জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ
মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া:জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ বছর ডিসেম্বরে।তার আগে জেলা-উপজেলা সম্মেলন শেষ করতে চলছে সাংগঠনিক কর্মযজ্ঞ। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন মাসের ‘আলটিমেটাম’ দেওয়ার পর মাঠে তৎপর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ২২তম জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে দেশব্যাপী তৃণমূলে সংগঠন গুছিয়ে আনার কাজ করছেন তারা।ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের কয়েকটি জেলার সম্মেলন শেষ হয়েছে। সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে আরও বেশ কয়েকটি জেলার। উপজেলা-পৌরসভা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সম্মেলন হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজও চলছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ডিসেম্বরের আগেই দলের মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। এরপর কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী সংগঠন হিসাবে গড়ে তোলা হবে। জাতীয় সম্মেলনের পর নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রম আরও জোরদার হবে বলে মনে করেন তারা।জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, আগামী জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি আমরা শুরু করেছি। এর মধ্য দিয়ে আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও গ্রহণ করছি। তিনি আরও বলেন, করোনা সংক্রমণ কমার পরই কিন্তু আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনগুলোর সম্মেলনের কাজ শুরু করেছি। আমি আশা করি- আগামী ডিসেম্বরে, আমাদের জাতীয় সম্মেলনের আগেই আমরা সব মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনের সম্মেলন শেষ করতে পারব ইনশাআল্লাহ।জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আমরা একটা জাতীয় সম্মলন শেষ করে পরবর্তী সম্মেলনের আগেই দলকে পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ চলছে। যদিও করোনার কারণে গত দুই বছর আমাদের দল গোছানোর কাজ কিছুটা সীমিত আকারে করতে হয়েছে। করোনা সংক্রমণ কমার পর আমরা সেটা আবার পুরোদমে শুরু করেছি। ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ইউনিয়ন থানা, উপজেলা ও জেলার সম্মেলন করছি। করোনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, আশা করি আমরা কাউন্সিলের নির্ধারিত সময়ের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা-উপজেলার সম্মেলন শেষ করতে পারব। এরপর কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী হিসাবে গড়ে তোলা হবে। তৃণমূলসহ দলে নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো বিভেদ থাকলে তা নিরসন করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা হবে।
একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) তিন মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো সম্মেলনের মাধ্যমে ঢেলে সাজানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। মাঝখানে আবার রোজা আছে। এজন্য হয়তো আরেকটু সময় লাগতে পারে। তবে আমরা তিন মাস টার্গেট করেই কাজ করছি। এই সময়ের মধ্যে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা সম্মেলন করব। এর মধ্য দিয়ে আমরা দলকে আরও সুসংগঠিত করে ঢেলে সাজাব। তিনি আরও বলেন, ভোটের রাজনীতিতে তো জনসমর্থন সবচেয়ে বড় কথা। সামনে যেহেতু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমরা সেটা মাথায় রেখেই জাতীয় সম্মেলনসহ অন্য কাজগুলো করছি।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি পদে নবমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচিত হন। তার সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের।
তিন বছর মেয়াদি এই সম্মেলনের মেয়াদ শেষ হবে এ বছর ডিসেম্বরে। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছেন, ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলনের নির্ধারিত সময় পার হচ্ছে। কিন্তু আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের লক্ষ্য আগেভাগেই জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে ঢেলে সাজানো। এরপর এক বছর নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সে কারণে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনটা এ বছর ডিসেম্বরের আগেও হয়ে যেতে পারে।এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করতে চায় তারা। একই সঙ্গে জনগণের মন জয় করে টানা চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য দলের সব স্তরের কমিটিতে সাংগঠনিকভাবে দক্ষ, তৃণমূলে পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন তারা। এরই অংশ হিসেবে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় তিন মাসের মধ্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।এরই অংশ হিসেবে ঝিমিয়ে পড়া জেলা-উপজেলাকে উদ্দীপ্ত করতে নতুন নেতৃত্ব আনা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে করোনা কমার পরে পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পঞ্চগড় জেলাসহ আরও অন্তত অর্ধশত উপজেলা, থানা ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে আরও প্রায় ১০টি জেলার সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে।জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক জানান, ৩১ মার্চের মধ্যে তার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের অন্তর্গত ১২টি উপজেলার সম্মেলন শেষ করা হবে। এছাড়া ১২ মে মাগুরা, ১৪ মে মেহেরপুর, ১৫ মে চুয়াডাঙ্গা এবং ১৬ মে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, মে মাসের মধ্যে আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের (খুলনা) জেলা-উপজেলাগুলোর সম্মেলন শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনবলেন, সিলেট বিভাগের ৫টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে চারটির সম্মেলন হয়েছে। এই বিভাগের একটি জেলার (সুনামগঞ্জ) সম্মেলন বাকি আছে। তবে সেখানেও সম্মেলনের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রোজার পরই জেলা সম্মেলনটা করে ফেলব। কয়েকটি উপজেলার সম্মেলন বাকি আছে। সেগুলোও করছি। আশা করছি জাতীয় সম্মেলনের আগেই আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের সব সম্মেলন শেষ করত পারব।এদিকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় সম্মেলনের এই প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের সামনে আরও বেশি কিছু কাজ রয়েছে। সম্মেলন ও দল গোছানোর পাশাপাশি নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন, দলীয় প্রার্থী বাছাই, প্রশিক্ষিত এজেন্ট তৈরিসহ নানা কাজে মনোযোগ দিতে হবে তাদের। আবার জাতীয় সম্মেলনের জন্য দলের জেলা ইউনিটের কাউন্সিলর তালিকা লাগবে। যার জন্য ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা শাখায় সম্মেলন করে জেলা ইউনিটের কমিটি করতে হবে। দীর্ঘদিন টানা ক্ষমতায় থাকা দলটির তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটানোর বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি বিরোধীদের মাঠ দখলের সুযোগ না দিয়ে ‘অপপ্রচার’র বিরুদ্ধে সজাগ থাকবে আওয়ামী লীগ। সব মিলিয়ে কাজের বড় তালিকা এখন ক্ষমতাসীন দলটির হাতে।