দুই রঙের ব্যালট পেপার রাখার চিন্তা ,সংসদ নির্বাচন ও গণভোট - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুই রঙের ব্যালট পেপার রাখার চিন্তা ,সংসদ নির্বাচন ও গণভোট


মোহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম:গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য পৃথক দুই রঙের ব্যালট ছাপার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোট দেওয়া এবং ভোট গণনার সুবিধার্থে ইসি এমন পরিকল্পনা করছে।তাদের জন্য সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের ব্যালট পেপার একই খামে পাঠানোর চিন্তা করছে। এজন্য গণভোটের ব্যালট পেপার দ্রুত ছাপার প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রবাসীদের জন্য প্রাথমিকভাবে সংসদ নির্বাচনের ১০ লাখ ব্যালট ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তফশিল ঘোষণার পরপরই প্রবাসীদের ব্যালট ডাক বিভাগের মাধ্যমে পাঠাবে ইসি। প্রবাসীরা ভোট দেওয়ার পর যাতে তাদের ফিরতি ব্যালট ভোটগ্রহণের আগেই দেশে এসে পৌঁছে তাই আগেভাগে পাঠাচ্ছে কমিশন। এক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদ-সদস্য প্রার্থীদের জন্য প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সাদা-কালো ব্যালটে ভোট দেবেন ভোটাররা। আর গণভোটের জন্য গোলাপি বা সবুজ রঙের ব্যালট পেপার ছাপা হতে পারে। বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয়ের (বিজি প্রেস) সঙ্গে আলোচনা করে ইসি এই পরিকল্পনা করছে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।আরও জানা গেছে, প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে গণভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে চায় ইসি।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, গণভোট আয়োজনে সম্পৃক্ত ছিলেন, এমন অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তা ইসির নেই। এ কারণে গণভোটের প্রস্তুতি নির্ধারণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। তবে গণভোট আয়োজনের জন্য কী ধরনের প্রস্তুতির প্রয়োজন হবে, সে বিষয়ে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শনিবারও কাজ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গণভোটের আদেশ পর্যালোচনা করেছেন। ওই কর্মকর্তারা জানান, তাদের পর্যালোচনায় বেশ কিছু বিষয় উঠে এসেছে। গণভোট আয়োজনে অধ্যাদেশ ও বিধিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন হবে। ওই অধ্যাদেশের খসড়া আইন মন্ত্রণালয় নাকি নির্বাচন কমিশন তৈরি করবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট নন তারা। এ বিষয়ে আজ রোববার আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।

সূত্রমতে, সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একইদিনে করতে হলে ইসিকে আরও কিছু বাড়তি প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন হবে। এছাড়া নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, দুটি ব্যালটে ভোট দিতে ভোটারদের বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে। এই অবস্থায় ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে নাকি ভোটগ্রহণের সময় বাড়ানো হবে তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভার মতো নির্বাচনগুলোতে একজন ভোটার তিনটি পদে তিনটি ব্যালটে ভোট দেন। এ কারণে ওইসব নির্বাচনে প্রতি ৩০০-৪০০ জন ভোটারের একটি করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এবার সংসদ নির্বাচনে ৫০০-৬০০ জন ভোটারের জন্য একটি ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একইদিনে হতে যাওয়ায় ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ নির্ধারণ নিয়ে নতুন করে ভাবছেন ইসির কর্মকর্তারা। তারা কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছেন। সেগুলো হচ্ছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো প্রতি ৩০০-৪০০ জন ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা, ভোটগ্রহণের সময় বাড়ানো এবং একই ভোটকক্ষে দুটি গোপন বুথ তৈরি করা।

ইসি সূত্র আরও জানিয়েছে, গণভোট আয়োজনের জন্য পৃথক কিছু মালামাল কিনতে হবে ইসিকে। এছাড়া গণভোটের জন্য ভোটারের সমান সংখ্যক অর্থাৎ অন্তত ১২ কোটি ৭৬ লাখ ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, ব্যাগ ও বস্তা সংগ্রহ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, ফেব্রুয়ারি শীত মৌসুম থাকবে। তখন ভোটগ্রহণের সময় বাড়ানো হলে ভোট গণনা এবং ফলাফল উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে যেতে অনেক রাত হয়ে যাবে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আবার একই ভোটকক্ষে দুটি গোপন কক্ষ স্থাপন করা-এ দেশে প্রচলিত নয়। নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে গেলে সমস্যা তৈরি হতে পারে। আবার ভোটকক্ষের সংখ্যা বাড়ালে ওই অনুপাতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যাও বেড়ে যাবে। নতুন করে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ নির্ধারণের কাজ করতে হবে। বাড়তি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার জন্য খরচও বেড়ে যাবে। এছাড়া সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে ইসি ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ নির্ধারণ করে ফেলেছে।

নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) কর্মকর্তারা জানান, তারা সংসদ নির্বাচনের দুই হাজার ৩০০ জন প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বাকিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। গণভোট আয়োজনের বিষয়ে ইটিআইকে আবারও প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, গণভোটের বিষয়ে আমরা সরকারের আনুষ্ঠানিক চিঠি এখনো পাইনি। এজন্য নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তও নেয়নি। তবে ভোট গণনার বিষয়টি বিবেচনায় রাখছি। এজন্য দুই রংয়ের ব্যালট পেপার ছাপার বিষয়ে আলোচনা চলছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ঘোষণা করবে ইসি। আর ভোটগ্রহণ হবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের দিনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।

Top