নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে জামায়াতে ইসলামীর সংস্কারপন্থীরা। - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে জামায়াতে ইসলামীর সংস্কারপন্থীরা।


আলোকিত বার্তা:আমার বাংলাদেশ পার্টি’(এবি পার্টি)নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর সংস্কারপন্থীরা।
সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান মনজুকে সদস্য সচিব করে শনিবার নতুন দলের ২২২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।এ দলের বেশিরভাগ সদস্য আইনজীবী,যারা জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করতেন।এছাড়া চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ারসহ নানা শ্রেণিপেশার নেতাও রয়েছেন।সংস্কারপন্থীদের নতুন দল গঠন ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামীতে ফের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে সন্দেহ আর অবিশ্বাস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন দল নিয়ে নানা মত তুলে ধরছেন জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা।গত বছরের এপ্রিলে জামায়াত থেকে বেরিয়ে আসা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের যে অংশটি ‘জন-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামের নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গঠন করেছিল, তাদের উদ্যোগেই নতুন দল এবি পার্টি। এই দলে আরও আছেন দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতে উপেক্ষিত নেতাকর্মীদের একটি অংশ।

এবি পার্টির কমিটিতে কৌশলগত কারণে জামায়াত থেকে পদত্যাগী নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক থাকেননি। তবে তিনি ‘পরামর্শক’ হিসেবে রয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এবি পার্টির সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মনজু যুগান্তরকে বলেন, ‘ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক একজন খ্যাতিমান আইনজীবী ও সজ্জন মানুষ।আমরা যখনই তার সাহায্য ও পরামর্শ চেয়েছি তিনি আমাদের যথার্থ পরামর্শ দিয়েছেন ও সহযোগিতা করছেন। আবদুর রাজ্জাক ছাড়াও দেশের সিনিয়র সিটিজেন ও বুদ্ধিজীবীসহ অনেকেই পরামর্শক হিসেবে আমাদের সঙ্গে আছেন।তাদের কেউ কেউ হয়তো কোনো না কোনো সময়ে আমাদের সরাসরি নেতৃত্বেও আসতে পারেন। সময়ের ব্যবধানে সেটা দেখা যাবে।’ এবি পার্টি কোনো জোটে যোগ দেবে কিনা? জবাবে মনজু বলেন, আপাতত কোনো জোটে যোগ দেয়ার বিষয়ে আমরা ভাবছি না।দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নতুন দল এবি পার্টির ঘোষণা দেয়া হয়। কমিটিতে মেজর (অব.) ডা. আবদুল ওহাব মিনার ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলামসহ ৭ জনকে যুগ্ম-আহ্বায়ক, ৯ জনকে সহকারী সদস্য সচিবও রাখা হয়েছে।

দল ঘোষণার সময় আহ্বায়ক সোলায়মান চৌধুরী বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সুবিচার এই তিন মূলনীতির ভিত্তিতে আমাদের দলীয় গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচি প্রণীত হয়েছে। দেশের যে কোনো নাগরিক আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশ গঠনে অবদান রাখতে পারেন।মুজিবুর রহমান মনজু বলেন,একাত্তর সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বিজয় আমাদের জাতীয় ঐক্যের অন্যতম পাটাতন।এবি পার্টি সেই পাটাতনকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে বদ্ধ পরিকর।আমাদের সঙ্গে যারা আছেন তারা বয়সে ও মননে সবাই তরুণ।আমরা এদেশকে নতুন করে পুনর্গঠনের ডাক দিচ্ছি।তিনি বলেন,আহ্বায়ক কমিটির দায়িত্ব হবে সব জেলায় কমিটি গঠন করা,দলের খসড়া গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করা এবং দ্রুততম সময়ে গণতান্ত্রিক ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় কনভেনশন করে দলের নেতৃত্ব নির্বাচন করা।

