সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভবিষ্যতেও থাকবে - Alokitobarta
আজ : শনিবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভবিষ্যতেও থাকবে


আলোকিত বার্তা:আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এ দেশে হাজার বছর ধরে ভাই-ভাইয়ের মতো ছিলাম, এখনও আছি, ভবিষ্যতেও থাকব।সম্প্রতি বিতর্কিত বৌদ্ধ ভিক্ষু শরনাংক থের কর্তৃক রাঙ্গু‌নিয়া‌সহ চট্টগ্রাম ও পার্বত‌্য চট্টগ্রামকে নি‌য়ে বৌদ্ধ রাজ‌্য বানা‌নোর ঘোষণাকে ঘিরে হওয়া পরিস্থিতি প্রশমে সকল ধর্মের নেতৃবৃন্দের সাথে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।শনিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মুসলিম, বৌদ্ধ, হিন্দুসহ সব ধর্মের মানুষের মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। লাল সূর্যখচিত সবুজ পতাকার জন্ম হয়েছে। আজকে আমরা মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান যেভাবে সুন্দর করে বসেছি, আমাদের বাংলাদেশও ঠিক এরকম সুন্দর। আমাদের রাঙ্গুনিয়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য আরও সুন্দর।তিনি বলেন,সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পকে চিরতরে বিদায় করার লক্ষ্যেই সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা পাকিস্তান থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম। তাই এই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যারা ছড়ায় তারা প্রকৃতপক্ষে মানবতা ও বাংলাদেশের শত্রু।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার বড়ুয়া, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন আলকাদেরী, রাঙ্গুনিয়া সংঘরাজ ভিক্ষু সমিতির সভাপতি ধর্মসেন মহাস্থবির, সাধারণ সম্পাদক সুমঙ্গল মহাথের, রাঙ্গুনিয়া বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি জ্ঞানবংশ মহাথের, সৈয়দবাড়ি ধর্মপ্রবর্তন বিহারের অধ্যক্ষ পরমানন্দ থের। হিন্দু ধর্মীয় পুরোহিত সুজন চক্রবর্তী, অসিম চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য আঞ্চলিক চার্জ সংঘের প্রধান পালক রেভারেন্ড সহখরীয় বৈরাগী, রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী আস্তানা শরীফের পীরজাদা মাওলানা গোলামুর রহমান আশরাফ শাহ, সরফভাটা মোয়াবিনুল উলুম মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আবুল বয়ান, উপজেলা আওয়ামী লেিগর উপদেষ্ঠা মাওলানা আইয়ুব নুরী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার প্রমুখ।মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন ধর্মের নেতৃবৃন্দ বলেন, যুগ যুগ ধরেই রাঙ্গুনিয়ায় সকল ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির সেতুবন্ধনে একসাথে বসবাস করে আসছে। ভবিষ্যতেও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে।ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। তার নেতৃত্বে আমরা কীভাবে অসাম্প্রদায়িকতাকে লালন করতে হয়, কীভাবে মুসলমান, হিন্দু , বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ভাই ভাইয়ের মতো মিলিত হয়ে চলতে হয়, সেই শিক্ষা আমরা পেয়েছি। আমাদের রাঙ্গুনিয়ার প্রতিটি গ্রামের চিত্র হচ্ছে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান একযোগে সুন্দরভাবে বসবাস করছে। আমার গ্রাম সুখবিলাসে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের পাশাপাশি চাকমা মারমারাও আছে। আমরা যেভাবে শতশত বছর ধরে একসাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বসবাস করছি, সেটি সমগ্র বাংলাদেশের জন্য উদাহরণ। তাই কোনো ব্যক্তি বিশেষ বা কোনো গোষ্ঠীর কারণে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালানো হয় দেশ এবং বিদেশ থেকে। যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয় তখন তারা ফেসবুক এবং ইউটিউবের আশ্রয় নেন। সেটির মাধ্যমে গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্ঠা করে। তাই এগুলোতে বেশি কান দেয়ার প্রয়োজন নেই। কেউ যদি সেরকম করে সেটি নিয়ে মাতামাতি করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা সবাই শতশত বছর ধরে ভাই ভাইয়ের মতো ছিলাম, এখনও আছি, ভবিষ্যতেও হাজার বছর ধরে থাকব।তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, আমাদের প্রথম পরিচয় হচ্ছে বাঙালি, আমাদের দ্বিতীয় পরিচয় কে হিন্দু, কে মুসলিম, কে বৌদ্ধ, কে খ্রিস্টান। এটিই হচ্ছে যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের সাথে যারা বিএনপি-জামায়াত করেন তাদের পার্থক্য। আমি ২০০৮ সালে যখন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, তখন আমার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিল স্বজন কুমার তালুকদার বড়ুয়া, ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রধান এজেন্ট ছিলেন। এটির কারণ হলো উনি হিন্দু নাকি বৌদ্ধ নাকি মুসলিম এটি আমার বিবেচনায় নেই।এটি বিবেচ্য বিষয়ও নয়। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে উনি আমার দল ও আমাদের নেত্রীর প্রতি আস্থাশীল ও অনুগত কি না।সকল ধর্মীয় নেতাদের প্রতি শান্তির জনপদ রাঙ্গুনিয়াকে আরও শান্তিময় ও প্রীতিময় করার অনুরোধ জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ফেসবুকে কে কী লিখল সেটা নিয়ে অন্যরা লেগে থাকব, এটাও হতে পারে না। আমাদের কাছে কে কোন ধর্মাবলম্বি সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। তাই সকলের কাছে অনুরোধ কোনো ব্যক্তির কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারে না এবং সেই লক্ষ্যে যেকোনো অশুভ শক্তির ব্যাপারে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যেন এই সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে।

Top