আলোচনায় সমাধান চায় জামায়াত
মোহাম্মাদ মহাব্বাতুল্লাহ মাহাদ : জুলাই সনদ ও গণভোট ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ নিরসনে সরকার দলগুলোকে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিলেও কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত দলগুলো এক টেবিলে বসতে পারেনি। আলোচনা করার জন্য জামায়াতের পক্ষ থেকে রেফারি হিসাবে প্রধান উপদেষ্টাকে দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। এ অবস্থায় সংকট নিরসনে জামায়াত এখনো আশাবাদী। একই সঙ্গে দলটি এ-ও মনে করে, বিএনপি সরকারের প্রস্তাবে সাড়া দেবে।জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, মাঠের কর্মসূচিতে তারা সক্রিয় হলেও সংকট সমাধানে আলাপ-আলোচনাকেই তারা গুরুত্ব দিচ্ছে। এজন্য দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদের সমন্বয়ে একটি কমিটিও করা হয়েছে। সূত্র বলছে, জামায়াতের মাঠের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার মূল লক্ষ্য হলো গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধরে রেখে জনস্বার্থের দাবি আদায় করা। এটি তাদের রাজনৈতিক কৌশলমাত্র। তবে আসন্ন নির্বাচন ও নির্বাচন-পরবর্তী সার্বিক কৌশল কী হবে তা জনগণের সামনে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে পারে। এমনকি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিনও নাটকীয় মেরুকরণ হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।এ প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জুলাই সনদ তো বাস্তবায়ন করতেই হবে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ স্পষ্ট। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে ৫ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। বিএনপিও কর্মসূচি দিয়েছে। এই অবস্থা চলবে না। সমাধান তো আসবেই, সমঝোতায় আসতেই হবে। আমরা আশাবাদী যে, আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের যে প্রস্তাব জামায়াত দিয়েছে তাতে বিএনপি সাড়া দেবে। তবে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা না হলে সেক্ষেত্রে সরকারকেই সিদ্ধান্ত দিতে হবে। তিনি ইঙ্গিত দেন যে, ড. ইউনূসকেই শেষ পর্যন্ত সমাধানের পথ বের করতে হবে।
জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাড. এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, আমরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থাকলেও ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে একসঙ্গেই লড়াই করেছি। আমাদের মতের ভিন্নতা তো থাকবেই। মতের ভিন্নতা আছে বলেই আলাদা আলাদা দল। তবে জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে একটা সমঝোতা হতেই হবে। আশা করি, সরকারই সংকটের সমাধান দেবে।সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি সভায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পরে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, সরকার আর আলোচনার উদ্যোগ নেবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ উপায় বের করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দলগুলো যদি এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।
অপরদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সংবাদ সম্মেলনের পরপরই জামায়াতসহ সমমনা আটটি ইসলামি দলের শীর্ষ নেতাদের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ৫ দফা দাবিতে বেশ কিছু কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু একটা বিষয় যোগ করতে চাই, উপদেষ্টা পরিষদ যদি এটা মনে করে যে, তাদের আর কোনো দায়িত্ব নেই, তারা কিছুই করবে না, দলগুলোই মিলে করবে, তাহলে এখানে একটা রেফারির অভাব হতে পারে। সেজন্য আমি বলছি, আমরাও চেষ্টা করব, উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে বিশেষ করে চিফ অ্যাডভাইজার (প্রধান উপদেষ্টা) এখানে একটা রেফারির ভূমিকা পালন করবেন আগের মতো, এটা আমি আশা করি।