করোনা ভাইরাস সম্পর্কে দেশবাসীকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।কারণ এটি সংক্রামক। কখন সংক্রামিত হবে তা বোঝা খুব কষ্টকর।
আলোকিত বার্তা:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে দেশবাসীকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এটি সংক্রামক। কখন সংক্রামিত হবে তা বোঝা খুব কষ্টকর। এটাই হচ্ছে এ ভাইরাস নিয়ে সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়।রোববার (১২ এপ্রিল) সকাল ১০টায় গণভবন থেকে বরিশাল এবং খুলনা বিভাগের সব জেলার জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের শুরুতেই এ কথা বলেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন,অদৃশ্য শক্তির মত করোনা ভাইরাস আমাদের ভেতরে হানা দিয়েছে ।এ ভাইরাস শুধু একটি দেশ নয়, পৃথিবীর প্রতিটি দেশের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছে। এক লাখ তিন হাজারের মতো মানুষ ইতিমধ্যে মারা গেছেন এবং লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন উন্নত দেশ এটা মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। সেসব দেশে হাজার হাজার লোক মারা যাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারণে যারা মারা গেছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন,আমরা সারাদেশে এ ভাইরাস মোকাবিলায় বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছি।এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু খুব কম থাকলেও এটা মানুষকে ভোগায় বেশি।এ ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য সব কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছি। সবাই ঘরে থাকুন।বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। জানি মানুষের কষ্ট হবে কিন্তু আমরা করণীয় করে যাচ্ছি।এজন্য আমরা ২৩টি নির্দেশনা তৈরি করেছে।সর্দি কাশি হলে হাসপাতালে যাওয়ার দরকার নেই।সর্দি কাশি হলে প্রচুর গরম পানি খেতে হবে। সবাইকে ঘরে থাকতে হবে।শেখ হাসিনা বলেন,হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশন খোলা হয়েছে।রোগীর জন্য হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড করে দিয়েছি। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে।তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সংবাদমাধ্যম অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে সচেতনতামূলক জিনিস প্রচার করছে।জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের গ্রামের বাড়ি মেহেরপুরে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নিয়েছিল এই মেহেরপুরেই। আগামী ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস। করোনাভাইরাসের কারণে ঢাকার বাইরে যাওয়ার নিষেধ রয়েছে। এই অবস্থায় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মেহেরপুরে যেতে চাইলে করোনার কারণে ঢাকার বাইরে যাওয়া যাবে না বিধায় তাকে যেতে দেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস, সবসময় আমরা উদযাপন করি, আসি। এবার তো আমরা সেভাবে জনসমাগম করতে পারব না। যেটুকু সীমিত আকারে ঘরে বসে করা যায়, সেটুকু করবেন, জনসমাগম যেন না হয়। ইনশাল্লাহ, এ অবস্থা চলে গেলে আমরা ভালোভাবে করতে পারব। কারণ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার প্রথম শপথ নিয়েছিল এই মেহেরপুরে-এ কথা আমাদের সবসময় স্মরণ রাখতে হবে।
তিনি বলেন,আমাদের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী কিন্তু যাবার জন্য তৈরি হয়েছিল।আমি বলেছি যে, জেলায় (মেহেরপুর) ঢুকতে পারবা না। কারণ ঢাকায় তো করোনাভাইরাস আছে। এক্ষেত্রে কোনো মানুষ (মেহেরপুরে) ঢুকুক, আমি চাই নাই। তাকে আমি যেতে দিই নাই। আমি বলেছি, তুমি এখানে বসে টেলিফোনে…। ঢাকায় যারা রয়েছে, আমি তাদেরকে বলেছি, ঢাকায়ই থাকতে হবে।কেউ এখান থেকে নিজের জায়গায় যেতে পারবে না।সেজন্য সে যায় নাই।করোনাভাইরাসে কৃষি খাতের ক্ষতি মোকাবিলায় কৃষকের জন্য ৫০০০ কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ তহবিল থেকে সহজ শর্তে মাত্র ৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবেন কৃষক।কৃষককে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষিখাতে চলতি মূলধন সরবরাহে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকা নতুন একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করবে। এখান থেকে শুধু কৃষিখাতে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, আরেকটি উদ্যোগ নিয়েছি সেটা চলমান রয়েছে। সেটা হলো কেউ পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ মসলা জাতীয় কিছু উৎপাদন করলে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়। এটা আমরা আগেই চালু করেছি এটা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আমরা যে নতুন স্কিমটা নিচ্ছি ৫০০০ কোটি টাকার একটা প্রণোদনা। এখান থেকে আমরা মাত্র ৫ শতাংশ সুদে কৃষকদের ঋণ বরাদ্দ দেব। এই তহবিল থেকে গ্রাম অঞ্চলে যারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষী; তাদের জন্য ঋণ দেওয়া হবে। কৃষি, ফুল, ফল, মৎস্য, পোল্ট্রি, ডেইরি ফার্ম ইত্যাদি সকল কর্মকাণ্ডে এখান থেকে সহায়তা পাবেন।