ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হবে। - Alokitobarta
আজ : শুক্রবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হবে।


আলোকিত বার্তা:রাত পোহালেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হবে।ওই দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তাই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সর্তক অবস্থানে রয়েছেন। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এক কথায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নিরাপত্তা চাঁদরে ঢাকা হয়েছে পুরো রাজধানী। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।জানা গেছে, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে রাজধানীতে ৬৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি)সকাল থেকে ঢাকা শহরে টহল শুরু করেছে তারা। ভোটের আগে ও পরে মোট ৪ দিন দায়িত্ব পালন করবে বিজিবি সদস্যরা। এছাড়া বিজিবির ১০ প্লাটুন রিজার্ভ থাকবে। তারা নির্বাচন উপলক্ষে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে।ইসি সূত্র জানায়, প্রতি দুটি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। বিজিবির প্রতিটি টিমের সাথে ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। ঢাকা উত্তরে মোট ৫৪ জন এবং দক্ষিণে ৭৬ জনসহ মোট ১৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে বিজিবি সদস্যরা মাঠে সক্রিয়ভাবে অবস্থান নিয়েছে। নির্বাচনী কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন।এদিকে, র‌্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকেও ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পালনের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছে একাধিক টিম। পোশাকধারীর সাথে রয়েছে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরাও।এছাড়াও পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে নির্বাচনী নিরাপত্তা ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান দিয়েছেন। তাছাড়াও বহিরাগত ও অপরাধীদের গ্রেফতারে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযানও শুরু হয়েছে।জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে গত মঙ্গলবার থেকে বহিরাগতদের ধরতে রাজধানীতে বিশেষ অভিযানে নেমেছে পুলিশ। নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঢাকার প্রবেশপথ, বস্তি, আবাসিক হোটেল ও মেসগুলোতে অভিযান চলবে। ঢাকার ভোটার নন বা রাজধানীতে অবস্থানের যৌক্তিক কারণ নেই, এমন কাউকে পেলে গ্রেফতার করা হবে। এ ধারাবাহিকতায় গত বুধবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৪৫ জনকে আটক করা হয়। তবে নির্বাচনের আগে ভোটারদের মনে যাতে ভীতি সৃষ্টি না হয়, সেটা মাথায় রেখে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে পুলিশ দাবি করেছে।এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুর রহমান সাংবাদিকেদর জানান, সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বহিরাগতদের উপর নজরদারি রাখলেও গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়াতে চাই না।

বুধবার রাতে বিভিন্ন স্থানে বিএনপির প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ধরতে অভিযান চালানো হয় বলে দলটি অভিযোগ করেছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে থেকে আসা মানুষও রয়েছেন শঙ্কায়। দুই প্রধান রাজনৈতিক দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে বহিরাগত আনার অভিযোগ তুলেছে। এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বাহির থেকে যে মানুষ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চালানো এবং নানাবিধ কাজের জন্য এসেছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা এসব লোকজন সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিচ্ছি এবং কোন এলাকা থেকে এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কোনো অভিযোগ আছে কি না, কোনো মামলা আছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে পারলে ওই সমস্ত জায়গায় অভিযান চালানো হবে।কারণ গণঅভিযান চালিয়ে মানুষের মনে ভীতি ছড়াতে চাই না। তবে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।এদিকে নির্বাচনী নিরাপত্তা নিয়ে র‌্যাবের পক্ষ থেকেও সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এ সময় র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়া বহিরাগতদের ঢাকা শহর ত্যাগ করার অনুরোধ জানান।তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের জন্য যারা ঢাকার বাহিরে থেকে এসেছিলেন, তাদের থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ। এবার আপনা চলে যান।তিনি আরো বলেন, আইনশুঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আমরা কোনো অপ্রয়োজনীয় লোকের তৎপরতা চাই না। বৃহস্পতিবার রাতে প্রচারণা শেষ হয়ে গেছে।যদি কেউ থেকেও যান, আশা করব, আপনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকবেন। তবে যারা জেনুইন ভোটার তাদের চলাফেরা ও ভোটদানে সহযোগিতা করবেন। কোনো ঝামেলা করবেন না, কোথাও জড়ো হবেন না। ইটস আওয়ার ইনস্ট্রাকশন।

