কারও দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ নয় - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কারও দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ নয়


মোহাম্মাদ নাসির উদ্দিন:কারও দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ নয়-এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।অবশ্যই কারও দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই সরকারের কাজ নয়।এ কারণেই বিএনপি বর্তমান সরকারের প্রতি কোনোরকম চাপ প্রয়োগ করার পরিবর্তে বরং ভিন্নমতের জায়গাগুলোয় নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। এটাকেই বিএনপি ‘ডিসেন্ট ওয়ে’ বলে মনে করে। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের ভোটের মাধ্যমে এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা এই অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান কর্তব্য।

শনিবার রাজধানীর ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোট আয়োজিত হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের বিষয়ে সতর্ক করে তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা কারও কারও ভূমিকা এখন দেশ গড়ার নতুন সুযোগকে বিনষ্ট করার পাঁয়তারা হিসাবে দেখা যাচ্ছে। দেশ অস্থিতিশীল হলে পরাজিত ফ্যাসিস্ট অপশক্তির পুনর্বাসনের পথ তৈরি হবে। ফ্যাসিবাদী রোষানল থেকে রক্ষা পেতে কেউ কেউ যে উপায়ে গুপ্ত উপায় অবলম্বন করেছিল, বর্তমানে কথিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি একই কৌশল নিয়ে দেশের গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছে কি না, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ৫ আগস্টে পালিয়ে যাওয়া অপশক্তি কোনো দলের আড়ালে গুপ্ত থেকে যেন কোনো অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে না পারে। গুপ্ত অপশক্তির সেই কৌশল থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হচ্ছে একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় এবং বহাল রাখা। এ কারণেই বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের রাজপথের সঙ্গীদের সঙ্গে সহযোগিতা ও সমঝোতার দৃষ্টিভঙ্গি সমুন্নত রেখেছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের ধর্মীয় পরিচয়কে কেউ যেন নিজেদের দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকবেন। নিজেদের অবশ্যই সংখ্যালঘু ভাববেন না। একজন বাংলাদেশি হিসাবে এই স্বাধীন বাংলাদেশে আপনার, আমার এবং আমাদের সবার অধিকার সমান। ব্যক্তি কিংবা দলীয় স্বার্থ নয়। বিএনপির কাছে অবশ্যই দেশ ও জনগণের স্বার্থই সবচেয়ে অগ্রাধিকার। এজন্যই আমরা বলি-সবার আগে বাংলাদেশ।

তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদের সময়কালে দেশের সবচেয়ে জনসমর্থিত দল হওয়া সত্ত্বেও সারা দেশে বিএনপির ৫০ লাখ বা এরও কিছু বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কমপক্ষে দেড় লাখ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সাতশর বেশি নেতাকর্মীকে গুম, অপরহণ ও খুন করা হয়েছিল। অকারণে রাতে আদালত বসিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সেদিন রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। মূল কারণ ছিল-দেশে আইনের শাসন ছিল না সেদিন।

তিনি বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের শাসনামলে মুসলমান কিংবা হিন্দু, বৌদ্ধ কিংবা খ্রিষ্টান, ডান-বাম, ভিন্ন দল-মতের কেউই সেদিন নিরাপদ ছিলেন না। ২০১২ সালে রামু বৌদ্ধবিহারে হামলা কিংবা ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে যে হামলা হয়েছিল, সে হামলাসহ দেশের কোথাও কোনো একটি হামলারও সেদিন বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হয়নি বা বিচার হয়নি। গত দেড় দশকে বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাসাবাড়ি কিংবা ধর্মীয় উপাসনালয়ে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, প্রতিটি হামলার নেপথ্য ঘটনা উদ্ঘাটন করে সুষ্ঠু বিচারের দাবি আমরা জানিয়েছিলাম। কিন্তু সে দাবিগুলোর একটিও সেভাবে বিচার কমিশন গঠন হয়নি কিংবা বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করা হয়নি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি মনে করে, দেশের ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন ছাড়া সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু কানো নাগরিকেরই নিরাপত্তার গ্যারান্টি হতে পারে না। দলমত-ধর্মবর্ণ, রাজনৈতিক পরিচয় শেষে একমাত্র আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারই দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে বর্তমানে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান প্রতিটি ধর্মের, প্রতিটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এবং গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি বিশাল সুযোগ অপেক্ষমাণ।

নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে স্বল্প-আয়ের মানুষদের সহায়তার জন্য ৫০ লাখ ‘ফ্যামিলি কার্ড’ বিতরণ এবং তরুণদের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা হবে বলে ঘোষণা করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য তাদের বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং একই সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভাষা শিক্ষা দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে দেশে-বিদেশে কাজের ব্যবস্থার পরিকল্পনা আমরা এর মধ্যে হাতে নিয়েছি।’ বাংলাদেশে ধর্মীয় বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘বৈচিত্র্যের মধ্যেই ঐক্যের বন্ধনই আমাদের রাষ্ট্র এবং সমাজের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সৌন্দর্য।’ এই বৈচিত্র্যময় সমাজে ঐক্যসূত্রকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকারের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসাবে এই বাংলাদেশে আপনার যতটুকু অধিকার, আমারও ঠিক ততটুকুই। কারও বেশি, কারও কম তা নয়।’ এ সময় তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের উত্থাপিত বিভিন্ন দাবি পূরণের আশ্বাস দেন।

হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ক্ষমতায় নিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি স্লোগানে স্লোগানে বলেন, ‘হিন্দু মুসলমান ভাই-ভাই ধানের শীষে ভোট চাই, হিন্দু মুসলমান-বৌদ্ধ ভাই-ভাই ধানের শীষে ভোট চাই।’ মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের আহ্বায়ক সোমনাথ সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ, মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের সদস্যসচিব ও মুখপাত্র কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল, সংগঠনের যুগ্ম-আহ্বায়ক সমেন সাহা, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, হিন্দু ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা সুবর্ণা রানী ঠাকুর প্রমুখ।

ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার শহীদ পরিবারের : চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে নিহত শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যরা বিএনপির সঙ্গে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। শনিবার সন্ধ্যায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সাক্ষাৎ করে এ অঙ্গীকারের কথা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শহীদ ওয়াসিমের বাবা শফি আলম, শহীদ মাহমুদুর রহমানের বোন (জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠকারী) সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী, বাবা মাহবুবুর রহমান, শহীদ ফয়সাল আহম্মেদ শান্তর বাবা মো. জাকির হোসেন এবং আন্দোলনে আহত মো. ফারহান জামিল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক ও বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন, শহীদ মীর মুগ্ধের ছোট ভাই সদ্য বিএনপিতে যোগদানকারী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।

Top