উত্তপ্ত ঢাবিতে সংঘর্ষ গুলি,হেলমেট বাহিনী হেলমেট পরে আগ্নেয়াস্ত্রসহ হামলায় অংশ নেয়
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া :ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পরিবেশ আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। একদিনের ব্যবধানে বড় দুটি সংগঠন ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল নিজেদের মধ্যে ফের সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এদিন ঢাবিতে ছাত্রদলের ওপর হামলার প্রতিবাদে ডাকা কর্মসূচিতে হামলা চালায় ছাত্রলীগ।বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে হেলমেট বাহিনী নামে পরিচিত বর্তমান ছাত্রলীগ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ হামলায় অংশ নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় একাধিক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। দেশের সর্বোচ্চ আদালত চত্বরে ঢুকেও অনেককে মারধর করা হয়। এসব ঘটনায় ৪৭ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন তিন সাংবাদিকও। তাদের একজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। হামলার আধা ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ।ক্যাম্পাসে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ রাখার জন্য আগে থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের অন্তত ছয়টি স্পটে ছাত্রলীগের কর্মীরা অবস্থান নেন। পরিস্থিতি বিশেষভাবে তদারকির জন্য তাদের সঙ্গে রাখা হয় মোটরসাইকেল বহর।মূল সংঘর্ষ হয় হাইকোর্টের মাজার গেট এবং কার্জন হল এলাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন। ছাত্রদল শুরুতে হামলা প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও ছাত্রলীগের তীব্র আক্রমণের মুখে পিছু হটে।কয়েকদিক থেকে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এসবের প্রতিবাদে শনিবার দেশের সব জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল এবং রোববার সব উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও কলেজে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। একটি পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা।তারা দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এর আগে আদালত চত্বরে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আইনজীবী তৈমূর আলম খন্দকারের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।এদিকে নব্বইয়ের ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতারা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। ছাত্র ফোরাম অস্ত্র-সন্ত্রাস ও দখলদারিমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে ঢাবি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানায়।এ হামলাকে বিরোধী মত দমনের হাতিয়ার হিসাবে উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে ৮ ছাত্র সংগঠন। তারা ক্যাম্পাসে পরিবেশ পরিষদের সভা ডাকার অনুরোধ জানান। আজ ৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। ক্যাম্পাসের অবস্থার কারণে পরীক্ষার্থীদের অনেকেই ভয়ে লাইব্রেরিতে পড়তে আসেনি।এদিকে ঢাবির ঘটনার জের হিসাবে মানিকগঞ্জেও ছাত্রলীগের কর্মীরা যুবদল ও ছাত্রদলের দুই নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাবির ঘটনায় আহতদের দেখতে হাসপাতালে ছুটে গেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতারা। তারা আহতদের শারীরিক অবস্থার খবর নেন।
বৃহস্পতিবার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য বেলা ১২টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে যাত্রা শুরু করে ছাত্রদল। তাদের গন্তব্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা।মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি ডেকেছিল তারা। এদিকে ছাত্রদলের কর্মসূচি প্রতিহত করতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে মহড়া দিতে থাকেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখার নেতাকর্মীরা।ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হল থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মীকে আনা হয় কর্মসূচিতে। শুরু থেকেই মারমুখী অবস্থানে ছিল তারা। এই এলাকা দিয়ে চলাচলকারী কাউকে ‘সন্দেহভাজন’ মনে হলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এদিকে ছাত্রলীগের শক্ত অবস্থানের মধ্যে ছাত্রদলের মিছিলটি কার্জন হল এলাকায় আসামাত্র তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা শুরু হয়। চাপাতি, দা, লাঠি, রড, ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্পসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আগে থেকেই এখানেও অবস্থান নিয়েছিল ছাত্রলীগের কর্মীরা।এর মধ্যে সাদা টি-শার্ট ও নীল হেলমেট পরিহিত একজনকে কোমর থেকে বের করা অস্ত্র উঁচিয়ে হামলায় অংশ নিতে দেখা গেছে। এছাড়া সংঘর্ষস্থলে কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগকে প্রতিরোধের চেষ্টা করে।ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। সংঘর্ষের এ পর্যায়ে কার্জন হলে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে মধুর ক্যান্টিন, শহিদ মিনার, টিএসসি এলাকায় অবস্থা নেওয়া নেতাকর্মীরা যোগ দেন। তখন পিছু হটে ছাত্রদল।ছত্রভঙ্গ হয়ে নানাদিকে ছোটাছুটি করতে থাকলে বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ নেতকর্মীরা তাদেরকে ধরে ধরে পিটিয়েছেন। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে হাইকোর্টের মাজার গেট এলাকায়। উচ্চ আদালত চত্বরে প্রবেশ করে কয়েক ছাত্রদল কর্মীকে বেধড়ক পেটায় ছাত্রলীগ।দেশীয় অস্ত্রের উপর্যুপরি আঘাতে একজন গুরুতর আহত হয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন। পরে তাকে রিকশায় করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এছাড়া আহত অন্যদেরও শুরুতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। ছাত্রলীগের ভয়ে অনেকে তখন হাইকোর্টের মসজিদের ভেতরেও আশ্রয় নেন।