সংবাদ সম্মেলনে দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন মেজর (অব.) ডা. আবদুল ওহাব মিনার।তিনি বলেন,ধর্ম,বর্ণ,জাতি নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের মৌলিক ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ‘কল্যাণ রাষ্ট্রে উন্নীত করা’ হবে এ দলের উদ্দেশ্য।এবি পার্টির ৭ দফা কর্মসূচিতে বলা হয়,জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা,গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, প্রেরণা সৃষ্টি, উন্নয়ন ও গবেষণা, নেতৃত্ব তৈরি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার এবং কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে এ দল। আর ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ থাকবে পার্টির ‘রিসার্চ উইং’ হিসেবে।সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমদ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ।সূত্রমতে, জামায়াতে ইসলামীতে সংস্কার নিয়ে ১৯৭৯ সাল থেকে বিরোধ চলে আসছে। ১৯৭৭ সালে ধর্মভিত্তিক দল গঠনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর জামায়াত নেতারা মাওলানা আবদুর রহিমের নেতৃত্বে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ গঠন করেন।স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বনকারী জামায়াত নেতা গোলাম আযম ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে জামায়াতে ইসলামীকে পুনরুজ্জীবিত করেন; দলচ্যুত হন মাওলানা আবদুর রহিম।এরপর সংস্কারের দাবিতে ১৯৮১ সালে ছাত্র শিবিরে এবং ২০০৭ সালে জামায়াতে ফের অস্থিরতা দেখা দেয়। ২০১০ সালেও জামায়াতের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে সংস্কারে দাবি উঠেছিল। প্রতিবারই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত নেতাদের শক্ত হাতে দমন করে।

তবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গোলাম আযম,মতিউর রহমান নিজামী,দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী,আলী আহসান মো.মুজাহিদসহ আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা দণ্ডিত হলে জামায়াত ব্যাপক চাপে পড়ে।এর মধ্যে একটি অংশ দলে সংস্কারের দাবি তোলে।গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জামায়াতে ইসলামীর সংস্কার এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা না চাওয়ার প্রশ্নে আবদুর রাজ্জাক দল থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি জামায়াতের জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন।তখন রাজ্জাক নতুন দল না করা এবং সক্রিয় রাজনীতিতে না থাকার কথা বলেছিলেন।যদিও তার শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থকদের অনুরোধে তিনি মত পরিবর্তন করেন।তখন সংস্কারপন্থীরা আরও জোর পায়।তখন রাজ্জাকের অবস্থানকে সমর্থন করে জামায়াত থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান মনজু।তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ছিলেন।পরে তাকে সমন্বয়ক করে ‘জন-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’গঠন করা হয়। আর সাবেক সচিব সোলায়মান চৌধুরী এক সময় ছিলেন জামায়াতের মজলিশে শূরা সদস্য এবং জাতীয় পেশাজীবী ফোরামের সভাপতি।

গত বছর ডিসেম্বরে তিনি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করে ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ এর সঙ্গে যুক্ত হন। তারপর তারা বিকল্প দল গঠনের উদ্যোগ নেন।এবি পার্টির ঘোষণার পর জামায়াতের তরুণ নেতা যারা ইসলামী ছাত্র শিবির করতেন তাদের অনেককে অবিশ্বাসের চোখে দেখছেন শীর্ষ নেতারা। তাদের সন্দেহ, তরুণ নেতাদের সঙ্গে সংস্কারপন্থীদের যোগাযোগ রয়েছে।ভবিষ্যতে তারা সংস্কারপন্থীদের দল এবি পার্টিতে যেতে পারেন। এ নিয়ে দলটির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।তবে নাম না প্রকাশের শর্তে জামায়াতের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, একটু চাপ রয়েছে-এটা ঠিক। তবে আমরা বিশ্বাস করি, জামায়াতে ইসলামী থেকে কাউকেই ওই নতুন দলে নিতে পারবে না।যারা নতুন দল করেছে তারা জামায়াতের কোনো পর্যায়েরই নেতা নন, তারা বহিষ্কৃত ও অনেক আগে পদত্যাগ করেছেন।

Top