বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৪০তম জাতীয় সম্মেলন : আগামীর নেতৃত্ব? - Alokitobarta
আজ : শনিবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৪০তম জাতীয় সম্মেলন : আগামীর নেতৃত্ব?


আহমেদ জালাল : আলোকে চিনে নেয় আমার অবাধ্য সাহস’ এই শ্লোগানকে ধারণ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৪০তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে কাউন্সিল অধিবেশন চলছে। ছাত্র ইউনিয়ন শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র কায়েম, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রকার শোষণ ও নিপীড়নের অবসান,সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল, সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র ও নয়া ঔপনিবেশিক শোষণের হাত থেকে মুক্তি এবং দেশে একটি সুখী-সুন্দর সমাজ কায়েমের লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্ন ও আপোসহীন লড়াই পরিচালনাকারী সংগঠন। এই সংগঠনের কে কে আসছেন আগামীর নেতৃত্বে?এ নিয়ে ছাত্ররাজনীতির অন্ধরমহলে নানা আলোচনায় আলোচিত হচ্ছে। কেমন হবে আগামীর নেতৃত্ব? এরকম নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বাম ঘরোনার রাজনীতিতে।শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের লড়াকু যোদ্ধা বরিশালে গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের উদীয়মান ছাত্রনেতা বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য সম্পা দাস কে এবারের কেন্দ্রীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখতে চায় বাম ঘরোনার নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। ২০ নভেম্বর শুক্রবার রাত সাড়ে ৮ টায় ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা সম্পা দাস বলেন, এখন পর্যন্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। সম্মেলন পরবর্তী কাউন্সিল অধিবেশন চলছে।

এরআগে ১৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্ধোধন হয়। জাতীয় সম্মলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন আন্দোলনত পাটকল শ্রমিক নওশের আলী সহ শ্রমিকবৃন্দ। উদ্বোধনী সমাবেশে পাটকল শ্রমিক মফেল কর্মকার বলেন,‘আমরা যখন চাকরি হারায়ে দিশেহারা, তখন আমাদের পাশে এসে দাঁড়াইসে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা।’ কমিটি গঠনে কাউন্সিল আয়োজন করা হয় রাজধানীর তোপখানা রোডে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মিলনায়তনে। উদ্বোধন শেষে গণসংগীত ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। সমাবেশে শেষে বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের করে ছাত্র ইউনিয়ন। র‍্যালিটি টিএসসি থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন দিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।এদিকে উদ্বোধনী সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেছেন, চারদিকে দুঃশাসন চেপে বসেছে। তিনি বলেছেন, তাঁর সংগঠন হামলা-মামলাকে ভয় পায় না। উদ্বোধনী সমাবেশে পাটকল শ্রমিক মফেল কর্মকার বলেন, ‘আমরা যখন চাকরি হারায়ে দিশেহারা, তখন আমাদের পাশে এসে দাঁড়াইসে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা।’ চা শ্রমিক নোসের আলি বলেন, চা শ্রমিকরা রাষ্ট্রের কাছে সবচেয়ে অবহেলিত মানুষ। তাদের ন্যায্য মজুরির যে লড়াই, তাতে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা সবসময় পাশে থেকেছে। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন কিছুদিন আগে আমরা যখন নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে লংমার্চ করলাম, সেখানেও বর্বর হামলা চালানো হলো। পাটকল শ্রমিকরা যখন তাদের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামলেন তখন তাদের ওপরও হামলা হলো, জেলে ঢোকানো হলো। আবার সময় এসেছে এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়ানোর।’ ১৭ অক্টোবর সকালে ‌‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে ফেনী শহরের প্রধান প্রধান সড়কে মিছিল করে লং মার্চে অংশ নেয়া নেতাকর্মীরা। ঢাকা থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ অভিমুখে রওনা হওয়া লং মার্চে সকালে হামলা হয় ফেনীতে।কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানান সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক মনীষী রায়। তিনি বলেন, করোনার সময়ে এবার সীমিত পরিসরে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধির কারণে সারা দেশ থেকে ছাত্র জমায়েত করা হয়নি।প্রসঙ্গত : মহান ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে ১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন। বর্তমানের বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা হয় এবং তা ছিল এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনের পরিণতি। এই প্রতিষ্ঠানের আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে এ দেশের ছাত্র আন্দোলনে সূচিত হয় দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবী ধারার। জন্মলগ্ন থেকেই ছাত্র ইউনিয়ন শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, প্রকৃত গণতন্ত্র কায়েম, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রকার শোষণ ও নিপীড়নের অবসান,সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল, সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র ও নয়া ঔপনিবেশিক শোষণের হাত থেকে মুক্তি এবং দেশে একটি সুখী-সুন্দর সমাজ কায়েমের লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্ন ও আপোসহীন লড়াই পরিচালনা করে আসছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে নিবেদিত আমাদের প্রতিষ্ঠান সর্বদাই ছাত্র-জনতার সুখ-দুঃখের সাথী।
————————
লেখক : নির্বাহী ও বার্তা প্রধান, ৭১’র মুখপত্র ‘ দৈনিক বিপ্লবী বাংলাদেশ’।
Email : ahmedjalalbsl@gmail.com

Top