প্রত্নসম্পদ বিনষ্ট করলে ১০ বছর জেল-জরিমানা
আলোকিত বার্তা:প্রায় ৫৮ বছরের পুরোনো আইন রোহিত করে আসছে ‘প্রত্নসম্পদ আইন-২০২১’। এতে প্রত্নসম্পদকে ‘অমূল্য’ আখ্যা দিয়ে এর ক্ষতিসাধন, ধ্বংস, ভাঙা, বিনষ্ট, পরিবর্তন করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। প্রত্নসম্পদ রক্ষায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অধিযাচন সাপেক্ষে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে।
পুরাতন আইনের সংশোধন করে এতে পুরাকীর্তির ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধের বিধান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে পুরাকীর্তির অনুকৃতির ব্যবসার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রত্নসম্পদের পাচার রোধে সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো প্রত্নসম্পদ প্রদর্শনী ও গবেষণার স্বার্থে পরীক্ষার জন্য দেশের বাইরে প্রেরণ করা যাবে না। এ বিধান অমান্যকারী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত হলেও সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা দণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রত্নসম্পদ আইন-২০২১ বর্তমানে জনপ্রশসান মন্ত্রণালয়ের সংস্কার ও গবেষণা অনুবিভাগের অধীনে ‘বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষ’-এ প্রমিতকরণের জন্য রয়েছে। এ আইনের নতুনভাবে সংযোজিত হয়েছে আরও বেশ কয়েকটি বিষয়। এতে ‘প্রাচীন’ অর্থে স্থাবর/অস্থাবর শব্দযোগে প্রত্নসম্পদের সময়সীমার ক্ষেত্রে ১০০ বছরের পূর্ববর্তী যে কোনো সময়ের বা সেই সময়ের সঙ্গে সম্পর্কিতের উল্লেখ আছে। আরও নতুন সংযুক্তিতে বলা হয়েছে, সেই সময়সীমার আওতাভুক্ত না হলেও বিশেষ স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন (সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিল্পকলা সম্পর্কিত) সাংস্কৃতিক স্থাপনা বা প্রত্নবস্তু প্রাচীন হিসাবে বিবেচিত হবে।
প্রত্নসম্পদ রক্ষায় এর সীমানা ও তার আশপাশের বলয় তৈরির আন্তর্জাতিক নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এটি সঠিক পদ্ধতিতে নির্ণয় না করতে পারাসহ নানা কারণে হারিয়ে গেছে অনেক ঐতিহাসিক স্থান। হয়েছে বেদখল, হুমকিতে আছে অনেক প্রত্নস্থান। নতুন আইনে স্থাবর প্রত্নসম্পদের সর্বোচ্চ সুরক্ষিত এলাকা বা প্রপাটি জোন ও বিশেষ সুরক্ষিত এলাকা বা বাফার জোন সুনির্দিষ্ট থাকবে। এই দুটি এলাকার সীমারেখা/পরিমাণ নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হবে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে সেই প্রত্নসম্পদের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট ও অবস্থান বিবেচনায় এ দুধরনের এলাকার পরিসীমার হ্রাস বা বৃদ্ধি বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপদেষ্টা কমিটি সুপারিশ করতে পারবে। বিশেষ সুরক্ষিত এলাকায় কোনো বহুতল ভবন নির্মাণ, ইটভাটা, কলকারখানা স্থাপন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, রাস্তা নির্মাণ করা যাবে না। এছাড়াও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অনুমতি ব্যতীত কোনো খনন করা যাবে না। অন্যদিকে সর্বোচ্চ সুরক্ষিত এলাকার বাইরের পার্শ্ববর্তী অংশের চতুর্দিকে ৫০০ মিটারের মধ্যে সরকারি বা বেসরকারিভাবে যদি কোনো ইটভাটা ও পরিবেশ দূষণকারী কোনো স্থাপনা বা কলকারখানা নির্মাণে প্রত্নস্থল সুরক্ষায় মহাপরিচালকের অনুমতি নিতে হবে।
আইনের খসড়ার বলা হয়েছে, দেশেপ্রাপ্ত ও জাদুঘরে সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ বা প্রত্নবস্তুর বাজার মূল্য নির্ধারণ করা যাবে না। এগুলো অমূল্য সম্পদ হিসাবে পরিগণিত হবে। কিন্তু এতে শর্ত দিয়ে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রত্নসম্পদ মালিকের ক্ষতি পূরণের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ মূল্য নির্ধারণ করা যাবে।
ব্যক্তিগত বা সাংগঠননিক পর্যায়ে কেউ প্রত্নসম্পদ ক্রয়-বিক্রয় বা সংগ্রহ করতে পারবেন না। তবে সরকারি মালিকানাধীন অথবা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন জাদুঘর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে অবহিত করে প্রত্নসম্পদ সংগ্রহ করতে পারবে। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত অথবা অন্য কোনো বেআইনি নয় এমন অন্য কোনো সূত্র থেকে প্রাপ্ত প্রত্নসম্পদ কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে থাকলে সেসব সম্পদের প্রমাণাদি অধিদপ্তরকে দিতে হবে। সেগুলো সংগ্রহে রাখা যাবে কিন্তু হস্তান্তর করা যাবে না। কোনো অস্থাবর প্রত্নসম্পদ বা প্রত্নবস্তু বা প্রত্নসম্পদের অংশবিশেষ সরকারের অনুমতি ছাড়া বিদেশে প্রেরণ করা যাবে না। এর ব্যত্যয় শুল্ক আইনের আওতায় চোরাচালান হিসাবে গণ্য হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি ও অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা প্রত্নস্থানে উৎখনন করতে পারবেন না।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আতাউর রহমান বলেন, আমরা একটি যুগোপযোগী আইন করার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত দুবার কেবিনেটে মিটিং হয়েছে। খসড়ার ওপর মতামত প্রদানসংক্রান্ত কমিটি কিছু সুপারিশ ও মতামত দিয়েছেন। সেগুলো ঠিক করে আমরা বর্তমানে এই আইনটির খসড়া বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষে প্রমিতকরণের জন্য পাঠিয়েছি। আমরা তাদেরকে তাগাদা দিয়েছি। খুব শিগগিরই আমরা সেখানে থেকে পাওয়ার পর কেবিনেটে পাঠাব। এই আইনগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের ডিসপোজাল করতেই হবে। আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই এটি আইন আকারে আসবে।