দেশের রাজনীতিতে এখন একধরনের অস্থিরতা চলছে - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশের রাজনীতিতে এখন একধরনের অস্থিরতা চলছে


মু.এবি সিদ্দীক ভুঁইয়া:জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতার কারণে দেশের রাজনীতিতে এখন একধরনের অস্থিরতা চলছে।এছাড়া সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর এবং ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদ সংসদে পাশ না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেগুলো সংবিধানের অংশ হয়ে যাওয়ার বিষয় নিয়েও একমত হতে পারছে না দলগুলো।নবগঠিত রাজনৈতিক দল বলছে,জুলাই সনদের সুপারিশে নোট অব ডিসেন্ট থাকতে পারবে না।এমন পরিস্থিতিতে সরকারের ভেতর ও বাইরে সমঝোতার চেষ্টা চলছে।বিশেষ করে জনগণের মতামতের জন্য গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে নাকি একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে-এ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে মতবিরোধ চলছে।এ ব্যাপারে ঐকমত্য না হলে দেশে কী ঘটতে পারে,তা নিয়ে জনমনে নানা আলোচনা রয়েছে।এ অবস্থায় যুগান্তরের পক্ষ থেকে তিনজন বিশ্লেষকের মতামত নেওয়া হয়েছে।

সমঝোতা না হলে বিপর্যয় নেমে আসবে: ড. মাহবুব উল্লাহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি দেশের বর্তমান বাস্তবতা উপলব্ধি করতে না পেরে, তারা যদি এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকে এবং এক দল আরেক দলের বিরুদ্ধে বলতে থাকে; তাহলে দেশে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। আর কোনোভাবেই যদি তারা সমঝোতায় আসতে না পারে, তাহলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। সমঝোতা না হলে দেশের পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সোমবার যুগান্তরকে বলেন, দলগুলো সমঝোতা করতে ব্যর্থ হলে জনজীবনে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকবে। পাশাপাশি শঙ্কাও বাড়তে থাকবে। আর এর পুরোপুরি সুযোগ নেবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। ভারতে বসে, ভারতের মাটিকে ব্যবহার করে তারা তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি অশান্ত করে তুলবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, এখনই এই প্রশ্ন তোলা ঠিক হবে না। কারণ, সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তারা একবারের জন্যও বলেনি যে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব না। তাই আমরা সরকারের কথায় আস্থা রাখতে চাই। সরকার কী করে, তা দেখতে চাই। যদি শেষ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হয়, তখন এ নিয়ে কথা বলা যাবে। এর আগে এ বিষয়ে কথা বলা ঠিক হবে না।

পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা হবে: ড. শাহদীন মালিক
বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক সোমবার বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভিন্নমত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তাদের মতামত যাতে প্রাধান্য পায়, সেটার জন্যও তারা চেষ্টা করবে, এটাও স্বাভাবিক। তবে আমার মনে হয়, দেশ ও দেশের মানুষ এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। আর সংসদ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এটাই একমাত্র সমাধান। আমার মনে হয়, ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলো বাস্তবতা উপলব্ধি করবে। তবে এক্ষেত্রে একটু ওলটপালট কিংবা হোঁচট খাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। পরিস্থিতি কিছুটা অশান্ত করার চেষ্টা হবে। আওয়ামী লীগও তার অবস্থান থেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে। সেক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। আশা করি, সরকারও এই অবস্থানেই থাকবে। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করাটাই হবে তাদের মূল কাজ।

বিবাদে না জড়িয়ে নির্বাচনকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত: অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক,অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড.আনু মুহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো বাইরে নানা কথাবার্তা বলে একে অপরের ওপর একধরনের চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে। আবার তারা যে যার মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে। এ অবস্থায় আমি মনে করি, তাদের যদি জ্ঞানবুদ্ধি থাকে, কাণ্ডজ্ঞান থাকে; তাহলে অযথা বিবাদে না জড়িয়ে নির্বাচনকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত। কারণ, নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। আজ হোক বা কাল হোক-নির্বাচন হতেই হবে। এমননিতেই যত দিন যাচ্ছে, দেশের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নির্বাচনই একমাত্র পথ। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে। তাদের এক্ষেত্রে আরও সংযমী ও দায়িত্বশীল আচরণ দেশের মানুষ প্রত্যাশা করছে। মানুষ এখন আর বিরোধ, বিভেদ-এসব দেখতে চায় না। তারা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাটা দেখতে চায়।

Top