নির্বাচন ঘিরে নাশকতার শঙ্কা,ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ ইসির - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন ঘিরে নাশকতার শঙ্কা,ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ ইসির


মোহাম্মাদ আবুবকর সিদ্দীক ভুঁইয়া:আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশে বিভিন্ন ধরনের নাশকতার(স্যাবোটাজ)আশঙ্কা রয়েছে।তাদের ভয়, প্রবাসীদের পোস্টাল ভোটিং নিয়েও নাশকতা হতে পারে।নির্বাচনকালীন সময়ে অবৈধ অস্ত্রের জোগান আসতে পারে।সোশ্যাল মিডিয়া ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা(এআই)ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো হতে পারে।এতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে পুরো নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা।নির্বাচনপূর্ব সময়ে কিছু অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে।এই শঙ্কা প্রকাশ করেছে খোদ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সশস্ত্র বাহিনী,আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও প্রায় একই ধরনের কথা জানিয়েছে।নির্বাচন উপলক্ষ্যে সম্প্রতি ইসিতে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসংক্রান্ত বৈঠকের কার্যবিবরণীতে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ওই বৈঠকে নাশকতা ও ঝুঁকি বিবেচনায় সমন্বিত নিরপত্তা পরিকল্পনা প্রস্তুতসহ ২২টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রোববার ওই কার্যবিবরণী সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, পুলিশের আইজিসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে সংসদ নির্বাচনের ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৮ হাজার ৬৬৩টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, নাশকতার শঙ্কা আছে। তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পারে। তফশিল ঘোষণার আগে চলতি মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আরেকটি বৈঠক হবে। সেখানে করণীয় নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে। ভোটের আগে আরও বৈঠক হবে। তখন পরিস্থিতির আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।বৈঠকে ঝুঁকি বিবেচনায় নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, রেড, ইয়োলো ও গ্রিন জোনে বিভক্ত করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা যেতে পারে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।

ডিসেম্বরের প্রথমদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা এবং ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখের মধ্যে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। ওই নির্বাচন সামনে রেখেই প্রস্তুতি শেষ করতে যাচ্ছে কমিশন।সে হিসাবে তফশিল ঘোষণার বাকি অল্পকিছু দিন। এ সময়ে দেশের বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন।

তফশিল ঘোষণার আগ মুহূর্তে দাবি আদায়ে নন-এমপিও শিক্ষক এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন, তাদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ নির্বাচনে কেমন প্রভাব পড়বে-তা নিয়েও চিন্তিত ইসি। কমিশন মনে করছে, আসন্ন নির্বাচনে এসব শিক্ষকরা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটের আগ মুহূর্তে তাদের এ আন্দোলন ভোটের উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরিতে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। জুলাই সনদ ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য এবং সারা দেশে রাজনৈতিক হামলার ঘটনা এছাড়া নিবন্ধন না পেয়ে নির্বাচন কমিশনের গেটের সামনে আমজনতার দলের সদস্য সচিব তারেক রহমানের লাগাতার অবস্থানও কমিশনকে বিব্রত করছে। বিষয়টির সমাধানে দলটিকে নিবন্ধন দেওয়ার সুযোগ নেই বলে গতকাল আবারও জানিয়ে দিয়েছে ইসি।

ইসি সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচন নিয়ে কয়েক দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই অংশ হিসাবে ২০ অক্টোবর ইসিতে প্রথম বৈঠক হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এমএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। গতকাল ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী সংশ্লিষ্ট সবার কাছে পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসে আরেকবার এ ধরনের বৈঠক হওয়ার কথা আছে।

সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে বেশ কয়েকজন বক্তা নির্বাচন ঘিরে নাশকতার কথা বলেন। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনপূর্ব সময়ে কিছু অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, পরাজিত প্রার্থী কর্তৃক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা, নির্বাচনে অনিয়মের চেষ্টা করা এবং ভোটের ইন্টিগ্রিটি নিয়ে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা হতে পারে। তিনি জানান, নির্বাচন কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের স্যাবোটাজের ঘটনা ঘটতে পারে। মানুষের ভয়েস ক্লোন করে চরিত্র হনন করা হতে পারে। এমনকি প্রবাসী ভোটারদের পোস্টাল ভোটিং কার্যক্রমও বানচালের চেষ্টা হতে পারে। যে কোনো ঝুঁকি মোকাবিলায় বাহিনীগুলোকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন এ নির্বাচন কমিশনার। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বস্তরে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেন।

বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধিও বিভিন্ন বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ওপর হামলা, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, ভোট প্রদানে বাধা দেওয়া এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা তৈরিসহ তাদের বসতবাড়িতে হামলা বা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতে পারে। নির্বাচনে ভুল তথ্য ও গুজব রোধে অ্যাপ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। নির্বাচনে সেনাবাহিনীর কী ধরনের ভূমিকা থাকবে তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিলে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে। প্রয়োজন অনুযায়ী ভোটগ্রহণ ও নির্বাচনি মালামাল রক্ষায় সেনাবাহিনীকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতির প্রয়োজন হতে পারে। আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক বৈঠকে বলেন, আগের সঙ্গে এবারের নির্বাচনকে তুলনা করলে ভুল হবে। কারণ এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন ও ঝুঁকিগুলো ব্যতিক্রম। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আছে এমন আনসার সদস্যদের এ নির্বাচনে মোতায়েন করা হবে না। নির্বাচনে গুজব বড় সমস্যা বলে মন্তব্য করেন ডিজিএফআইর মহাপরিচালক। আর সিআইডি প্রধান বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ও এআই ব্যবহার করে নির্বাচনে গুজব ছড়ানো হতে পারে। ইতোমধ্যে এ ধরনের অনেক কনটেন্ট শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এজন্য র‌্যাবের সাইবার ইউনিট কাজ করছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান তুলে এসবি প্রধানের প্রতিনিধি বৈঠকে জানান, নির্বাচনের সময়ে অবৈধ অস্ত্রের জোগান আসতে পারে। অবৈধ অর্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বৈঠকে ২২ সিদ্ধান্ত : ওই বৈঠকে ২২টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, নাশকতা প্রতিরোধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। জুলাই সনদ অনুযায়ী গণভোট করতে গেলে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। বিষয়টি সমন্বয় করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। নির্বাচনপূর্ব কিছু অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, সেজন্য বাহিনীগুলোকে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচন কার্যালয় ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

Top