স্বাস্থ্যকর্মীদের মাসিক থাকা-খাওয়ার ব্যয়ের হিসাবে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে - Alokitobarta
আজ : শনিবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বাস্থ্যকর্মীদের মাসিক থাকা-খাওয়ার ব্যয়ের হিসাবে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে


আলোকিত বার্তা:বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের মাসিক থাকা-খাওয়ার ব্যয়ের হিসাবে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করা হতে পারে- এমন আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রয় কমিটি আগের বিল সংশোধন করে নতুন বিল তৈরি করেছে।পরের বিলে ব্যয় ৭৯ লাখ ১৪ হাজার ৬০০ টাকা কম দেখানো হয়েছে। প্রথম বিলে এক মাসের মোট ব্যয় ৩ কোটি ২৬ লাখ ৬১ হাজার টাকা দেখানো হয়েছিল। সংশোধিত বিলে ২ কোটি ৪৭ লাখ ৪৬ হাজার ৪০০ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।জানা গেছে, চিকিৎসকদের জন্য নির্ধারিত হোটেল কক্ষের ভাড়া প্রথমে মাসিক ৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং নার্সদের জন্য ৩ হাজার ৭০০ টাকা দেখানো হয়। এছাড়া ডাবল রুমের ভাড়া ৪ হাজার ২০০ টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ওইসব হোটেলের ভাড়া ৩ হাজার এবং ডাবল রুমের ভাড়া ৩ হাজার ২০০ টাকায় নেমে এসেছে।নথি প্রস্তুত করার পর সম্পৃক্তরা জানতে পারেন, করোনো সংক্রান্ত অর্থ ছাড় করার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের অনুমোদন প্রয়োজন। ব্যয়ের এ অস্বাভাবিকতা দেখলে মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত হতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকে নতুন করে আবার ব্যয়ের হিসাব তৈরি করা হয়। ৯ আগস্ট ক্রয় কমিটির সদস্য সচিব স্বাক্ষর করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবার পাঠায়।সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি নিয়মানুযায়ী এই হিসাবে অসঙ্গতি হল- প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা এবং দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন না। প্রথম হিসাবে নার্সের হোটেল ভাড়া চিকিৎসদের চেয়ে বেশি দেখানো হয়। পরে অবশ্য সমপর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রশাসন এবং এ সংক্রান্ত ক্রয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, বিষয়টি কমিটির সদস্য সচিব দেখছেন। তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে ক্রয় কমিটির সদস্য সচিব ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জেনারেল ডা. জুলফিকার আহমেদ আমিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।বিএসএমএমইউয়ে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের মাসিক থাকা-খাওয়া বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ২৬ লাখ ৬১ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১২০ জন চিকিৎসকের থাকা-খাওয়া বাবদ ১ কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।এছাড়া ২০০ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের থাকা-খাওয়া বাবদ ১ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ৭০ জন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর থাকা-খাওয়া বাবদ মাসিক ৩৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ৩০ জুন এ সংক্রান্ত নথিতে স্বাক্ষর করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। এরপর ৭ জুলাই নথি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের দফতরে যায়।নথিতে দেখা যায়, বিএসএমএমইউ’র করোনা ইউনিটে দায়িত্বরত ১২০ জন চিকিৎসকের জন্য রাজধানীর প্লাটিনাম গার্ডেন হেটেলের ৪৫টি কক্ষ ভাড়া নেয়া হয়। প্রতিটি কক্ষের ভাড়া ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া একই ভাড়ায় আফটার হর্স রেসিডেন্স ও গ্রিনগুজ হোটেলে যথাক্রমে ৪০টি ও ২৬টি কক্ষ ভাড়া নেয়া হয়।অন্যদিকে, ২০০ নার্সের থাকার জন্য প্লাটিনাম রেসিডেন্সে ৩০টি, অ্যাঙ্করেজ হোটেলে ২০টি সিঙ্গেল রুম এবং ১০টি ডাবল মিলিয়ে ৩০টি, মারিনো হোটেলে ২১টি সিঙ্গেল ও ২০টি ডাবল মিলিয়ে ৪১টি, হোটেল মোমেনটোতে ১০টি সিঙ্গেল ও ১৫টি ডাবল মিলিয়ে ২৫টি এবং এয়ার ইন হোটেলে ২৫টি সিঙ্গেল রুম ভাড়া নেয়া হয়।নার্সদের জন্য নেয়া প্রতিটি সিঙ্গেল রুম ৩ হাজার ৭০০ টাকায় এবং ডাবল রুম ৪ হাজার ২০০ টাকায় ভাড়া নেয়া হয়। এছাড়া ৭০ জন স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য ফার্মগেট হোটেলে ৭০টি কক্ষ থাকা-খাওয়া ও ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ১ হাজার ৭০০ টাকা করে ভাড়া নেয়া হয়।

