নেতৃত্বের দুর্বলতায় ভেঙে পড়েছে সংগঠন!
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : দশ বছর পর ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল। মাত্র ২ দিন বাকি থাকলেও শুক্রবার পর্যন্ত ওয়ার্কিং কমিটির সভায় উপস্থাপন হয়নি কাউন্সিলর তালিকা। তাই কারা কাউন্সিলর হচ্ছেন সেটি জানেন না বিদ্যমান কমিটির অনেকেই।৭১ সদস্যের এ কমিটির ৩৩ জনই বর্তমান কমিটির কার্যক্রমের ওপর আস্থা হারিয়ে দলীয় সভানেত্রীর কাছে নানা অভিযোগ দিয়েছিলেন বর্তমান কমিটির মেয়াদের সাড়ে তিন বছরের মাথায়।সেখানে বলা হয়েছিল, অসাংগঠনিক কার্যক্রমের কারণে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। মনোনয়ন বাণিজ্য, পদ বণ্টন বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগ তোলা হয় বর্তমান কমিটির শীর্ষ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। তিনি অভিভাবকের ভূমিকায় মাঠের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্তু তার প্রয়াণের পর এই এলাকার রাজনীতি অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। বর্তমান সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ২৭ বছর সাধারণ সম্পাদক ও ১০ বছর ধরে সভাপতিসহ ৩৭ বছর ধরে নেতৃত্বে রয়েছেন। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও তিনি তৃণমূলের আস্থা অর্জন করতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই তৃণমূল চাইছে নেতৃত্বের পরিবর্তন।২০১২ সালের ৪ নভেম্বর আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু মারা যান। একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটি অনুমোদন করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। মোছলেম উদ্দিন আহমদকে সভাপতি ও মফিজুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে অনুমোদিত ৩ বছরের কমিটি পার করেছে ১০ বছর। তবে এই কমিটির মেয়াদের সাড়ে ৩ বছরের মাথায় ২০১৬ সালের ৬ অক্টোবর কমিটির অসাংগঠনিক কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরে দলীয় প্রধানের কাছে চিঠি দেন কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা ৩৩ সদস্য।
সেখানে তারা বলেন, শীর্ষ নেতৃত্বের অসাংগঠনিক, অগঠনতান্ত্রিক ও অনৈতিক কার্যক্রম, ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন ও পদ-পদবি বণ্টনে বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্ম চলছে। এ কারণে সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে নষ্ট হয়েছে। তবে এমন চিঠি লেখার পরও চিত্র তেমন একটা পালটায়নি। নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণেই জেলার আওতাধীন বিভিন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে তৈরি হয় বন্ধ্যাত্ব। ২৬ বছর ধরে সম্মেলন হয়নি বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের। ১০ বছর ধরে হয়নি বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। পটিয়া, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন বা কমিটি ঘোষণা হলেও পদ-বণ্টন বাণিজ্য হয়েছে। এসব কমিটিতেও বিশেষ করে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মতানৈক্যের কারণে সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা সাংগঠনিক কোনো বিধিবিধান ছাড়াই স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে সংগঠন পরিচালনা করেছেন। যে কারণে ৭১ সদস্যের কমিটির প্রায় অর্ধেক নেতাই এদের কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট ছিলেন। তৃণমূল নেতাদের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। তাই সম্মেলনে নেতৃত্বের পরিবর্তন চান তৃণমূল নেতাকর্মীরা।তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুল কাদের সুজন বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত ওয়ার্কিং কমিটির সভায় কাউন্সিলর তালিকা উপস্থাপন করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী কমিটির সভায় অনুমোদনের পরই নির্বাচিত কাউন্সিলররা কার্ড পাওয়ার কথা।চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, সাংগঠনিক বিধিবিধান মেনেই সংগঠন পরিচালনা করা হচ্ছে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে অর্থাৎ প্রতি ১০ হাজারে ১ জন কাউন্সিলর কার্ড পাবেন এসব কাউন্সিলর নির্ধারণ হয়েছে। কাউন্সিলররা যদি চান অবশ্যই নেতৃত্বের পরিবর্তন হবে।
জানা গেছে, সভাপতি পদে আবারও প্রার্থী হচ্ছেন মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি। তিনি ছাড়াও এ পদে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। একইভাবে সভাপতি পদে বর্তমান কার্যকরী কমিটির সদস্য, রূপালী ব্যাংকের সাবেক পরচালক সাংবাদিক আবু সুফিয়ান, বর্তমান কমিটির সহসভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম, আবুল কালাম চৌধুরী, পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর নাম আলোচনায় আছে। সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ছাড়াও শাহজাদা মহিউদ্দিন, আবদুল কাদের সুজন, প্রদীপ দাশ, ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান, আইউব বাবুলের নাম আলোচনায় আছে।এ বিষয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ শুক্রবার বলেন, এক সময় আমার প্রয়াত বাবা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি বলিষ্ঠভাবে পরিচালনা করেছেন। সামনে নির্বাচন। তাই জেলা আওয়ামী লীগে বলিষ্ঠ ও শক্তিশালী নেতৃত্ব দরকার। পরিবর্তন হবে কী হবে না তা দলের সভানেত্রী জানেন। আমি এ পদের (সভাপতি) জন্য আগ্রহী নই। যদি দল থেকে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সেটি ভিন্ন কথা।