সম্মেলনের দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সম্মেলনের দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া:সম্মেলনের দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসবক লীগে। ফলে চার নেতায় (উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ এই দুই ইউনিট।দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। তারা কোথাও পরিচয় দিতে পারছেন না। নাজুক অবস্থা ঢাকা মহানগরের থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলোতেও। দুই শাখার প্রায় সবগুলো থানা-ওয়ার্ড কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। সম্মেলন না হওয়ার অগোছালো অবস্থায় রয়েছে সংগঠনের তৃণমূল।স্বেচ্ছাসেবক লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, করোনা সংকটের কারণে এবং মানবিক কাজে ব্যস্ত থাকায় এই কাজগুলো করতে বিলম্ব হয়েছে। এ মাসের মধ্যেই উত্তর-দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা এবং শিগগিরই থানা-ওয়ার্ড সম্মেলন শুরু হওয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা।জানতে চাইলে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বলেন, করোনার সময়ে আমরা মানবিক কাজে বেশি ছিলাম। এখন যেহেতু করোনা কমে গেছে, তাই আমরা সংগঠন গোছানোর কাজে জোর দিয়েছি। আমাদের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলাগুলোর সম্মেলন করছি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে বেশ কয়েকটা মিটিংও করেছি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ মোটামুটি শেষের দিকে। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারব।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-উত্তর শাখার সর্বশেষ সম্মেলন ২০১৯ সালের ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। ১৬ নভেম্বর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখায়ও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়।উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হন ইসহাক মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান নাঈম। দক্ষিণের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন কামরুল হাসান রিপন এবং সাধারণ সম্পাদক হন তারিক সাঈদ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর মেয়াদি এই কমিটি দুই বছরের বেশি সময় পার করলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। এতে সংগঠনের পদপ্রত্যাশী নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন বলেন, করোনাকালীন আমাদের মানবিক কাজে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা শুরু থেকেই নানা কর্মসূচির মাধ্যমে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছি। পাশাপাশি আমরা আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজও করেছি। এটা অনেকদূর এগিয়েও নিয়েছি। যে কোনো সময় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।তিনি আরও বলেন, আমরা সংগঠনের জন্য নিবেদিত এবং মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষিত নেতাদেরই কমিটিতে জায়গা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। মাদক, চাঁদাবাজ ও হাইব্রিডমুক্ত কমিটি করার চেষ্টা করেছি। যারা এ ধরনের কাজে যুক্ত তারা কোনোভাবেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এবং থানা-ওয়ার্ড কমিটিতেও জায়গা পাবে না।ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইসহাক মিয়া বলেন, আমরা আশা করছি এ মাসের (মার্চ) মধ্যেই আমাদের কমিটি দিয়ে দিতে পারব। ঢাকা মহানগর উত্তরের থানা-ওয়ার্ড কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পরই তো করোনা শুরু হয়। ফলে সেভাবে কমিটিগুলো নতুন করে করতে পারিনি। আগের করা কমিটি দিয়েই এখনো চলছে। এখন করোনা যেহেতু কমে গেছে, আশা করছি খুব শিগগিরই থানা-ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনের কাজও শুরু করতে পারব।এদিকে করোনার শুরু থেকেই নানা কর্মসূচি নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে ছিল স্বেচ্ছাসেবক লীগ। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকলেও সাবেক ছাত্র নেতা ও পদপ্রত্যাশী নেতাদের নিয়ে দুই অংশের শীর্ষ নেতারা নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। শুরু থেকেই জনগণকে সচেতন করা, করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী বিতরণ, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু, দুস্থদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল সংগঠনটি। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনসহ অন্যরা ব্যক্তিগত উদ্যোগেও নানাভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। দক্ষিণে পদপ্রত্যাশী নেতা বেশি হওয়ায় কমিটি চূড়ান্ত করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঢাকা মহানগরের এই দুই শাখা কমিটি ১০১ সদস্যবিশিষ্ট করে।কিন্তু পদপ্রত্যাশী নেতার সংখ্যা এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। যাদের বেশিরভাগই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং পদে আসার যোগ্য। এছাড়া ক্যাসিনোকাণ্ডে ঢাকা মহানগর যুবলীগের বড় ধাক্কা লাগার পর সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকেই এখন স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হতে চান।এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের অধীনে ২৪টি থানা এবং ৫৪টা ওয়ার্ড রয়েছে। এবং দক্ষিণের অধীনে ২৫টি থানা এবং ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। এগুলোর প্রায় সবগুলোর কমিটিরই মেয়াদোত্তীর্ণ। এতে ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়েও নেতৃত্বের ফাটল দেখা দিয়েছে।দীর্ঘদিন নতুন নেতৃত্ব না আসায় এসব থানা-ওয়ার্ডগুলোতে নতুন নেতৃত্ব আসতে পারছে না। অনেকেই আবার দলের দুঃসময়ে কর্মী ও ত্যাগীদের বাদ দিয়ে নতুন বলয়কে সংগঠনে ভেড়াতে চাচ্ছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

Top