বিএনপিকে এখন ছাড় দিলেও ডিসেম্বর থেকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া : মাঠের বিরোধী দল বিএনপিকে এখন ছাড় দিলেও ডিসেম্বর থেকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লোক ভাড়া করে সমাবেশ করে আমাদের ভয় দেখান? এখন ছাড় দিচ্ছি। ডিসেম্বরে ছাড়ব না। ডিসেম্বরে খেলা হবে উল্লেখ করে বিএনপির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা ভুলে যান। নির্বাচন করে আসতে হবে। তত্ত্বাবধায়কের ভূত মাথা থেকে নামান। এটি সর্বোচ্চ আদালত নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। আমাদের কোনো দোষ নেই। তত্ত্বাবধায়ক আর আসবে না। ওইটা জাদুঘরে চলে গেছে।শনিবার বিকালে বাড্ডা ইউলুপে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র, নৈরাজ-সহিংসতা ও আগুন সন্ত্রাসের’ প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। রামপুরা ব্রিজ থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত পুরো এলাকা ছিল জনাকীর্ণ। বেলা ৩টায় এই মিছিল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর থেকেই উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানা বিশেষ করে উত্তরা, বনানী, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা ভিড় করেন। মঞ্চের সামনে ও পেছনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে মেরুল বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, শাহজাদপুরে অবস্থান নেন।দুপুর ২টার পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জমায়েতের কারণে রামপুরা কুড়িল সড়কের দুপাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কুড়িলমুখী যানবাহন হাতিরঝিল হয়ে বিকল্প রাস্তা, আর রামপুরামুখী যানবাহন নতুনবাজার থেকে বিকল্প রাস্তায় চলাচল করে। সৃষ্টি হয় যানজট। এতে এই এলাকায় চলাচল করা মানুষদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এদিকে শান্তি সমাবেশ ঘিরে বিশাল এই জনস্রোতের সামনে অস্থায়ী ট্রাকের ওপর মঞ্চ বানিয়ে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন, বিএনপি যতই ষড়যন্ত্র করুক, দেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। বিএনপির হাত দিয়ে দেশ পেছনে ফিরে যাবে না।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, এই রাজপথ মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাসে বিএনপির থাকবে না। এই রাজপথ আওয়ামী লীগের রাখব, মুক্তিযুদ্ধের রাজপথ, বিজয়ের মাসের রাজপথ, বিজয়ের চেতনার রাজপথ। বিএনপিকে অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সামনে ডিসেম্বর মাস। আপনারা নাকি ওই মাসে আমাদের হটিয়ে, শেখ হাসিনাকে হটিয়ে খালেদা জিয়াকে নিয়ে খোমেনি স্টাইলে বিপ্লব করবেন ঢাকার রাজপথে। জনতার শক্তির সামনে এ রঙিন খোয়াব কর্পূরের মতো উবে যাবে।ঢাকার শান্তি সমাবেশে বিশাল জনস্রোত হয়েছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে এসে বরিশালের কথা ভাবছি। বিএনপি টাকা-পয়সা দিয়ে কয়েক দিন আগ থেকেই লোক জমায়েত করেছে দাবি করে তিনি বলেন, ফখরুল সাহেব ছয় জেলার লোক টাকা-পয়সা দিয়ে দু-চার দিন আগ থেকে বরিশালে জমায়েত করেছেন। আর এখানে ছয় থানার লোক। বরিশালের চেয়েও দ্বিগুণ লোক এখানে।তিনি বলেন, আমার সামনে (সমাবেশের) মাথা কোথায় জানি না। দেখছি আর দেখছি। আমার পেছনে আমেরিকান দূতাবাস পর্যন্ত লোক আর লোক। বিদেশিদের কাছে নালিশ করে বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। কিন্তু বিদেশিরাই এখানে থাকেন। তারা দেখুন কার কত শক্তি। গণমাধ্যমের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি অতিরিক্ত চাই না। আমার ডিউ কভারেজ চাই। আজকের এই জমায়েত ছয় থানার, ছয় জেলার চেয়েও বেশি। এসে আপনারা (বিএনপি) দেখে যান।সমাবেশে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই-এ দেশের আর একটি মানুষের ওপর আঘাত করলে-একশ মানুষের আঘাত নেওয়ার জন্য আপনাদের (বিএনপি) প্রস্তুত থাকতে হবে। যতই ষড়যন্ত্র-বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবেন আমরা তা সফল হতে দেব না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। জনগণকে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গত ১৪ বছর দেশ পরিচালনা করছে। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখেছে। তা বিএনপির ভালো লাগে না। তাই তাদের ভালো লাগার ওষুধ দিয়ে তাদের ভালো লাগাতে হবে। এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের শক্তির ওপর আঘাত এলে পালটা আঘাত দেওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের সব সময় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।ডিসেম্বরে ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সমাবেশের নামে তারা যদি আবার কোনো উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায় তাহলে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ওই কেরানীগঞ্জের কারাগারে আমরা দেখব। সেটাই হলো বিএনপি নেত্রীর যথাযথ স্থান। দেশ থেকে পালানো তারেক রহমানের নির্দেশে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় ঢাকাবাসী তাদের শক্তহাতে প্রতিহত করবে। এ বিশ্বাস আমাদের রয়েছে।ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য একেএম রহমতুল্লাহ, দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। এতে আরও বক্তব্য রাখেন-ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, সহসভাপতি ওয়াকিল উদ্দিন, আবদুল কাদের খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা প্রমুখ।