রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রথম দিনের সংলাপে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রথম দিনের সংলাপে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়


মু.এবি সিদ্দীক ভুঁইয়া:দেশের বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল।সংলাপের আগে নির্বাচনের প্রধান আইন আরপিও এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা সংশোধন করায় ইসির সমালোচনা করেন কয়েকটি দলের নেতারা। তারা আরপিও এবং আচরণবিধিমালায় আরও সংশোধনের প্রস্তাব করেন। এছাড়া নির্বাচনে কালোটাকার প্রভাব বন্ধ, নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, সঠিকভাবে ভোটগণনা, মাঠ প্রশাসনে পক্ষপাতিত্বসহ বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেন তারা। এদিন সংলাপে ১২টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশ নেন। এ পরিস্থিতির উন্নতির দাবি জানিয়েছে দলগুলো। বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রথম দিনের সংলাপে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতির কাছে আমরা সুষ্ঠু সুন্দর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে এ উপহার দিতে হবে। মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা নিতে হবে। কারণ, মূল প্লেয়ারদের সহযোগিতা না পেলে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হয়ে যাবে। আমাদের সঙ্গে আপনাদের পেতে চাই। তিনি আরও বলেন, আমরা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি চাই না। সবার সহায়তা প্রত্যাশা করছি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের প্রথম দিনে দুই পর্বে ১২টি দল অংশ নেয়। সকালের পর্বে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবং বিকালের পর্বে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম নেতারা অংশ নেন। সিইসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে তিন নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আগামী রোববার আরও ১২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

সংলাপে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, এখনো যথেষ্ট নিরাপত্তা সংকট বিরাজ করছে। দুই-তিন দিনের ঘটনা অবশ্যই বিবেচনায় নেব। আমার মনে হয়, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে যে উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল সেটা শুরু হয়নি। তফশিল ঘোষণার আগে অবশ্যই সিকিউরিটি অপারেশন করা উচিত, যাতে জনগণের আস্থা ফিরে আসে। নির্বিঘ্নে ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। জোটে ভোট করলে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধানে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, বড় দলগুলো নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে এবং মহড়া চলছে। ইসি এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচনি প্রচারে পোস্টার বাতিল ভুল সিদ্ধান্ত। নির্বাচন কমিশন নিজেই নির্দিষ্ট সংখ্যক পোস্টার একই সাইজ, ডিজাইন ও কালারে ছাপিয়ে দিতে পারে। এতে ব্যয় সাশ্রয় হবে এবং প্রতীকের পরিচিতিও সহজ হবে। এছাড়া, রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের থেকে করা উচিত। বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান থেকে পোলিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসার নেওয়া ঠিক হবে না। ৩০০ আসনেই না ভোট রাখার বিধান দরকার। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব প্রতীকেই নির্বাচন হওয়া উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিকল্প প্রতীক বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী জানান, নির্বাচনে কালোটাকার প্রভাব বিস্তার রোধে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা রাখতে হবে। এছাড়া, দেশের শত্রুরা যাতে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেজন্য সুদৃষ্টি রাখতে হবে। দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, দলের সবস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী রাখার বাধ্যবাধকতা ইসলামী দলগুলোর জন্য কঠিন হয়ে যায়।

ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, জামানতের টাকার পরিমাণ কমাতে হবে। নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। ইসি নিবন্ধন না দিলেও আদালত থেকে নিবন্ধন নিয়ে আসছে। তাহলে ইসি কাগজপত্র ঠিকমতো দেখছে না? এ বিষয়টি কমিশনের ভালোভাবে দেখতে হবে।

সিপিবির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে বৈষম্যবিরোধী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। অথচ এখন বৈষম্য আরও গভীর হয়েছে, যার টাকা আছে, সে-ই নির্বাচন করতে পারছে। একজন সাধারণ মানুষ, একজন সম্মানিত স্কুলশিক্ষক, যার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা আছে, তিনি প্রার্থী হতে পারছেন না। অর্থাৎ আমরা পরোক্ষভাবে ধনী, লুটপাটকারী ও অর্থ আত্মসাৎকারীদের জন্যই সুযোগ তৈরি করছি।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (ভাষা) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, আরপিওতে ‘না ভোট’-এর বিধান শুধু একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে রাখা হয়েছে। তিন বা পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে একজনকে ভোটারের পছন্দ না হয়, তাহলে কি সে মন্দের ভালো বেছে নেবে? তাই ‘না ভোট’-এর বিধান সব আসনেই রাখার দাবি আমরা করছি।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, নির্বাচনি পরিবেশের যেন উন্নতি হয় সে ব্যবস্থা নিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আর মহিলা প্রতিনিধি কমিয়ে দিলে ভালো হয়, পুরুষ বাড়িয়ে দিলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, কোনো কমিশনই বলে না তারা নিরপেক্ষতা হারাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসে তারা আর নিরপেক্ষ থাকে না। এটা আমাদের অতীত ইতিহাস। তবে এ কমিশনের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক।

জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, না ভোট সব আসনে থাকা দরকার। জনগণ যেন তাদের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে প্রত্যাহার করতে পারে।

কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ কাফি রতন বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি প্রার্থী ছিলাম। সকাল ৭টার সময় গিয়ে দেখি আগের দিন রাতে ভোট হয়ে গেছে। এ ধরনের নির্বাচন যাতে আর বাংলাদেশে না হয়।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আচরণবিধি প্রতিপালনে সবার সহযোগিতা দরকার। সবাই মানলে নির্বাচনি পরিবেশ ভালো হতে বাধ্য। তিনি বলেন, এবার কিন্তু একটি সুযোগ। এবারের নির্বাচন ভালো করা ছাড়া উপায় নেই। আমরা নদীর মাঝখানে। নৌকাটি নড়াচড়া করলেই ডুবে যাবে। দেশটা তো চালাবেন আপনারা, রাজনীতিবিদরা। সঠিকভাবে নির্বাচন না হলে কী অবস্থা দাঁড়াতে পারে ভেবে দেখেন। যার যার অবস্থান থেকে সহায়তা করুন।

Top