১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে নির্বাচন করার সুযোগ নেই - Alokitobarta
আজ : মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে নির্বাচন করার সুযোগ নেই


মোহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম:জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা পাইনি। এজন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় আমাদেরও কিছু ভুল হয়েছিল। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন,নভেম্বর থেকে জুলাই : বিপ্লব থেকে বিপ্লবে’ শীর্ষক গোলটেবিলের বৈঠকের আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।এদিকে আগামী নির্বাচনে কালোটাকার দৌরাত্ম্য থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, তাই নির্বাচনে নামার আগে তার মতো অন্যদেরও ভাবতে হচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় ১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এই বাস্তবতায় আসলে যাদের কালোটাকা আছে, তাদেরই সুযোগ আছে আরকি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার।… সেজন্য আমাদেরও বারবার চিন্তা করতে হয়, ইলেকশন কী করব, না করব না। করলে কীভাবে করব। মানুষ টাকা ছাড়া ভোট দেবে কি না।’ আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টাও বোধহয় হয়নি আমাদের রাজনৈতিক নেতারা এস্টাবলিশমেন্টের কোলে গিয়ে উঠে গেছেন। তো তরুণ হিসাবে আমাদেরও ভুল আছে, আমরা ২৫-২৬ বছরের কয়েকজন তরুণ ছিলাম পলিসি মেকিংয়ের দায়িত্বে। কিন্তু যখন আমাদের অগ্রজরা এস্টাবলিশমেন্টকে গিয়ে দায়িত্ব দিয়ে আসেন, যে আপনারা একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন তখন আমাদের হাতে আসলে খুব বেশি কিছু থাকে না। তিনি দাবি করেন-তারা তখন ‘এস্টাবলিশমেন্টের কাছে’ রাজনৈতিক নেতাদের না যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তাদের আহ্বান শোনা হয়নি। পরবর্তী পরিস্থিতিতে সেদিন দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় ছাত্রনেতারা দ্রুত সরকার গঠনের বিষয়ে একমত হন। তিনি বলেন, ৫ থেকে ৮ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা রাজনৈতিক নেতাদের পাশ কাটিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তাদের সমর্থন ছাড়া একেবারে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটার পরিণতি কেমন হবে, সেটা বোঝাও তরুণ ছাত্রনেতাদের জন্য কঠিন ছিল।

আসিফ মাহমুদ বলেন, ৫ থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে তিনি প্রস্তাব করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘মিডল গ্রাউন্ড রেখে’ সেখানে একটা আলোচনা আয়োজনের। সেটি হয়নি। ‘আমাদের বলা হলো-আপনারা ক্যান্টনমেন্টে আসেন। তো আমরা বললাম যে, ক্যান্টনমেন্টে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর আলোচনার ভেন্যু হিসাবে একটা মিডল পয়েন্টে আমাদেরও আসতে হলো। আসিফ মাহমুদ বলেন, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ক্ষেত্রে ঘুরেফিরে আমরা আবার একই জায়গায় চলে যাই কি না। আমরা গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কথা বলি-সংসদে ৩০০ জন যাবেন। প্রশ্ন কয়জনের কাছে ২০ কোটি টাকা আছে। ২০ কোটি টাকা না থাকলে তো কেউ নির্বাচন করতে পারবে না।

বাংলাদেশের বর্তমান যে বাস্তবতা সেখানে ১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে আসলে নির্বাচন করার সুযোগ নেই। যাদের কাছে কালোটাকা আছে তাদের নির্বাচন করার সুযোগ আছে। তিনি আরও বলেন, আবার কারও থেকে টাকা নিয়ে নির্বাচন করলে তো নির্বাচিত হয়ে আসার পর তার স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। এজন্য আমাদের বারবার চিন্তা করতে হয় নির্বাচন করব কী করব না। আর নির্বাচনই বা কীভাবে করব… মানুষ টাকা ছাড়া ভোট দেবে কি না। বিদ্যমান যে কাঠামো, এ কাঠামোতে আমাদের জন্য ইলেকশন করা কতটুকু বাস্তবসম্মত।

আসিফ মাহমুদ বলেন, আগামী ১৩ নভেম্বর একটা রায়ও হওয়ার কথা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফ্যাসিবাদী শক্তি ঢাকায় আবার লকডাউন ডেকেছে। অন্যদিকে যদি সংস্কারের কথা বলি-আমরা দেখেছি যারা সংস্কারের কথা বেশি বলত, কিন্তু কেন জানি তারা সংস্কারবিরোধী রাজনীতিতে ঢুকে গেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আসলে জানি না, তাদের এই সংস্কারবিরোধী রাজনীতির আউটকামটা আসলে তাদের জন্য কী। আমাদের দেশের জন্য তো অবশ্যই ক্ষতিকর। কিন্তু তাদের জন্য এটা কীভাবে সুফল বয়ে আনছে সেটা আমি জানি না।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, খুব জনপ্রিয় শব্দ হলো-নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। দুঃখজনক বিষয় হলো আমরা আসলে জানি না-এ নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আসলে কী। কিছু পপুলার কার্যক্রম করলে তো আর রাজনৈতিক নতুন বন্দোবস্ত হয়ে যায় না। এটার রূপরেখা কী? যারা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের রাজনীতি করছেন বা নির্মাণ করার চেষ্টা করছেন, তারা এটা আসলে দিতে পেরেছেন কি না। আমিও রাজনীতি করব, আমাকেও খুঁজতে হবে আসলে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কী?

বৈঠকে কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট একটি সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব হয়েছে। সে সময়ে নেতৃত্বে থাকা তরুণরা কতগুলো ভুল করেছে। সেই ভুল তরুণরা এখনো চাইলে সংশোধন করতে পারে। তবে তার জন্য বেশি সময় নেই।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, পুসাবের স্থায়ী কমিটির সদস্য ফাহমিদুর রহমান, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট মোহাম্মদ সজল বক্তব্য দেন।

Top