ভোটের দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রাখার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। যাতে করে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটতে পারে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই, সে লক্ষ্যে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। যাতে প্রতিটি ভোটার নিরাপদ পরিবেশে ভোট প্রদান করতে পারে। তারা যাকে ইচ্ছে তাকে ভীতিমুক্ত পরিবেশে ভোট প্রদান করতে পারেন। গত নির্বাচনের চেয়ে এবার বেশি র‌্যাব সদস্য মাঠে থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে র‌্যাবের নেতৃত্বে একটি করে পেট্রোলিং টিম থাকবে। ঢাকায় পাঁচটি ব্যাটালিয়ন রয়েছে, স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। যাতে যেকোনো আপদকালীন পরিস্থিতি অল্প সময়ের মধ্যে মোকাবিলা করতে পারি। কমান্ড বাহিনী ছাড়াও হেলিকপ্টার, বোম্ব স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড মোতায়েন থাকবে। তাছাড়া ২৪ আওয়ার স্পেশাল মনিটরিংয়ে থাকবে। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী আজকে (গতকাল) থেকে পরবর্তী ৫৬ ঘণ্টা র‌্যাব সদস্যরা মাঠে থাকবেন।ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, যেসব ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে, সেই দিকে র‌্যাবের বাড়তি নজর থাকবে। তবে আমরা আগে থেকেই কিছু করতে চাচ্ছি না। কারণ অপব্যাখ্যা হতে পারে। দেশের ভোটার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভোটদান ও গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ। আমি মনে করি না, কেউ নির্বাচনকেন্দ্রিক অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করবেন। এরপরেও যদি কেউ করার চেষ্টা করেন তাহলে দেশে যে প্রচলিত আইন আছে সেই আইনের আওতায় আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮ কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৫৯৭টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। আর সাধারণ কেন্দ্র রয়েছে ৮৭১টি। নিরাপত্তার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ছয় জন অস্ত্রসহ পুলিশ (একজন এসআই, একজন এএসআই ও চারজন কনস্টেবল), দুই জন অস্ত্রসহ অঙ্গীভূত আনসার এবং ১০ জন লাঠিসহ অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি সদস্য (চারজন নারী ও ছয়জন পুরুষ) মোতায়েন থাকবে। আর সাধারণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রসহ চারজন পুলিশ (এসআই/এএসআই এক জন ও তিন জন কনস্টেবল), দুই জন অস্ত্রসহ অঙ্গীভূত আনসার, ১০ জন লাঠিসহ অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি সদস্য মোতায়েন থাকবে। এই হিসেবে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত থাকবে আনসার ও পুলিশের ৪২ হাজার ৬৮২ জন সদস্য। আর ভোট কেন্দ্র এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জন্য ৭৫ প্লাটুন বিজিবির ২ হাজার ২৫০ জন জোয়ান নিয়োজিত রয়েছে।

এছাড়া, পুলিশ ও এপিবিএন সমন্বয়ে ১২৪টি ভ্রাম্যমাণ ও ৪৩টি স্ট্রাইকিং টিম, র‌্যাবের ১২৯ টিম নিয়োজিত থাকছে। অর্থাৎ র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন স্ট্রাইকিং ও ভ্রাম্যমাণ টিম মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজারের মতো ফোর্স মোতায়েন থাকছে। সব মিলিয়ে এ নির্বাচনে ৫০ হাজারের মতো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন।সি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর জানান, প্রয়োজনে মাঠ প্রশাসন তাৎক্ষণিক যেখানে যেমন দরকার সে অনুযায়ী যেকোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত করার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন নির্বাচন কমিশন।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ঢাকার এ দুই সিটি নির্বাচন গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে দেশবাসী ও বিদেশিরা। এ নির্বাচনে মোট ২২ প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ১৩ দেশি পর্যবেক্ষক কাজ করবেন। তাদের মধ্যে উত্তরে ৫০৩, দক্ষিণে ৪৫৭ এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ৫৩ পর্যবেক্ষক পর্যবেক্ষণ করবেন। আর বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করবেন মোট ৭৪জন। তাদের মধ্যে ৪৬ বিদেশি এবং ২৮ বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন।ইসি সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ এবং নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। উত্তরে মোট ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ৩১৮। মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সংখ্যা ১৮টি। এ ছাড়াও ভোটকক্ষ রয়েছে ৭৫৪টি।ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ এবং নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৫০। সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫টি। এ ছাড়াও ভোটকক্ষের সংখ্যা রয়েছে ৮৭৬টি।

Top