তিনি বলেন, কোনো মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করছি। কৃষি মানে গ্রাম অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষী উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের ক্ষতি মোকাবিলায় আমরা বেশ কিছু প্রণোদনা দিয়েছি। শিল্প-কৃষি সব ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের অনেক উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় কথা মানুষ বাঁচানো। মানুষের জীবনযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া। সেই জন্য আমাদের দেশের কৃষক শ্রমিক দিনমজুর থেকে শুরু করে কামার-কুমার তাঁতি জেলে সবার জন্য সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত।তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শিল্প খাতের জন্য ৭২ হাজার কোটি টাকা বেশি কয়েকটা প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি নিয়েছি। কিছুদিনের মধ্যে বড় ফসল উঠবে। কৃষক যেন সঠিক মূল্য পায় বিষয়টি লক্ষ্য রেখে খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের তুলনায় বেশি ধান চাল ক্রয় করবে কিনবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধান কাটা ও মাড়াই যান্ত্রিক করণের জন্য ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়কে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। এছাড়া বীজ, চারা রোপণের জন্য আরো দেড়শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। পাশাপাশি সারের ভর্তুকি হিসেবে আগামী অর্থবছরে ৯ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হবে। যাতে করে কৃষকের উৎপাদন ব্যাহত না হয়।করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বব্যাপী মারাত্মক খাদ্য সংকট দেখা দেবে আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি নিজেরা উৎপাদন ঠিক রাখি তাহলে এই সঙ্কট মোকাবিলা করতে পারব। এজন্য আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে; যাতে আমার দেশের মানুষ কষ্ট না পায়। পাশাপাশি আমরা অনেক দেশকে সহযোগিতা করতে পারি, রফতানি করতে পারি সেই বিষয়টা মাথায় রেখে উৎপাদন বাড়াবেন বলেন শেখ হাসিনা।কারও এতোটুকু জমিও যেন অনাবাদি না থাকে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একখণ্ড জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। আপনারা ছাদে টবের মধ্যেও গাছ লাগান। যেটাই উৎপাদন করবেন সেটাই কাজে লাগবে।
জনগণকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় ঘরে বসে বেশি বেশি দোয়া পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এখনতো তেমন কোনো কাজ নেই। তাই এ বিপদ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া পড়ুন।অনুষ্ঠানে ঝালকাঠি জেলা মসজিদের ইমাম বলেন, ‘সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ঝালকাঠির সব ইমাম জুমার নামাজ দশজনে পড়েছি এবং ওয়াক্তিয়ায় পাঁচজনের বেশি উপস্থিতি রাখছি না। শবে বরাতের নামাজ বাসায় আদায় করেছি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মহান আল্লাহর কাজে করোনাভাইরাস থেকে আরোগ্য লাভের জন্য দোয়া করছি। দেশবাসী ও পৃথিবীর সকলের জন্য দোয়া করছি।এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে সবাইকে দোয়াই করতে হবে। যেন এ করোনাভাইরাস থেকে আমরা রক্ষা পাই। আপনি খুব ভালো কাজ করেছেন যে মসজিদে লোকসমাগম কমিয়ে দিয়েছেন। আপনারা জানেন, সৌদি আরবে মক্কা এবং মদিনাতেও কারফিউ দিয়ে দেয়া হয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘরে বসে দোয়া করলে আল্লাহ সে দোয়া কবুল করবেন। কাজেই ঘরে বসে যত বেশি দোয়া পড়া যায়..এখনতো কাজ নেই বেশি। কাজেই বেশি বেশি করে দোয়াই পড়তে হবে। যাতে আল্লাহ আমাদের এ বিপদ থেকে রক্ষা করেন।বাইরে লোক সমাগম করে নববর্ষের কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, বাইরের সব অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হবে। আপনারা ঘরে বসে উৎসব করুন, রেডিও টেলিভিশন ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে করেন বা নিজেদের পরিবার নিয়ে উৎসব করেন। কিন্তু কোনোভাবেই কোনো ধরনের লোকসমাগম করবেন না। পহেলা বৈশাখের সব অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই ঘরে থাকার নির্দেশনা মানতে চাননি। মানুষের সঙ্গে মিশেছেন। ফলে অনেক জেলায় এটা সংক্রমিত হচ্ছে। মূলত লোক সমাগমের কারণেই কিন্তু করোনা সংক্রমিত হচ্ছে। এটা যেন আর না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।