এদিকে হাইকোর্টের মধ্যে এমন ঘটনার পর সেখানে আসেন হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার। তিনি চত্বরের ভেতরে এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময় উপস্থিত অন্যরা আদালতের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।এ অবস্থায় রোববার থেকে হাইকোর্টের নিরাপত্তা জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়। হামলার বিষয়ে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আক্তার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সশস্ত্র হামলা করে।ছাত্রদলের ৪৭ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ও হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।এদিকে হাইকোর্ট এলাকায় হামলার সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন বেপরোয়া কর্মী সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালায়। সংঘর্ষের ভিডিও ও স্থিরচিত্র গ্রহণ করায় হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন সাংবাদিকরা।এসময় অনলাইন পোর্টাল ডেইলি ক্যাম্পাসের সাংবাদিককে পিটিয়ে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে যান ছাত্রলীগ কর্মীরা। আবির আহমেদ নামের ওই সাংবাদিককে ছাত্রলীগের কর্মীরা বেধড়ক মারধর করেন।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের নিজস্ব প্রতিবেদক (মাল্টিমিডিয়া) আবির আহমেদ জানান, হাইকোর্ট এলাকায় ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলার সময়ে তিনি লাইভে ছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করে তার ফোন কেড়ে নেন।প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, সাংবাদিক আবিরকে ছাত্রদলের তকমা দিয়ে পেটান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ঘটনার ভিডিও ধারণকালে আরও দুজনকে মারধর করেন তারা।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক আল-আমিন রহমানের নেতৃত্বে চলে এ হামলা। আল-আমিনের বিরুদ্ধে এর আগেও এ ধরনের অভিযোগ এসেছে। তার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা ছিলেন।এদিকে সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। হামলার আধা ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে আসেন তারা। ততক্ষণে হামলা থেমে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক।
এরপর সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে হেফাজতে নেয় শাহবাগ থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার তাদেরকে হেফাজতে নেওয়ার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ করে ছাত্রদল।ছাত্রলীগের অভিযোগ, সেই সমাবেশে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘কটূক্তি’ করেছেন।এরপর থেকেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল ইউনিটের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে ছাত্রদলকে প্রতিহতের ঘোষণা দেন। সাধারণ সম্পাদকের সেই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতেতে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল।কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে আসার পথে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন তারা। এদিন প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্রদলকর্মী আহত হন। আর এই হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির পালনের ঘোষণা দিয়েছিল সংগঠনটি। এদিন সেই কর্মসূচি পালন করতে এসে ফের হামলার শিকার হন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বরদাশত করবে না।ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ধরনের অপপ্রয়াস চালাচ্ছে একটি পক্ষ। সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যাতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবহার করতে না পারে।
তিন ছাত্রদল নেতা আইসিইউতে : সংঘর্ষে আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সহ-সভাপতি তানভীর আজাদী, ঢাকা মহানগর উত্তরের কর্মী জুয়েল হোসনসহ তিনি ছাত্রদল নেতাকে গুরুতর অবস্থায় আইসিউতে ভর্তি করা হয়েছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আক্তার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আহত অন্যরা প্রশাসনিক বাধার কারণে চিকিৎসা নিতে পারছে না।
ছাত্রলীগের হামলায় আহত ছাত্রদলের অন্যরা হলেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আক্তার হোসেন, সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান, ঢাবির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, শাকির আহামেদ, আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, এইচএম আবু জাফর, ঢাবি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. তারিকুল ইসলাম তারিক, নাছির উদ্দীন নাছির, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সভাপতি তারেক রানা, বিজয় একাত্তর হলের সভাপতি সোহেল রানা, সহসভাপতি তানভীর আজাদী, এফএইচ হলের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মাসুদ রানা, ছাত্রদল নেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, ছাত্রদল নেতা সাহবুদ্দীন আহমেদ, আব্দুল কাইউম, নাহিদ চৌধুরী, রাজু হাসান রাজন, আতিক মোর্শেদ, আতাউর রাহমান বুলেট, আবদুল্লাহ আল মাসুদ, মো. মানিক হোসেন, বাহারুল ইসলাম, রেজাউল করিম রাজু, সজীব রায়হান, মো. শামীম আকন, মো. ইজাবুল মল্লিক, সরদার মিলন, জুবায়ের আল মাহমুদ, নজমুল ইসলাম বাহার, মাসুদ রানা রিয়াজ, আরিফ মোল্লা, আবুল হোসনে হাওলাদার আশিক, রিমু হোসেন, কাওছার হোসেন, মো. শামীম হোসেন, মো. সাইফুল ইসলাম মিঠুন, আসদুজ্জামান আসলাম, গোলাম মাওলা লিখন, রকিব ইসলাম আলভী, সজিব হওলাদার, এসএম শামীম হোসেন, নাদির শাহ পাটোয়ারি ও কাজী রফিকুল ইসলাম।
থমথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস : এদিকে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সংঘর্ষের সময় এই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।দুপুর দুইটার দিকে সংঘর্ষ থামলেও রয়ে যার তার রেশ। আড়াইটার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলে ও বাসায় ফিরতে থাকে। তবে মোটরসাইকেলের একটি বহর দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত টহল দিতে থাকে।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে থমথমে অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হয়। অন্যদিকে ৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এরই মধ্যে পরীক্ষার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে।কিন্তু অশান্ত ক্যাম্পাসে পরীক্ষার্থীদের মধ্যেও এক ধরনের ভীতি কাজ করেছে। ফলে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও সায়েন্স লাইব্রেরিতে পড়তে যাননি।ঢাকার অন্যান্য স্থানেও ছাত্রলীগের অবস্থান : এদিকে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর আশপাশের এলাকাই নয়, ঢাকার আরও অনেক স্থানেও অবস্থানে ছিল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রীগের সভাপতি মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে নয়াপল্টনে বিএনপির পার্টি অফিসের বিপরীতি দিকে দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জোবায়ের আহাম্মেদের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা শিক্ষা ভবন এলাকায় অবস্থান নেয়।বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি লিংকন আজাদের নেতৃত্বে সেখানে ছিল ছাত্রলীগের অবস্থান। এভাবে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এলাকাতেও অবস্থান ছিল ছাত্রলীগের।বৃহস্পতিবারের হামলার বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, অছাত্রদের নিয়ে গড়া ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বুড়োদের সংগঠন। চাচ্চুদের নিয়ে গড়া এই অছাত্রদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাঁশ হাতে নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েছে।এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো চাচ্চু এসে যদি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়, তাহলে শিক্ষার্থীরা ছাড় দেবে না এটাই স্বাভাবিক।ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রদল তার পুরোনো ইতিহাসের মতো ফের ক্যাম্পাসকে উত্তপ্ত করতে চাইছে। এরই অংশ হিসাবে মিছিলের নামে মহড়া দিচ্ছে।তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসকে শান্তিপূর্ণ রাখতে রাস্তায় নেমে এসেছে। তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি আমরা ছাত্রলীগ। বিগত বছরগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো মেধাবীর প্রাণ ঝরেনি।আমরা চাই না এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীতের মতো সন্ত্রাসীদের হাতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রাণ ঝরুক। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও চায় না। আর এ কারণেই এই প্রতিরোধ।
এদিকে ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় ছাত্রদলের ক্যাম্পাস অভিমুখী শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণ এবং সশস্ত্র হামলা চালায়।গুলির শব্দে ছাত্রদলকর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে সুপ্রিমকোর্টের অভ্যন্তরে আশ্রয় নেয়। তখন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হকিস্টিক, স্টাম্প, রড এবং অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপরে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশাপাশি আজ সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের আক্রমণে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। ছাত্রদল এ পৈশাচিক এবং ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
আইনজীবী ফোরামের বিক্ষোভ : সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে প্রবেশ করে ছাত্রদল কর্মীদের মারধর করার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন আইনজীবীরা।মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা আব্দুল জাব্বার ভূঁইয়া প্রমুখ।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের সংঘর্ষের সময় ছাত্রদলকর্মীরা হাইকোর্ট মাজার গেট হয়ে সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে প্রবেশ করেন।এ সময় ছাত্রলীগকর্মীরা সেখানে প্রবেশ করে ছাত্রদলকর্মীদের মারধর করে। খবর পেয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা জড়ো হয়ে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেন।
মানিকগঞ্জে যুবদল ও ছাত্রদলের দুই নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ : মানিকগঞ্জের স্টাফ রিপোর্টার জানান, স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যুবদল ও ছাত্রদলের দুই নেতাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে।হামলায় মাথায় মারাত্মক আঘাত পাওয়ায় দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা শহরে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ প্রাঙ্গণে এই হামলার ঘটনা ঘটে।আহতরা হলেন, মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি ও জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাকিবুল ইসলাম ওরফে বাবু এবং জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক আবদুল খালেক ওরফে শুভ।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এমএ সিফাদ কোরাইশী সুমন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী তাদের ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটায়নি-তারা নিজেদের মধ্যে মারামারিতে আহত হয়েছেন।