মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২ জঙ্গি ছিনতাই ,ধরিয়ে দিলে ১০ লাখ টাকা করে পুরস্কার - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২ জঙ্গি ছিনতাই ,ধরিয়ে দিলে ১০ লাখ টাকা করে পুরস্কার


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : মোহাম্মদপুর থানার এক মামলায় ১২ জঙ্গিকে হাজির করা হয় ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের (সিজেএম) আদালতে। হাজিরা শেষে একজন পুলিশ চারজন আসামিকে নিয়ে রওয়ানা হন হাজতখানার দিকে। তবে আদালতের সামনে একটি মোটরসাইকেলে ওতপেতে ছিল চার জঙ্গি। হঠাৎই পুলিশের চোখে পিপার স্প্রে করে ফিল্মি স্টাইলে ছিনিয়ে নেয় দুই জঙ্গিকে। মোটরসাইকেলে চড়ে তাদের পালিয়ে যাওয়ার ছবি ধরা পড়ে ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরায়। এ সময় মুখে মাস্ক পরা আরও একজনকে দৌড়াতে দেখা যায়। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর রায়সাহেব বাজার মোড়সংলগ্ন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে ঘটনাটি ঘটে।এ ঘটনায় দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। পলাতক দুই জঙ্গিকে ধরতে ১০ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণাসহ সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারির কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ঘটনায় কারও গাফিলতি আছে কি-না, তা-ও অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। ঘটনার পর থেকে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে তল্লাশি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সারা দেশের আদালতের নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ ঘটনায় ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।ডিএমপি কমিশনার জানান, পুলিশের চোখে-মুখে পিপার স্প্রে করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া ব্যক্তিদের তথ্য পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে যারা পালিয়েছে তাদের গ্রেফতার করা ও শনাক্তের জন্য কাজ শুরু হয়েছে। যারা ছিনতাই করতে এসেছিল তাদের সম্পর্কে তথ্য পেয়েছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হব। পালাতে অক্ষম সবুর ও আরাফাত পরিকল্পনার অংশ ছিল।

পালিয়ে যাওয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি হলো-মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এর মধ্যে সিফাত সামিরের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুর গ্রামে। আর সাকিবের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেটেশ্বর গ্রামে। তাদের ধরিয়ে দিতে পুলিশ এক সময় পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল। তারা একাধিক মামলার আসামি।ঢাকার সিজেএম আদালতের অষ্টম তলায় ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল। রোববার সেখানে দুই জঙ্গির মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল। ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি গোলাম সারোয়ার খান বলেন, শুনানি শেষে হাজতখানায় নেওয়ার পথে তাদের ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে জানতে পেরেছি। জঙ্গিরা একটি মোটরসাইকেল ফেলে যান বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। এরপর পুলিশ কনস্টেবল নুরে এ আজাদকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল থেকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে। নুরে আজাদ ডিএমপির প্রসিকিউশনের রিজার্ভ ফোর্স হিসাবে কর্মরত। ঘটনার পরপরই গোয়েন্দা পুলিশসহ বিভিন্ন বিভাগের সদস্যরা ঘটনাস্থলে হাজির হন। সোয়াত টিমের সদস্যরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, দুই জঙ্গি পালিয়ে গেছে। তারা নতুন একটি কৌশল ব্যবহার করেছে। চোখে স্প্রে করে পুলিশকে কিল-ঘুসি দিয়ে তারা গলিতে ঢুকে রায়সাহেব বাজার মোড়ের দিকে পালিয়ে যায়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাদের ধরতে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনতে পারব।এদিকে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয় বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। তারা বলছেন, কর্তব্যরত পুলিশের অসতর্কতায় প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। আইনজীবী আশরাফুল আলম বলেন, এসব ঘটনার পর দায়সারা তদন্ত কমিটি হয়। আদালতে দায়িত্বরত পুলিশদের আরও চৌকশ হওয়া প্রয়োজন। আইনজীবী হুমায়ুন কবির বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে যত্রতত্র দোকান এবং হকার উচ্ছেদ করা না হলে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি হবে না। ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, হাজতখানা থেকে কোর্টে আসামি আনা-নেওয়ার সময় চৌকশ পুলিশ দিয়ে এবং পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।আদালতে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ : এদিকে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় সারা দেশের আদালতগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। ঢাকার নিম্ন আদালত থেকে পুলিশের চোখে স্প্রে করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়। রোববার প্রশাসন থেকে মৌখিক এ নির্দেশ দেওয়া হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিমকোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, দুপুরে ঢাকার কোর্টে দুজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মিস হয়ে যাওয়ার ঘটনায় আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। যেন দেশের আদালতগুলো সতর্ক থাকেন।

পুলিশের তদন্ত কমিটি : দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রোববার ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক এ তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আসামিদের পালিয়ে যাওয়া ঘটনায় দায়দায়িত্ব নির্ধারণ ও ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত সুপারিশ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডিএমপির গঠন করা কমিটিকে। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে যুগ্ম-কমিশনার (অপারেশনস), যুগ্ম-কমিশনার (সিটিটিসি), উপকমিশনার (গোয়েন্দা, লালবাগ) ও অতিরিক্ত উপকমিশনার (সিআরও) সদস্য হিসাবে থাকবেন।

Top