খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে গবেষণা এবং অঞ্চলভিত্তিক ‘জোন ম্যাপ’ প্রণয়নে গুরুত্বারোপ - Alokitobarta
আজ : রবিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে গবেষণা এবং অঞ্চলভিত্তিক ‘জোন ম্যাপ’ প্রণয়নে গুরুত্বারোপ


আলোকিত বার্তা:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে গবেষণা এবং অঞ্চলভিত্তিক ‘জোন ম্যাপ’ প্রণয়নে গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, মাটির উর্বরতা এবং পরিবেশ বিবেচনা করে যে ফসল যেখানে ভালো উৎপন্ন হয় সেখানেই তার চাষাবাদ করতে হবে। তিনি বলেন, “অল্প খরচে অধিকমাত্রায় ফসল উৎপাদন কিভাবে করতে পারি সেটা বিবেচনায় এনে মাটির উর্বরতা এবং পরিবেশ বিবেচনা করে সারা দেশের এলাকাভিত্তিক একটি ‘জোন ম্যাপ’ তৈরি করা দরকার।তিনি এ সময় সরকারি চাকুরে বিজ্ঞানীদের চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে তাদের বিশেষ প্রণোদনার আওতায় আনা যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে কৃষিক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি অর্জনে প্রকাশিত ‘১শ’ কৃষি প্রযুক্তি এটলাস’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।শেখ হাসিনা কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞানীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের দেশের কৃষিপণ্য যাতে মানসম্পন্ন করা যায় তার জন্য আরও পরীক্ষাগার করা দরকার। অঞ্চলভিত্তিক পরীক্ষাগারও নির্মাণ প্রয়োজন। দেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর বলেই তার সরকার কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পণ্য উৎপাদনের মূলে থাকতে হবে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো এবং দেশ-বিদেশে বাজার সৃষ্টি ও রপ্তানি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষিভিত্তিক শিল্প আমরা গড়ে তুলতে চাই এবং সেটাই আমরা করব। এ বিষয়েও আমাদের গবেষকদের আমি সহযোগিতা চাই।’ তিনি বলেন, ‘একদিনে গবেষণা শেষ হয়ে যায় না। দীর্ঘদিন গবেষণা করতে হয়। তবে, চাকরির বয়স নির্দিষ্ট আছে। কিন্তু গবেষণায় সম্পৃক্ত সরকারি চাকুরেদের জন্য আমি একটা কথাই বারবার বলেছি, এ গবেষকদের কিভাবে আমরা প্রণোদনা দিতে পারি যাতে গবেষণার ফসল তারা হাতে পাওয়া পর্যন্ত থাকতে পারেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার একবার উদ্যোগ নিলেও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই এ সুযোগটা নিতে চাওয়ায় সেটা আর সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন- অফিসের পিয়ন, আরদালি, দারোয়ান থেকে শুরু করে কেউ আর বাদ যান না। এটাতো হয় না। এটাই আমাদের দেশে সমস্যা। কাজেই গবেষণায় যারা সম্পৃক্ত তাদের জন্য এটা কিভাবে করা যেতে পারে?শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বয়সসীমা বৃদ্ধি করায় সেখানে আর সমস্যা হচ্ছে না। কাজেই, আমরা ইনস্টিটিউটগুলোতে কিভাবে এ প্রণোদনাটা দিতে পারি। সেই পরামর্শটা আপনাদের কাছ থেকে চাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য তাদের সঙ্গে একটি সরকারি মতবিনিময়ের ইচ্ছা আমার রয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। সভাপতিত্ব করেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাউল ইসলাম স্বাগত বক্তৃতা করেন। আরও বক্তৃতা করেন বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার। সফল কৃষক রফিকুল ইসলাম নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।
দেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ধান, পাট, ইক্ষু, চা, রেশম, তুলা, বনজ সম্পদ এবং মৎস্য সম্পদ থেকে নির্বাচিত ১শ’টি প্রযুক্তি এটলাসে যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, রয়েছে প্রযুক্তিগুলোর প্রয়োগে বেশ কিছু সাফল্যের গল্প। যা হতে পারে কৃষি উন্নয়নে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। দেশ-বিদেশের পাঠকের সুবিধার্থে এই এটলাসে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিও রাখা হয়েছে। বিএআরসি (বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল) প্রকাশিত এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্ভাবিত এই ‘১শ’ কৃষি প্রযুক্তি এটলাস’ আধুনিক কৃষি উন্নয়ন ও কৃষকদের জীবন মান উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকার বীজ সংরক্ষণে নরওয়ের সঙ্গে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা গবেষণাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেই।জাতির পিতার বক্তব্য- ‘আমার মাটি এত উর্বর যে এখানে একটা বীজ ফেললেই একটা গাছ হয়, ফল হয়। তবে, আমার দেশের মানুষ খাবারের কষ্ট পাবে কেনো’- এর উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে জন্য তিনি সব পদক্ষেপ নিতেন।লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধান উৎপাদনে বিজ্ঞানীদের সাফল্যের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। দেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হলেও বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহারের প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করে সারা দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তির মধ্যে ১শ’টি প্রযুক্তির আজকে যে এটলাস প্রকাশ করা হলো তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশীয় ফলগুলো বিদেশি বিভিন্ন ফলের চাইতে বেশি সুস্বাদু হওয়ায় এগুলোর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে আরও গবেষণার দরকার। তবে, এসব ফলের বিভিন্ন প্রজাতি উদ্ভাবনে অরিজিনালিটি যেন নষ্ট না হয় সেটাও দেখতে হবে।’ ‘কাজেই গবেষণা ছাড়া কোনো উপায় নেই, গবেষণা আমাদের করতে হবে,’ বলেন তিনি।কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান করে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উন্নয়ন বাজেটের ৫শ কোটি টাকার মধ্যে ১০১ কোটি টাকা কৃষি উন্নয়নে বরাদ্দ প্রদান করে স্বনির্ভরতা অর্জনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির পিতা।সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করেই তার সরকার দেশে প্রথমবারের মতো ‘কৃষি সম্প্রসারণ নীতি ১৯৯৬’ ও ‘কৃষি নীতি ১৯৯৯’, ‘জৈব কৃষি নীতি ২০১৬’, ‘জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮’ এবং ‘জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি ২০২০’ প্রণয়ন করেছে।

Top