কিন্তু সংশোধিত নথিতে হোটেলের নামের পরিবর্তন এবং আগের তুলনায় ব্যয়ও বেশকিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়- করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের দ্রুততম সময়ে করোনা ইউনিট চালুর নির্দেশনা থাকায় ৭ জুলাই এটি চালু করা হয়।ফলে ৩ জুলাই কমিটি খোঁজখবর নিয়ে প্লাটিনাম গার্ডেনের ৪৫টি রুম, আফটার হর্স রেসিডেন্সের ৪০টি রুম ভ্যাট, ট্যাক্স যাতায়াত বাদে এবং খাবার বিল জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে চুক্তি করা হয়।এছাড়া প্লাটিনাম রেসিডেন্সের আটটি সিঙ্গেল রুম, ২৩টি ডাবল রুম, মারিনো হোটোলের ২১টি সিঙ্গেল রুম ও ২০টি ডাবল রুম ভ্যাট-ট্যাক্স ও যাতায়াত বাদে ভাড়া নেয়া হয়। প্রতিটি সিঙ্গেল রুম তিন হাজার টাকা এবং ডাবল রুম ৩ হাজার ২০০ টাকা।এছাড়া এই দুটি হোটেলে ভ্যাট-টাক্স ও খাবার বিল ৫০০ টাকা জনপ্রতি চুক্তি করা হয়। পাশাপাশি ফার্মগেট হোটেলের ৭১টি রুমে ভ্যাট-ট্যাক্স ও যাতায়াত বাদে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং খাবার বিল বাবদ জনপ্রতি ৫০০ টাকায় চুক্তি করা হয়।সেখানে আরও দেখা যায়, সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে তাৎক্ষণিকভাবে এই চুক্তির কোনো বিকল্প ছিল না। এর মধ্যে প্লাটিনাম গ্রান্ড, আফটার হর্স রেসিডেন্স, প্লাটিনাম রেসিডেন্স ও মারিনো হোটেল ৩ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই এবং ফার্মগেট হোটেল ৩ জুলাই থেকে চুক্তি করা হয়।সংশোধিত নথিতে দেখা যায়, কমিটি থাকা-খাওয়া, যাতায়াত ও ভ্যাট, টাক্সসহ হোটেল ভাড়া বাবদ সমন্বিত প্রস্তাব আহ্বানের মাধ্যমে সেবা ক্রয়ে পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৭৬(১) অনুযায়ী ডিপিএম’র সিডিএম অনুসরণ করা হয়েছে।এর পরিপ্রেক্ষিতে যাতায়াত, ভ্যাট-টাক্সসহ ওয়েস্ট পার্কের প্রতি সিঙ্গেল রুম ৩ হাজার টাকা এবং ডাবল রুম ৩ হাজার ২০০ টাকা। প্রিয়নিবাসের প্রতি সিঙ্গেল রুম ১ হাজার ৮০টাকা।প্লাটিনাম গ্রান্ড, আফটার হর্স রেসিডেন্স, এক্সিকিউটিভ ইননেসসেন্ট গার্ডেনিয়া, এসকট দ্য রেসিডেন্স, প্লাটিনাম রেসিডেন্ট এবং মারিনো হোটেলের সিঙ্গেল রুম ৩ হাজার টাকায় চুক্তি করা হয়।এছাড়া ভ্যাট-ট্যাক্স ও খাবার বিল ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। নথিতে কমিটি উল্লেখ করে- উক্ত দরসমূহ বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় ক্রয় কমিটি এবং মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে ১৭ জুলাই থেকে চুক্তি করা হয়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন,প্রথমে যথন মোটা অঙ্কের বিলের নথি জমা দেয়া হয়, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ এ সংক্রান্ত অসঙ্গতি উপাচার্যের নজরে আনেন।পরে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া সংশ্লিষ্ট কমিটিকে সব হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে পুনরয় নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন।সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন,ব্যয় বেশি হওয়ায় পরবর্তী সময়ে হোটেলগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ভাড়া কমানো হয়েছে।ইতোমধ্যে করোনা চিকিৎসায় দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক, সিনিয়র স্টাফ নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য থাকা ও খাওয়াসহ হোটেল ভাড়া সংক্রান্ত বিল অর্থ কমিটি অনুমোদন করেছে।

Top