৬-১৮ বছর বয়সী সোয়া তিন কোটি নতুন মুখের তথ্য যুক্ত হবে - Alokitobarta
আজ : বৃহস্পতিবার, ২০শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৬-১৮ বছর বয়সী সোয়া তিন কোটি নতুন মুখের তথ্য যুক্ত হবে


আলোকিত বার্তা:স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে ১৮ বছরের কম অথচ ৬ বছরের বেশি বয়সী এমন বাংলাদেশি নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে।দেয়া হবে জাতীয় পরিচয়পত্র। এসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে তাদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার করা হবে। ইসি সচিবালয় মনে করছে,এ প্রক্রিয়ায় দেশের সোয়া তিন কোটি নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ হবে। প্রথম ধাপে ৬৪টি জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দ্বিতীয় ধাপে শহর এলাকার ওয়ার্ড পর্যায়ে ও গ্রামের ইউনিয়ন পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।এর মধ্য দিয়ে দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ নাগরিকের তথ্য একই ভাণ্ডারে সংরক্ষিত থাকবে। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান,ইতিমধ্যে কমিশন ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে ওই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এনে ৬ বছর বয়সীদের তথ্য সংগ্রহের দিকে যাচ্ছে। এতে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ৬ বছর পূর্ণ হবে তাদের তথ্য নিবন্ধনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। বিষয়টি শিগগিরই অনুমোদনের জন্য কমিশন সভায় তোলার কথা রয়েছে।

এছাড়া ৬ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সীদের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ হলে শূন্য থেকে ৬ বছর পর্যন্ত শিশুদের তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও তারা জানান। বছরজুড়েই এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এটি সফল হলে দেশের সব নাগরিকের তথ্য একই ভাণ্ডারে চলে আসবে। সবারই তখন একটি নির্দিষ্ট পরিচিতি নম্বর থাকবে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে ১৫ বছর পর্যন্ত নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ভোটার ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, যেসব নাগরিকের ১৮ বছর বা এর বেশি তাদের তথ্য আমাদের তথ্য ভাণ্ডারে রয়েছে। এবার ১৮ বছরের কম কিন্তু ১০ বছরের বেশি এমন নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৬ বছরের বেশি বয়সীদের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

তিনি বলেন, ১৮ বছরের কম বয়সীদের তথ্য সংগ্রহ করা হলে এবং সরকার চাইলে তাদেরকেও জাতীয় পরিচয়পত্র দেব। তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করব। এতে নাগরিকদের নাম, বাবা-মায়ের নাম ও অন্য তথ্যে ত্রুটি থাকবে না। আর যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায় না তাদের তথ্য ভিন্ন ভাবে সংগ্রহ করব।ইসির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত ৬ বছর বয়সে শিশুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে থাকে। তাদেরকে টার্গেট করে এ কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। এর নাম দেয়া হচ্ছে ‘৬+ নাগরিক নিবন্ধন কর্মসূচি’। পুরো কার্যক্রম চালাতে সময় লাগবে চার বছর। এতে শিক্ষকদের তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে রাখা হবে।

তারা আরও বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (সংশোধন) আইন, ২০১৩ এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী সব বয়সী নাগরিকের পরিচয় নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া ইসির ওপর ন্যস্ত। নতুন এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা গেলে ৬ বছর বয়সের বেশি সব নাগরিককে একটি ইউনিক নম্বর দেয়া (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর), বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নাগরিক সেবা প্রদান বা গ্রহণ এবং ব্যক্তি শনাক্তকরণে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।খসড়া প্রস্তাবে দেখা গেছে, ৬-১৮ বছর বয়সীদের তথ্য সংগ্রহে ইসির কাছে চারটি প্রস্তাব তুলে ধরতে যাচ্ছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। এর অন্যতম হচ্ছে- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ, দশ আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশ নেয়া এবং ঝরে পড়াদের জন্য ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক কেন্দ্র স্থাপন করে নিবন্ধন করা। নিবন্ধিত সব নাগরিককে বায়োমেট্রিক (আঙ্গুলের ছাপ) ম্যাচিংসাপেক্ষে জরুরি ভিত্তিতে লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া।

নিবন্ধন পদ্ধতি সম্পর্কে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে পাইলট কার্যক্রম নেয়া হবে। সেটি সফল হলে ৬৪টি জেলার ৬৪টি থানায় একযোগে নিবন্ধন কার্যক্রম চালানো হবে।পাইলট কার্যক্রমের বিষয়ে এতে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত আছে এমন ১২টি বিদ্যালয় বাছাই করে সেখানেই তাদের নিবন্ধন করা হবে। একই প্রক্রিয়ায় ওই বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড বা থানার অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ঝরে পড়া শিশুদের তথ্য সংগ্রহ করতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে কার্যক্রম চালানো হবে।

পাইলট কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর সারা দেশে এ কার্যক্রম চালানো হবে। তখন প্রথম পর্যায়ে ৬৪ জেলার ৬৪টি উপজেলা বা থানায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। আর যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায় না তাদের তথ্য সংগ্রহ করতে ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন পর্যায়ে কার্যক্রম চালানো হবে। এভাবে ধারাবাহিক সব উপজেলা ও থানায় এ কার্যক্রম চালানো হবে।এতে আরও বলা হয়,এরপর যারা বাদ যাবে তারা সারা বছর উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে তথ্য নিবন্ধন করতে পারবে। নিবন্ধনের সময়ে জন্মসনদ,প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ৫ম শ্রেণী/এবতেদায়ি সমাপনী সনদ অথবা ৮ম শ্রেণীর সনদ এবং বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা নেয়া হবে। আর যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায় না তাদের নিবন্ধিত হতে জন্মসনদ ও বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে।তথ্য সংগ্রহে রোহিঙ্গা শিশুরা যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা ও ভারতীয় নাগরিক অধ্যুষিত উপজেলাগুলোকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করা যেতে পারে। ওইসব এলাকার জন্য বিশেষ ফরম ও বিশেষ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। ওই কমিটি যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিবন্ধন করবে।

Top