একুশের প্রস্তুতির মধ্যেই জোরালো হয়ে ওঠে রাজবন্দিদের মুক্তি দাবি - Alokitobarta
আজ : রবিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একুশের প্রস্তুতির মধ্যেই জোরালো হয়ে ওঠে রাজবন্দিদের মুক্তি দাবি


আলোকিত বার্তা:একুশের প্রস্তুতির মধ্যেই জোরালো হয়ে ওঠে রাজবন্দিদের মুক্তি দাবি। জাতীয়তাবাদী অনেক নেতা তখন জেলে বন্দি। তাদের মুক্তির দাবির সঙ্গে ভাষার দাবি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।একুশের দিনলিপি’ গ্রন্থে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক লিখেছেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২। রাজনীতিমনস্ক ছাত্রদের ব্যস্ততা একুশের কর্মসূচি নিয়ে। ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রাবাসে চলছে একুশের কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি। এর দুটো দিক- যেমন মানসিক, তেমন কর্মতৎপরতায়।প্রথম দিকটি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, যার ওপর নির্ভর করে যে কোনো সংগ্রামের বা আন্দোলনের সফলতা, ব্যর্থতা। সে প্রস্তুতি যে কোনো প্রকার কর্মে বা ত্যাগে মানসিক দৃঢ়তা জোগায়। এ পর্যায়ে একুশের আন্দোলন নিয়ে তেমন কোনো অঘটনের সংকেত না দিলেও ভাসানীর সতর্কতামূলক কথা, আশঙ্কার কথা বারবার মনে হচ্ছিল।তিনি আরও লেখেন, সমআদর্শের সহপাঠী বন্ধু সালামকে সে কথা বলতেই সে হেসে ওঠে। আর কর্মতৎপরতা নতুন কী-ই বা করার আছে। সভা, সমাবেশ, মিছিল-সবই তো চলছে। পতাকা দিবসও পালিত হলো সফলভাবে। অর্থ সংগ্রহ, তা-ও একেবারে কম নয়। পোস্টার লেখার দায়িত্ব জনাকয়েকের দক্ষ হাতে। ইশতেহার ছাপা, প্রেসে যাওয়া, বিতরণ, পত্রিকা অফিসে যাওয়া ইত্যাদি। বিশেষ বিশেষ ছাত্রাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ মানেই তো বন্ধুদের সঙ্গে একই বিষয় নিয়ে কথা বলা।

আহমদ রফিক তার গ্রন্থে লেখেন, অন্যদিকে নুরুল আমীন ও তার প্রশাসন কি তাদের হাত-পা গুটিয়ে চুপচাপ বসেছিল? না, ওরাও নিশ্চয় সবরকম প্রস্তুতি নিচ্ছিল যাতে একুশের কর্মসূচি ভণ্ডুল করে দেয়া যায়। সেসব প্রক্রিয়া কী, তা ছাত্রদের জানা ছিল না। তবে কারও কারও আশঙ্কা ছিল- কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে, যা মোটেও ভালো কিছু নয়।এ সময় একুশের পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদী বিষয় ছিল রাজবন্দিদের মুক্তি। কারণ বিভিন্ন জেলে বিনা বিচারে আটক রাজবন্দিরা অসহনীয় কষ্ট ভোগ করছিলেন। তাদের সিংহভাগ কমিউনিস্ট পার্টি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী। তাদের ওপর চলেছে নির্মম অত্যাচার। প্রমাণ- রাজশাহী জেলে বন্দি খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট রাজবন্দিদের ওপর গুলি, সাতজনের মৃত্যু, অনেক আহত হওয়া এবং ইলা মিত্রের ওপর দানবিক অত্যাচার।এদের হয়ে কথা বলার কেউ ছিল না। প্রধান কারণ পাকিস্তান নিয়ে অন্ধ উন্মাদনা। তাছাড়া এদের অধিকাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। ভাষা আন্দোলনেই প্রথম উচ্চারিত স্লোগান- ‘রাজবন্দিদের মুক্তি চাই’। তবে তা বিশেষভাবে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পৌঁছে। ইতোমধ্যে কিছুসংখ্যক জাতীয়তাবাদী নেতাও জেলের নিয়মিত বাসিন্দা। আর সেজন্যই বায়ান্নতে এসে রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি প্রকট হয়ে ওঠে।

Top