদানের’ কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইয়ুব খানকে আমরা উৎখাত করেছি। ইয়াহিয়াকে যুদ্ধে পরাজিত করে উৎখাত করেছি। জিয়াকে হাতে পাই নাই, কিন্তু জিয়া যখনই যেখানে গেছে, তার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। এরশাদকে উৎখাত করেছি। খালেদা জিয়া (১৯৯৬ সাল) ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরির নির্বাচন করে। তাকে উৎখাত করা হয়েছে। আবার ২০০৬-এ ভোট চুরি করেছিল, এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোট করতে চেয়েছিল, সেটাও বাতিল হয়েছে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রোববার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, চাইলে আওয়ামী লীগই পারে সরকার উৎখাত করতে। তবে আমাদের বিরুদ্ধে অনেকেই চক্রান্ত করতে পারবে, ষড়যন্ত্র করতে পারবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসলে তাদের উৎখাত করা সহজ নয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে মানুষের শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি। আর উপরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তো আছেন। কাজেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দয়ায়, মানুষের শক্তি নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে। এ সময় ষড়যন্ত্রের বিষয়ে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, চক্রান্ত করে ২০০১ সালে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। তার ভোগান্তি এ দেশের মানুষের হয়েছে। আবার যেন সেই ভোগান্তিতে না পড়তে হয়, সে বিষয়ে মানুষকে সজাগ থাকতে হবে।এ সময় ২০৪১ সালের ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেই বাংলাদেশে প্রত্যেকটা মানুষ কম্পিউটার ব্যবহারে পারদর্শী হবে। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সবকিছু আমরা ই-গভর্নেন্স, ই-বিজনেস করব। এমনকি স্বাস্থ্যসেবা থেকে শিক্ষা সবকিছু আমরা সেভাবে গড়ে তুলব। সেভাবেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। দেশকে ধ্বংস করতে খুনি ও যুদ্ধাপরাধীরা যেন আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিজয় আমরা এনেছি, এই বিজয়ের পতাকা সমুন্নত করেই চলতে হবে। আবার যেন ওই খুনি, যুদ্ধাপরাধী, যাদের আমরা বিচার করেছি, তারা ক্ষমতায় এসে এই দেশকে ধ্বংস করতে না পারে। সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে ও লক্ষ্য রাখতে হবে।

বামপন্থিরা মনে হয় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে : যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচির দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে এবং তাদের সঙ্গে আরও কিছু পার্টি দাঁড়াল। আরেকটি জিনিস খুব অবাক লাগে, কোথায় বামপন্থি আর কোথায় ডানপন্থি। যারা বামপন্থি, তারা মনে হয় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। তিনি বলেন, সেই জামায়াত-বিএনপি তাদের সঙ্গে আমাদের বাম, অতি বাম, স্বল্প বাম, তীব্র বাম, কঠিন বাম সব যেন এক হয়ে এক প্ল্যাটফর্মে। ওই যে বলেছিল না, কী বিচিত্র এই দেশ, সেলুকাস। সে কথাই মনে হয়। কোথায় তাদের আদর্শ? কোথায় তাদের নীতি? আর কোথায় কী?

আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী : স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই দলে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে? এদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের সমর্থন করে কীভাবে? এটা ভাবলে আমার অবাক লাগে। এরা তো ইতিহাস জানে। তিনি প্রশ্ন করেন, আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী? আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতায় বসে নিজে খাচ্ছে না। দেশের মানুষকে খাবার দিচ্ছে। এ সময় গৃহহীনদের ঘর দেওয়া, রোগের চিকিৎসা করাসহ বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।

ক্ষমতায় আসাটা খুব সহজ ছিল না : সরকারপ্রধান বলেন, ক্ষমতায় আসাটা খুব সহজ ছিল না। এত সহজে আসতে দেয়নি। জনগণ আমাদের সমর্থন করে। ভোট আমাদের আছে। কিন্তু নির্বাচনে বারবার কারচুপি করে হোক, ষড়যন্ত্র করে হোক, চক্রান্ত করে হোক আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কিন্তু মানুষের শক্তি বড় শক্তি। আর বিশ্বাস। মানুষের শক্তি নিয়েই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন জানানো বিদেশিদের সম্মাননা দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জন্য এতটুকু কেউ করলে আমরা সেটা স্বীকার করি। আবার কেউ আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে প্রতিবাদও করতে জানি।

সামনে আর ভর্তুকি দিতে পারব না : বিদ্যুতের দাম উৎপাদনের খরচ অনুযায়ী দিতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন ভর্কুকিমূল্যে দিচ্ছি। সামনে আর দিতে পারব না। আমাদের যেটা খরচ সেটা কিন্তু দিতে হবে। তাহলে দেব, না হলে দেব না। তিনি বলেন, আমদানি ব্যয় বাড়ায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। আমাদের অনেক জিনিস আমদানি করতে হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। সেজন্য দামও বেড়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী তেল ও গ্যাসের মূল্য বেড়ে গেছে। সেজন্য আমাদের কিছুটা সাশ্রয়ী হতে হচ্ছে। সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেব বলেছিলাম, সে কথা তো রেখেছি। এখন বিশ্বে দাম বাড়লে আমাদের কী করার আছে?

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় সভায় সূচনা বক্তব্যে দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে বক্তব্য দেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সিমিন হোসেন রিমি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

Top