শূন্য হওয়া ৫টি সংসদীয় আসনে মনোনয়ন- তা নিয়ে নানা হিসাব কষছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।
আলোকিত বার্তা:শূন্য হওয়া ৫টি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনে কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন- তা নিয়ে নানা হিসাব কষছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তাদের চিন্তাভাবনায় এসব আসনে আগের মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের পরিবারের এক বা একাধিক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে।এছাড়া গত নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত ত্যাগী কয়েকজন নেতাও রয়েছেন। পাশাপাশি আছে বিভিন্ন খাতে বিশেষ অবদান রাখা কয়েকজন তারকা ব্যক্তির নাম।জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বৃহস্পতিবার বিকালে বলেন, আমাদের নিয়ম হল- নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পর দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করব। সেখানে আগ্রহীরা দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনে আবার জমা দেবেন। পরে আমাদের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে যারা যোগ্য ও জনপ্রিয়, যারা দলের জন্য নিবেদিত, তাদের এসব উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হবে।সম্প্রতি চারজন সংসদ সদস্য মৃত্যুবরণ করায় সংসদীয় আসনগুলো শূন্য হয়েছে। সেগুলো হল- বগুড়া-১, যশোর-৬, গাইবান্ধা-৩ এবং বাগেরহাট-৪। এছাড়া সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ঢাকা-১০ আসন থেকে পদত্যাগ করেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।এই পাঁচ সংসদীয় আসনের মধ্যে ইতিমধ্যে তিনটির (ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪) উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২১ মার্চ এ তিন আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে ঘোষিত তফসিল অনুসারে এই তিন আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১৯ ফেব্রুয়ারি। সেগুলোতে আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আবেদন ফরম সংগ্রহের আহ্বান জানিয়েছে।দলীয় সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আজ শনিবার থেকে ফরম বিক্রি শুরু হবে। চলবে ১৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে দলীয় মনোনয়নের আবেদনপত্র সংগ্রহ এবং জমা দেয়া যাবে।দফতর সূত্র জানায়, দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতালি সফর শেষে দেশে আসার পর সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা ডাকা হবে। সেখানেই এই আসনগুলোর দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবেঢাকা-১০ আসন : ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে আসনটি ছেড়ে দেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে নৌকার টিকিট শেষ পর্যন্ত আবারও বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ পাবেন, নাকি অন্য কাউকে দেয়া হবে- তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।তবে এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন- তাপসের বড় ভাই যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, তাপসের সহধর্মিণী আফরিন তাপস।
এছাড়া এই আসনে আলোচনায় রয়েছেন- বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। বঙ্গবন্ধুর এই দৌহিত্র আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআইয়ে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন।এছাড়া এই আসনে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের বাইরে আরও কয়েকজন পরিচিত মুখের নাম শোন যাচ্ছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ও ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান।গাইবান্ধা-৩ : ২৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ইউনুস আলী সরকার মারা গেলে আসনটি শূন্য হয়। জেলার সাদুল্লাপুর ও পলাশবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনে আওয়ামী লীগের অন্তত ১০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। ইতিমধ্যে এলাকায় ব্যানার-পোস্টার ছাপিয়ে গণসংযোগও শুরু করেছেন তারা। যোগাযোগ শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও।
এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি, সাদুল্লাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহারিয়া খান বিপ্লব, সাবেক এমপি ইউনুস আলী সরকারের বড় ছেলে ড. ফয়সাল ইউনুস, আজিজার রহমান বিএসসি, সাবেক এমপি তোফাজ্জল হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হক, পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর প্রধান, সাধারণ সম্পাদক শামিকুল ইসলাম, সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম মোকছেদ চৌধুরী, আইনজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতা জারিদুল হক।বাগেরহাট-৪ : গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাগেরহাট-৪ আসনের এমপি ডা. মোজাম্মেল হোসেন। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী বেশ কয়েকজন মাঠে নেমেছেন। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যোগাযোগ করে স্থানীয়ভাবেও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
আসনটির উপনির্বাচনে আলোচনায় রয়েছেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আমিরুল আলম মিলন। তিনি আবার মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। এছাড়া সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি অধ্যাপক আবদুর রহিম খানও এই আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী। অন্যদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি এএইচএম বদিউজ্জামান সোহাগও এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চান।যশোর-৬ : ২০ জানুয়ারি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর আসনটি শূন্য হয়। এরপর থেকেই কেশবপুরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ বিভক্ত হয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষে মিছিল সমাবেশ করছে। তবে এই আসনে এক সময়ের কিংবদন্তি নায়িকা শাবানা ও তার স্বামী ওয়াহিদ সাদেক গণসংযোগে আসায় কেশবপুরের রাজনৈতিক মহলে নানা সমীকরণের সৃষ্টি হয়েছে।এছাড়া প্রয়াত সংসদ সদস্য ইসমত আরা সাদেকের মেয়ে নওরীন সাদেকও গণসংযোগ করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদারের পক্ষেও প্রতিদিন সমর্থকরা মিছিল ও পথসভা করছেন।পাশাপাশি সাবেক কেশবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এইচএম আমির হোসেন, কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জীবন বীমা কর্পোরেশনের পরিচালক শেখ রফিক এবং সাংবাদিক শ্যামল সরকারও এই আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
বগুড়া-১ : ১৮ জানুয়ারি আবদুল মান্নান মারা গেলে এই আসনটি শূন্য হয়। সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত ছিলেন আবদুল মান্নান। তার মৃত্যুর পর এই আসনে বগুড়া-১ আসনে কে হচ্ছেন নৌকার প্রার্থী সেই আলোচনা এখন এলাকাজুড়ে।আবদুল মান্নানের স্ত্রী সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহদারা মান্নান আলোচনায় রয়েছেন। তাদের একমাত্র ছেলে মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সজল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। উপনির্বাচনে তাকেও প্রার্থী হিসেবে ভাবছেন অনেকেই।এছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আর যাদের নাম আলোচনায় আছে, তারা হলেন- আবদুল মান্নানের ভায়রা ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রাজ্জাক।